ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস ও ইতিহাসের সাক্ষি সেই চিঠি 

দুলাল আচার্য || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৫, ১৬ জুলাই ২০২২   আপডেট: ১৩:১৮, ১৬ জুলাই ২০২২
শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস ও ইতিহাসের সাক্ষি সেই চিঠি 

গ্রেফতারের আগে লেখা শেখ হাসিনার চিঠি

প্রিয় দেশবাসী,
আমার সালাম নিবেন। আমাকে সরকার গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। কোথায় জানি না। আমি আপনাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যেই সারা জীবন সংগ্রাম করেছি। জীবনে কোনো অন্যায় করিনি। তারপরও মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। উপরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ও আপনারা দেশবাসী আপনাদের উপর আমার ভরসা।

আমার প্রিয় দেশবাসী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে আবেদন, কখনও মনোবল হারাবেন না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। যে যেভাবে আছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। মাথা নত করবেন না। সত্যের জয় হবেই। আমি আছি আপনাদের সাথে, আমৃত্যু থাকব। আমার ভাগ্যে যা-ই ঘটুক না কেন আপনারা বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান। জয় জনগণের হবেই।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়বই। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবই।
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু
শেখ হাসিনা
১৬/০৭/২০০৭

আজ থেকে ১৫ বছর আগের কথা। সময়টা ১৬ জুলাই, ২০০৭। ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায়। এদিন মাইনাস টু ফর্মুলার সূত্র ধরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের আগমুহূর্তে জাতির উদ্দেশ্যে তিনি একটি চিঠি লিখে যান, যা পরদিন জাতীয় দৈনিকগুলো ফলাও করে প্রকাশ করে। শেখ রেহানা প্রকাশিত ও সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘বিচিত্রা’য় চাকরি করার সুবাদে সেই স্মৃতিময় ঘটনায় নিজেকে সম্পৃক্ত করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল।

সেদিন ভোর ৬টায় রঞ্জনদার (বর্তমানে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের প্রথম সচিব) ফোনে আমার ঘুম ভাঙে। তিনি জানালেন, দুলাল আপাকে (মাননীয়র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) গ্রেফতার করছে, টিভি খুলে দেখ। টিভিতে গ্রেফতারের প্রস্তুতি দেখে চমকে উঠি। অবশ্য এমন যে হবে, সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার সে সময়ের বক্তব্যেই আশঙ্কা করা যাচ্ছিল। বিশেষ করে দেশের সুশিল সমাজের একটা অংশ যেভাবে রাজনীতির মগডালে উঠে গিয়েছিলেন তাতে এমন কিছু একটা হবে ধারণা ছিল। তবে খালেদা জিয়ার আগে শেখ হাসিনা গ্রেফতার হবেন, তা অনেকেরই কল্পনার অতীত ছিল। 

সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে অফিসে পৌঁছি (বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের দুই বাড়ি আগে শুক্রাবাদ বাসস্ট্যান্ডের কাছে)। টিভি রুমে দেখি বেবী আপা। তখনকার সিএসবি চ্যানেলটি সরাসরি শেখ হাসিনার গ্রেফতার, তাঁকে আদালতে টেনে-হিঁচড়ে নেওয়ার দৃশ্য সম্প্রচার করছে। আমি পাশের একটি চেয়ারে বসি। আদালত এলাকায় গাড়ি থেকে নামানোর সময় টানা-হেঁচড়ার দৃশ্য টিভিতে দেখে বেবী আপা হঠাৎ হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। তাঁর দুচোখ বেয়ে পানি ঝরছে। কেমন একটা শোকাবহ পরিবেশ! ঘণ্টাখানেক পর বেবী আপার মোবাইলে একটা কল এলো। কিছুক্ষণ পর কিছু না বলেই বের হয়ে গেলেন। 

দুপুরের পরপরই আমাদের অফিস ফাঁকা হয়ে যায়। চারদিকে এক ধরনের নীরবতা, অনেকটা ভীতিকর পরিস্থিতি। রাস্তায় লোকজন খুব কম। থমথমে ভাব। অফিসে ওয়ালিদ, মনির ও আমি। ওয়ালিদ (বিচিত্রার সার্কুলেশন ম্যানেজার) বলল, চল, সবাই চলে গেছে আমরাও যাই। আপা (বেবী আপা) মনে হয় আজ আর আসবেন না। আমি বললাম, দাঁড়াও একটু অপেক্ষা করি। ‘বিচিত্রা’র চাকরিজীবনের (১৯৯৮-২০০৭) প্রায় নয় বছরে একটি অভিজ্ঞতা হয়েছে। বেবী আপা অফিস থেকে যখনই বের হন না কেন, প্রায়দিনই অফিস বন্ধ হওয়ার আগে একবার আসেন। না এলে আগেই জানিয়ে দিতেন। বরাবরের মতো আমি আর মনির (অফিস সহকারী) অপেক্ষা করি। 

বিকাল ৩টার কিছু বেশি হবে। বেবী আপা তাঁর রুমে ঢুকেই মনিরকে (মনির বর্তমানে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অফিস সহকারী) ডাকলেন। ৪-৫ মিনিট পর আমি ইচ্ছা করেই আপার রুমে যাই। দরজায় দাঁড়িয়ে আছি, আপা বইয়ের সেলফ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই বের করছেন, কিছু বই ইতোমধ্যে টেবিলেও রেখেছেন। আমাকে দেখে বললেন, দুলাল মনির আসুক, তোমাকে প্রেস ক্লাব যেতে হবে। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম, কিছু বললাম না। বুঝলাম আপার মনের অবস্থা ভালো না। আপা বললেন, তুমি এখন যাও, আমি ডাকব। 

৫ মিনিট পর মনির এসে বলল, দুলাল ভাই ফুপু ডাকছেন (মনির বেবী আপাকে ফুপু ডাকতেন)। আমি আপার রুমের দিকে এগোচ্ছি, পেছনে মনির। মনির বলল, দুলাল ভাই ‘জরুরি’ খবর আছে। রুমে ঢুকতেই বেবী আপা বললেন, এখানে ২০ কপি আছে, তুমি প্রেস ক্লাব গিয়ে আজাদের (বর্তমানে বাসসের এমডি, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রেস সচিব) কাছে দেবে। আজাদকে তোমার কথা বলা আছে। প্যাকেটটি হাতে নিয়ে যাও। আমি বুঝতে পারলাম, এটা বড়ো আপার হাতের লেখা। কারণ, পাশেই মূল কপিটা রাখা ছিল। আমরা ‘বিচিত্রা’য় যারা চাকরি করতাম, তারা সবাই শেখ হাসিনাকে (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী) বড়ো আপা এবং রেহানা আপাকে ছোটো আপা বলেই ডাকতাম।

‘বিচিত্রা’য় চাকরি করার সুযোগে শেখ হাসিনার হাতের লেখার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। তাঁর বহু লেখা ‘বিচিত্রা’য় কম্পোজ হয়েছে এবং একপর্যায়ে সংশোধনের জন্য আমার কাছে এসেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত ডায়েরি’র কাজে কয়েকবার আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডে ফকরুল আলম স্যারের বাসায় যেতে হয়েছে। ডায়েরির বাংলা কম্পোজের পর ইংরেজি অনুবাদ করার জন্য স্যারের বাসায় বেবী আপা আমাকে পাঠাতেন। আমি অফিস ছুটির পর স্যারকে এগুলো পৌঁছে দিতাম এবং দু-একদিন পর ইংরেজি হয়ে গেলে নিয়ে আসতাম।

সিটে গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে প্যাকেটটি ব্যাগের একটি ভাঁজে রাখলাম। ওয়ালিদকে বললাম ওঠো। টেবিল ছেড়ে উঠতেই বেবী আপা ডাকলেন, দুলাল। আমি কাছে যেতেই ১০০ টাকার একটি নোট দিয়ে বললেন, তাড়াতাড়ি যাও, দেরি করো না। আর শোন, আজাদকে বলবা যারা আওয়ামী লীগ বিট করেন, তাদের ফোনে ডেকে হাতে হাতে দিতে। ঠিক আছে আপা, বলেই আমি বের হয়ে গেলাম। 

আমরা মিরপুর থেকে আসা (৯ নম্বর) একটি লোকাল বাসে প্রথমে নিউমার্কেট যাই। নিউমার্কেট গিয়ে শুনি বাস আর যাবে না। পরে সেখান থেকে রিকশায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে প্রেস ক্লাব পৌঁছি। ওয়ালিদ প্রেস ক্লাবে না নেমে পল্টনে প্রেসে চলে যায়। প্রেস ক্লাব গেট থেকে আমি আজাদ ভাইকে ফোন দিই। তিনি বললেন, আমি ভেতরে। আমি ভেতরে ঢুকে দেখি আজাদ ভাই মাঠে পায়চারি করছেন। প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সংখ্যাও আজ কম। 

আজাদ ভাই আমাকে দেখে বললেন- কই, দাও। প্যাকেটটি হাতে দিতেই তিনি কি যেন বলতে চাইলেন। আমি বললাম, ভাই বেবী আপা বলেছেন, আওয়ামী লীগ বিট যারা করেন তাদের ডেকে হাতে হাতে দিতে। তিনি আমার দিকে তাকালেন। আজাদ ভাইয়ের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগতভাবে জানাশোনা মূলত ‘বিচিত্রা’ অফিসেই। সম্ভবত ২০০২ সালে। তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার প্রেস উপদেষ্টা জাওয়াদুল করিম ভাই ‘বিচিত্রা’ অফিসে (বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরসংলগ্ন বাড়ি) একটি কক্ষে বসতেন। সেখানে বিরোধী দলীয় নেত্রীর প্রেস সংক্রান্ত কাজও চলত। শোকবাণী, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসের বাণী- সবই তখন এখান থেকে দেওয়া হতো। জাওয়াদুল করিম ভাইকে সহায়তার জন্য একসময় আসলাম সানী ভাইকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বেবী আপার নির্দেশে আমিও জাওয়াদ ভাইকে সহায়তা করতাম। জাওয়াদ ভাই মারা যাওয়ার পর আজাদ ভাই পুরো দায়িত্ব পান। একসময় সানী ভাই চাকরি ছেড়ে দেন। 

আজাদ ভাই খামটা খুলে একটা চিঠি বের করে পড়লেন। আমি বললাম, আজাদ ভাই আমি কি আপনাকে কোনোভাবে সহায়তা করতে পারি? তিনি বললেন, তুমি কোন দিকে যাবে? আমি বললাম, মতিঝিলের দিকে। তিনি আমাকে ৬টি কপি দিয়ে বললেন, যাওয়ার পথে এগুলো সংবাদ, যুগান্তর, ইত্তেফাক, ইনকিলাব, অবজারভার অফিসে দিয়ে যাবে। একটা বেশি আছে, প্রয়োজনে ফটোকপি করে নিও। 

প্রেস ক্লাব থেকে বের হয়ে প্রথমে রঞ্জনদাকে ফোন দিলাম। রঞ্জন সেন (বিচিত্রার সাবেক কর্মী, বর্তমানে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের প্রথম সচিব) তখন সংবাদের রিপোর্টার। রঞ্জনদা বললেন, আমি অফিসে।

সংবাদে ঢুকেই রঞ্জনদাকে একটি কপি দিলাম। তিনি দাঁড়িয়ে চোখ বুলিয়ে বার্তা সম্পাদক হয়ে নির্বাহী সম্পাদকের রুমে গেলেন (সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল তখন নির্বাহী সম্পাদক)। বুলবুল ভাইয়ের কাছে দিয়ে খুব দ্রুত সেখান থেকে বের হয়ে একটা রিকশা নিলাম- প্রথমে অবজারভার হয়ে যুগান্তর অফিসের উদ্দেশ্যে। রাস্তায় ৫টি ছোটো খাম কিনে আলাদা আলাদা করলাম। অবজারভার অফিসে রিসিপশনে একটি খাম দিয়ে বের হলাম যুগান্তরের উদ্দেশ্যে। সেখানে নিচে দাঁড়িয়ে রিপোর্টার ফজলুর রহমানকে (তিনিও বিচিত্রার সাবেক কর্মী, বর্তমানে ডিবিসি চ্যানেলের বার্তা সম্পাদক) ফোন দিলাম। তিনি বললেন, উপরে আসো। হাতে একটি কপি দিলে আমাকে নিয়ে তিনি সাইফুল ভাইকে (তখন সাইফুল ভাই যুগান্তরের নির্বাহী সম্পাদক, বর্তমানে সম্পাদক) দিলেন। সাইফুল ভাই এক নিঃশ্বাসে পড়ে আমার দিকে পরপর দুবার তাকালেন। কোথায় পেলাম জানতে চাইলে বললাম, বেবী আপা দিয়েছেন। বললেন, যাও সাবধানে যেও। ফজলু ভাই আমার সঙ্গে নিচে নামলেন এবং আমাকে বললেন, এখন কোথায় যাবে? আমি বললাম ইত্তেফাক, ইনকিলাব। বললেন সাবধান, ব্যারিস্টার মইনুলের পত্রিকা কিন্তু। আমার মনেও এই ভয়টি কাজ করছিল। কারণ ব্যারিস্টার মইনুল তখন সরকারের উপদেষ্টা এবং দায়িত্ব পাওয়ার পরই আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা সম্পর্কে নানা বিরোধী মনোভাব প্রকাশ করতেন। 

আমি একটা রিকশা নিয়ে ইত্তেফাকের গেটে নেমে উপরে উঠে প্রথমে ফরাজী আজমল ভাইকে খুঁজলাম। তখন তিনি অফিসে নেই। পরে ছোটো ভাই জাহিদুর রহমান সজলকে খুঁজলাম, সেও বাইরে। আমার পরিচিতদের মধ্যে কেউ কেউ অফিসে থাকলেও তাদের কাছে দেওয়াটা নিরাপদ মনে করলাম না। নিচে নেমে দুটি খাম ইত্তেফাক ও ইনকিলাব পত্রিকার প্রেস রিলিজ বক্সে রাখি। পরে আজাদ ভাইকে ফোন দিই। তাঁকে বিস্তারিত বললাম এবং আমার কাছে একটি কপি আছে বললাম। তিনি বললেন ঠিক আছে, তুমি কাছাকাছি থেকো। প্রয়োজনে ফোন দেব। তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাসায় যেতে ইচ্ছা হলো না। হাঁটতে হাঁটতে মতিঝিল মসজিদ মার্কেটে ‘অর্থকণ্ঠ’ অফিসে গেলাম। পত্রিকাটির মালিক আমার বন্ধু এনামুল হক এনাম (বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী)। অফিসে বসে দুই গ্লাস পানি খেলাম। ভাবলাম বেবী আপাকে একটা ফোন দিই। 

প্রথমবার তিনি ধরলেন না। ১০ মিনিট পর আবার ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেই বললেন, দুলাল বলো। আপাকে বিস্তারিত বললাম। তিনি বললেন, ঠিক আছে বাসায় চলে যাও। এবার এনামের রুমে গিয়ে তার হাতে একটি কপি দিই। সে পড়ে সঙ্গে সঙ্গেই ৫টি ফটোকপি করিয়ে আনে। কিছুক্ষণের মধ্যে ‘অর্থকণ্ঠ’ অফিসের সবাই জেনে যায়। ওয়ালিদকে ফোন দিলাম। বলল, আমি প্রেসে, আসবা। আমি বললাম, মতিঝিল এনামের অফিসে আছি। মতিঝিল হয়ে যাও। সে বলল- না, দেরি হবে। তুমি চলে যাও। কাল সকাল সকাল অফিসে এসো।

সেদিনের কথা আজ ১৫ বছর পরও অমলিন। মনে পড়ে সেদিন ঘড়ির কাটা নয়টা ছুঁইছুঁই। রাস্তায় লোকজন তেমন নেই, দু-একটা রিকশা চলছে। রিকশা না পেয়ে হেঁটেই বাসায় চলছি। ভাবছি, ১৯৭১ সাল আর ২০০৭ সাল- ব্যবধান ৩৬ বছরের। স্বাধীনতার সমবয়সি আমি। আমার যখন জন্ম হয়, তখন এদেশে চলছে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বর্বরতা। মা-বাবার কাছে শুনেছি, সেই বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কথা। মার কোলে শরণার্থী হয়েছিলাম আমি। 

২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ওয়্যারলেস মেসেজের কথা আজ ইতিহাসের অংশ। পেশার কারণে অসংখ্যবার পড়েছি। লেখায় ব্যবহার করেছি। সেই মেসেজটিতে জাতির জন্য যে নির্দেশনা বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন, দেশবাসী সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। আমরা মুক্ত হলাম, দেশ স্বাধীন হলো। ৩৬ বছর (২০০৭ সাল) পর অন্যায় শাসন আর অরাজকতার বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা জেলে। তাঁর এই মেসেজটি (চিঠি) এ দেশের জনগণকে উদ্দেশ্য করে লেখা। 

আমি সেদিন বঙ্গবন্ধুর মেসেজ আর আজ তাঁর কন্যার মেসেজটি তুলনা করলাম। দুটোতেই মুক্তির কথা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা রয়েছে। দুটোই মুক্তির সনদ। একটি দেশকে শত্রুমুক্ত করে দেশ স্বাধীন করতে, অন্যটি শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায়, অগণতান্ত্রিক সরকার উৎখাতে। যে সংগ্রাম শেখ হাসিনা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। আমি রাজনৈতিক কর্মী নই, একজন সংবাদকর্মী হিসাবে সেসময় শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারবিরোধী আন্দোলনে অন্যদের মতো নিজেও সম্পৃক্ত ছিলাম। পরে বেবী আপার নেতৃত্বে এই চিঠির হাজার হাজার কপি ছাপিয়ে সারা দেশে প্রচার করেছি। সঙ্গে কিছু লিফলেটও। সময়ের স্রোত অপ্রতিরোধ্য, সেই স্রোতের একটা স্মৃতি- ১৬ জুলাই ২০০৭।

লেখক: সাংবাদিক 
 

/তারা/ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়