দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা অ্যালার্মিং: ফখরুল
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
দেশের বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সূচক পর্যালোচনায় বর্তমান অর্থনীতিতে অশনিসংকেত দেখছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার (১৮ মে) বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান যে অর্থনৈতিক অবস্থা সেটাকে আমি মনে করি অ্যালার্মিং। এটা দেশের জন্য অশনিসংকেতও বটে।’
অদূর ভবিষ্যতে দেশ যে শ্রীলংকার মতো বিপদে পড়তে পারে সেটা নিয়েও বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বলেও জানান তিনি।
১৬মে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করে যে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে তা আজকের সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স আয়ে ঘাটতির কারণে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে। ঢাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে অসহনীয় হয়ে উঠেছে জিনিসপত্রের দাম। দিন দিন সার্বিক পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে উঠছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রিজার্ভ নিয়ে আত্মতুষ্টির কিছু নেই। এটি দ্রুত কমে আসছে। গত আট মাসে রিজার্ভ ৪৮ বিলয়ন ডলার থেকে ৪২ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে। পরের দুই মাসে এটা আরও ৪ বিলিয়ন ডলার কমে যাবে। এভাবে যদি রপ্তানির তুলনায় আমদানি বাড়তে থাকে তাহলে অতি দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভ শেষ হয়ে যাবে। রিজার্ভ শেষ হওয়ায় কী ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে শ্রীলংকার চলমান পরিস্থিতি তার নিকৃষ্টতম উদাহরণ বলেও জানান মির্জা ফখরুল।’
এই মুহূর্তে যে রিজার্ভ রয়েছে তাতে মাত্র পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। আমদানির তুলনায় রপ্তানি যে হারে বাড়েনি। পাশাপাশি প্রবাসী আয়ও কমে গেছে। ফলে প্রতি মাসে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।’
বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অ্যালার্মিং উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আইএমএফের সুপারিশ মোতাবেক সঠিক নিয়মে রিজার্ভ হিসাব করলে বর্তমানে বাংলাদেশের রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার। বাস্তবিকভাবে আইএমএফের নিয়মে রিজার্ভ হিসাব করা হলে বাংলাদেশের হাতে আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রা রয়েছে মাত্র সাড়ে তিন মাসের। যা একেবারেই অশনিসংকতে।’
অর্থনৈতিক এই অবস্থা থেকে দেশকে রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে অর্থনৈতিক এই নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতার জন্য সরকারের জবাবদিহিতা না থাকাই দায়ী। তাই দেশকে রক্ষা, মানুষকে বাঁচানো এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এই মুহুর্তে সার্বজনীন ঐক্যের মাধ্যমে রাজপথে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নাই।’
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
মেয়া/সনি
আরো পড়ুন