ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

শবে বরাতে কিছু পেতে হলে চেষ্টা করতে হবে

মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ১১:০৬, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
শবে বরাতে কিছু পেতে হলে চেষ্টা করতে হবে

হাদীসের ভাষায় ‘শবে বরাত’কে বলা হয় ‘লাইলাতুন নিসফে মিন শা‘বান’। বাংলা অর্থ হলো: শা‘বান মাসের মধ্য রজনী। এ রজনীর মর্যাদা ও তাৎপর্য সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা. এর পবিত্র জবানীতে যা পাওয়া যায় তাতে বুঝা যায়, এ রাত্রি অত্যন্ত মহিমান্বিত ও মর্যাদাপূর্ণ। রজনীটির মর্যাদা ও তাৎপর্যের দিকে লক্ষ্য করে অনারবরা এ রাতের নাম দিয়েছেন ‘শবে বরাত’ বা ‘মহিমান্বিত রজনী’। গুরুত্বের বিবেচনায় প্রকৃত অর্থেই এ রাতটি অত্যন্ত মহিমান্বিত ও মর্যাদাপূর্ণ। 

এ রজনী সম্পর্কে হাদীসে অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়। বর্ণনাকারীদের তারতম্যের কারণে কিছু বর্ণনার মান নিয়ে প্রশ্নের উদ্রেক হলেও গ্রহণযোগ্য বর্ণনাও কিন্ত কম নয়। এর মধ্যে সর্বজন গ্রহণযোগ্য হাদীসটি আলোচিত হয়েছে সুনানে ইবনে মাজাহ এ। হযরত মু‘আয ইববে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত তিনি নবীজি সা. থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তা‘আলা মধ্য শা‘বানের রাতে তাঁর বান্দা-বান্দিদের প্রতি বিশেষ মনোযোগী হন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তি ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩৯০, সহীহ ইবনে হিব্বান, হা. নং ৫৬৬৫, শুআবুল ঈমান হা. নং ৬২০৪)। 

আরো পড়ুন:

অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় আলোচিত বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. এর এ হদীসটির মধ্যে বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো: নবীজি সা. বলেছেন: ‘আল্লাহ তা‘আলা মধ্য শা‘বানের রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি বিশেষ মনোযোগী হন’। এ কথাটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, আমরা জানি আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সমস্ত মাখলুকাতের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত। তিনি সর্ববিষয়ে কুদরাতীভাবে বিশেষভাবে মনোযোগী। যেমনটা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: অর্থ: আপনি কি লক্ষ্য করেন না যে, আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে আল্লাহ তা জানেন? তিন ব্যক্তির মধ্যে এমন কোনো গোপন পরামর্শ হয় না যাতে চতুর্থ জন হিসেবে তিনি থাকেন না এবং পাঁচ ব্যক্তির মধ্যেও হয় না যাতে ষষ্ঠ জন হিসেবে তিনি থাকেন না। তারা এর চেয়ে কম হোক বা বেশী হোক তিনি তো তাদের সঙ্গেই আছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন।  তারপর তারা যা করে, তিনি তাদের কিয়ামতের দিন তা জানিয়ে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ সব কিছু সম্পর্কে সম্যক অবগত। (সূরা মুজাদালাহ: ০৭) । এরপরও উল্লেখিত হাদীসে রাসূল সা. যে বলেছেন: ‘আল্লাহ তা‘আলা মধ্য শা‘বানের রাতে তাঁর বান্দা-বান্দীর প্রতি বিশেষ মনোযোগী হন’। 

এর অর্থ দাড়ায়, তিনি এ রাতে তাঁর বান্দার প্রতি বিশেষ মনোযোগী হন বিশেষ কোনো কারণে। আর সে কারণটি হলো: যে আল্লাহর কাছে বিশেষ কিছু চাইবে তিনি তাকে তা প্রদান করবেন। এ প্রত্যাশিত বিষয়াবলীর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো: বান্দার পাপ-পঙ্কিলতা থেকে তাঁর নিকট ক্ষমা পাওয়া। 

হাদীসটির পরবর্তী অংশে নবীজি সা. সেটাই বলেছেন: মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তি ছাড়া যারা আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা চাইবে তাদের সবাইকে তিনি ক্ষমা করে দেবেন। মানব জাতির জন্য এটি এক মহা সুযোগ। এ সুযোগ যারা কাজে লাগাতে পারবে না তারা হতভাগা ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। এ কারণে রসূল সা. এ মহিমান্বিত রজনীতে বেশি বেশি ইবাদত করার কথা বলেছেন। উম্মতকে শিখানোর জন্য তিনি নিজে আমল করে দেখিয়েছেন। 

উম্মাহাতুল মুমীনিন “হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা রা. বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সা. এ রাতে নামাজ পড়ছিলেন এবং সিজদায় দীর্ঘ অবস্থানের কারণে আমি মনে করলাম যে, তিনি ইন্তিকাল করেছেন। তাঁর অবস্থা জানার জন্য আমি তাঁকে নাড়া দিলে তিনি নড়ে ওঠেন। এরপর সিজদাহ থেকে মাথা উত্তোলন করেন। অতঃপর নামাজ শেষ করে আমাকে বললেন, হে আয়েশা, তমি কি ধারণা করেছ যে, আল্লাহর রাসূল তোমার সাথে খিয়ানত করেছেন? আমি বললাম, আল্লাহর শপথ করে বলছি, এ ধরনের কোনো কিছু নয়; বরং সিজদায় আপনাকে দীর্ঘকাল অবস্থানের কারণে আমি মনে করেছি যে, আপনি ইন্তিকাল করেছেন। এ কথা শুনে তিনি বললেন, তুমি কি জানো এটি কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন। এরপর তিনি বললেন, আজ শাবান মাসের মধ্য রজনী। এ রাতে মহান রাব্বুল আলামীন ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন। রহমত প্রার্থনাকারীদের রহমত প্রদান করেন এবং বিদ্বেষীদের অবকাশ দেন।” (শুয়াবুল ঈমান লিল ইমাম বায়হাকী রহ., আব্দুর রহমান মুবারক পুরী, তুহফাতুল আহওয়াযী, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, খ: ৩, পৃ: ৩৬৬)

বুঝার বিষয় হলো: এ মহাসুযোগ পেয়ে লাভবান হবে কারা? যারা লাভবান হতে চাইবে। যারা চেষ্টা করবে। বিশেষভাবে ইবাদত করবে, ক্ষমা প্রার্থনা করবে। 

এ রাতে করণীয় আমল সমূহ: 
১. বেশি বেশি তওবা করা। এ রাতে অসংখ্য মানুষকে ক্ষমা করার ঘোষণা হাদীসের মাধ্যমে বিশ্বনবী জানিয়ে দিয়েছেন। তিরমিজি শরীফের ৭৩৯ নং হাদিসে আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, নবীজি সা. বলেছেন: ‘শা‘বান মাসের পনেরতম রজনীতে আল্লাহ তা‘আলা প্রথম আসমানে কুদরতীভবে আগমন করেন এবং আরবের বিখ্যাত কালব গোত্রের বকরীগুলোর পশম পরিমান মানুষকে ক্ষমা করে দেন’। কাজেই এ রাতে বেশি বেশি পরিমান নিজ পাপের কথা স্মরণ করে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে।

এছাড়াও উপরের হাদীসগুলো এবং অন্যান্য অসংখ্য হাদীস থেকে এ রজনীতে যেসব আমলের কথা পাওয়া যায় তাহলো: ২. দু‘আ করা ৩. দীর্ঘ নফল নামাজ আদায় করা ৪. পরের দিন রোজা রাখা ৫. কবর জেয়ারত করা। তাবে কবর জেয়ারতের নামে কবর পূজা হয়ে যেন না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ৬. অন্তরের সমস্ত হিংসা-বিদ্বেষ দূর করা।

এ রাতে নিষিদ্ধ কাজসমূহ: ইসলামে নিষিদ্ধ সকল কাজই এ রাতে নিষিদ্ধ। তবে এ রাতে আমাদের দেশে ইবাদতের নামে যে সব রীতি-রেওয়াজ আছে ইসলামে সেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। যেমন: ১. কবরে সেজদা করা ২. হালুয়া রুটির আয়োজন করা ৩. সন্ধ্যার পরে গোসল করা ৪. আলোকসজ্জা করা ৫. সিরনি তবারকের আয়োজন করা ৬. গোরস্তানে মেলার আয়োজন করা ৭. মাসজিদে হৈ চৈ করা ৮. মাইকে খতমে কুরআন করা ৯. আতশ বাজি ফোটানো ইত্যাদি। 

এখানে উল্লেখিত কাজগুলোর মধ্যে কিছু কাজ এমন আছে যেগুলো অন্য সময়ে করলে সমস্যা নেই বরং উত্তম। যেমন: খাবারের আয়োজন করা। এটা শবে বরাতে রেওয়াজ হওয়ার কারণে এটা এ সময় নিষেধ করা হয়েছে।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদের শবে বরাতে বেশি বেশি নেক আমল করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার তৌফিক দান করুন, আমীন।

শাহেদ//

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়