ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৭ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম

আসাদ আল মাহমুদ : বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অমিত শক্তির উৎস ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ।

বাঙালির বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতার এই ভাষণের দিকনির্দেশনাই ছিল সে সময় বজ্রকঠিন জাতীয় ঐক্যের মূলমন্ত্র।বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ আমাদের ইতিহাস এবং জাতীয় জীবনের এক অপরিহার্য ও অনস্বীকার্য অধ্যায়,যার আবেদন চিরঅম্লান। কালজয়ী এই ভাষণ বিশ্বের শোষিত বঞ্চিত ও মুক্তিকামী মানুষের সবসময় প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১ মার্চ থেকে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন।১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক এদিনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার ডাক দেন। ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বিশাল জনসমুদ্রে তিনি বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা’।

পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ অঞ্চলের জনগণের ওপর নেমে আসে বৈষম্য আর নির্যাতনের যাতাকল। অর্থনৈতিক বৈষম্য ছাড়াও সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী। শুরু হয় বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার আদায়ের সংগ্রাম।

১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয়দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ের পথ ধরে বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম যৌক্তিক পরিণতির দিকে ধাবিত হয়। আর এসব আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু।

৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষনে তৎকালীন রেসকোর্সের জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার রূপরেখা ঘোষণা করেন। যুদ্ধ অনিবার্য জেনে তিনি শত্রুর মোকাবিলায় বাঙালি জাতিকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন ‘তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো’। জাতির পিতার এই সম্মোহনী আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা গণহত্যা শুরু করে। জাতির পিতা ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হন। ২ লাখ মা-বোন সম্ভ্রমহারা হন। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ আর বহু ত্যাগের বিনিময়ে আমরা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে ছিনিয়ে আনি মহান স্বাধীনতা, বাঙালি জাতি পায় মুক্তির কাক্সিক্ষত সাধ। প্রতিষ্ঠা পায় স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক ভাষণ। লেখক ও ইতিহাসবিদ জ্যাকব এফ ফিল্ড এর বিশ্বসেরা ভাষণ নিয়ে লেখা ‘উই স্যাল ফাইট অনদ্যা বিচেস : দ্যা স্পিস দ্যাট ইনস্প্রিড দ্যাট ইনস্প্রিড হিস্টোরি’ গ্রন্থে এ ভাষণ স্থান পেয়েছে। এই ভাষণ অসংখ্য ভাষায় অনুদিত হয়েছে।

৭ মার্চের ভাষণ ২০১৭ সালে ওর্য়াল্ড ডকুমেন্টারি হ্যারিটেজ হিসেবে ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতির জন্য এক পরম পাওয়া।

স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করা ছিল বঙ্গবন্ধ স্বপ্ন। তার সে স্বপ্ন পূরণে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্র শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে গত ১০ বছর দেশের সবখাতে কাঙ্খিত অগ্রগতি অর্জন করেছে। এ কারণে আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল। আশাকরি ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী





রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ মার্চ ২০১৯/আসাদ/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়