স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর কমিটি নিয়ে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা
আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, অনেক ক্ষেত্রে ত্যাগী ও যোগ্যদের পরিবর্তে যাদের পদ দেওয়া হয়েছে, সেখানে মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে স্বজনপ্রীতি, আর্থিক লেনদেন এবং ব্যক্তিস্বার্থ।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি এসবের প্রতিবাদে কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তদন্তের কথাও ভাবছেন তারা।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ-উত্তর শাখার সর্বশেষ সম্মেলন ২০১৯ সালের ১১ ও ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচনের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখায়ও নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়।
দক্ষিণের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন কামরুল হাসান রিপন এবং সাধারণ সম্পাদক হন তারিক সাঈদ। উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হন ইসহাক মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান নাঈম।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, তিন বছর মেয়াদি এই কমিটির দুই বছর ১০ মাস পার হওয়ার পর ১০০ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়েছে গত ৭ সেপ্টেম্বর।
কমিটি গঠনের পরই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমা হয়েছে। ফেসবুকে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলছেন নেতাকর্মীরা। যোগ্যতা অনুযায়ী পদ না পেয়ে এবং ত্যাগীদের মূল্যায়নের পরিবর্তে ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার অভিযোগ তুলে কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘোষণাও দেয়া হয়েছে।
সংগঠনের নেতাকর্মীরা বলছেন, তারিক সাঈদ আর্থিক সুবিধা নিয়ে নেতা বানিয়েছেন অনেককে, যারা রাজনীতিতেই ছিলেন না কখনও। নতুন পদ পাওয়া বিপ্লব, লিটন, রায়হান, সুমনকে এভাবে নেতা বানানো হয়েছে বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে। আবার ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের রাজনীতি করেছেন, এমন ব্যক্তিকে পদ দেওয়া হয়েছে। অ্যাডভোকেট নাসির মজুমদার কুমিল্লায় ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাকে সদস্য ঘোষিত কমিটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। এছাড়া, সরকারি চাকরীজীবিদের নিয়মবহির্ভূতভাবে কমিটিতে পদ দিয়েছেন তারিক সাঈদ। সদ্য ঘোষিত কমিটিতে অর্থ সম্পাদকের পদ পেয়েছেন আবদুর রায়হান। তিনি সোনালী ব্যাংকে চাকরি করেন।
এদিকে, কমিটি ঘোষণার পর এসব অভিযোগ বেশ অস্বস্তিতে পড়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্বশীল নেতারা।
তারা বলছেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ গঠনের পর থেকে এরকমভাবে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে শীর্ষ নেতৃত্বের স্বাক্ষরসহ কমিটি গঠন আগে হয়নি। এদিক দিয়ে এবারের কমিটি সফল। তবে, যে ধরনের অনিয়মের কথা উঠেছে, সেটি নিয়ে তারা বেশ বিব্রত। এ নিয়ে শিগগিরই তদন্ত করবেন তারা। যারা এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের রাজনীতি না করাই উচিত।
জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু বলেন, ‘অনিয়মের বিষয়ে শুনেছি। তবে, লিখিত কোনো অভিযোগ আসেনি এখনও। তারপরও বিষয়গুলো অবশ্যই আমরা খতিয়ে দেখব। অনিয়ম হয়ে থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমন অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হলে তাদের রাজনীতি না করাই ভালো।’
কমিটি ঘোষণার পর এসব অনিয়ম তুলে ধরে পদত্যাগ করেছেন নতুন কমিটির সদস্য রিশাদ আহমেদ রুশদী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের ক্ষোভের কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘অরাজনৈতিক এবং ব্যবসায়ী, এক বছর ধরে রাজনীতি করা, বানোয়াট সিভি বানিয়ে, এই মহানগরে রাজনীতি করে নাই এমন লোককে ব্যক্তিস্বার্থের জন্য মূল্যায়ন করা হয়েছে।’
‘এমনকি রাষ্ট্রীয় আইনের বাইরে গিয়ে সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তাকেও ব্যক্তিস্বার্থে মূল্যায়ন করা হয়েছে। তিন বছর ধরে ঢাকা শহরে আসা বেতনভুক্ত চামচাদের সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে, অথচ কারো সিভি দেখে নির্ণয় করা হয়নি পদ-পদবি। কারো গাড়ি ব্যবহারের কারণে বিএনপির জামাতা হয়েছে সহ-সভাপতি, অথচ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা সাবেক ও মহানগর দক্ষিণের সাবেক ছাত্রনেতারা জায়গা পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘জামাকাপড়, শাড়ি এসব সাপ্লাই দিয়েও যে নেতা হওয়া যায়, আমার জীবনে প্রথম দেখলাম। কোনো ধরনের রাজনীতি নাই, তারা গাড়িতে সার্ভিস দিলে সহ-সভাপতি হয়, তাও প্রথম দেখলাম। ঘরের বাজার করলে সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়া যায়, তাও আমি প্রথম দেখলাম। অতএব, কমিটি তে আমি বেমানান। আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলাম। কমিটির আগেই তারিক সাঈদকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম।’
টাকা নিয়ে কমিটিতে না রাখার অভিযোগ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক আজিজ বেপারী।
তিনি বলেন, ‘তারিক সাঈদের কাছে জামাত-শিবির বলতে কিছু নাই। টাকা যে দেবে সে মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা হবে, সব সময় এমনই ছিল তার মনোভাব। সে আমার কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা নেয় এই কথা বলে যে, আমাকে ভালো জায়গায় রাখবে।’
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারিক সাঈদ বলেন, ‘অনেকে পদ না পেয়ে আমার বিরুদ্ধে এসব বলছে। কমিটিতে পদ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়নি। যোগ্য যারা, তারাই পদ পেয়েছেন।’
স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন বলেন, ‘যোগ্য এবং পরীক্ষিতদের দিয়েই কমিটি করা হয়েছে। এতে কোনো প্রকার অনিয়ম হয়নি। এরপরও যেহেতু কথা উঠেছে, প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা যাবে।’
রেজা পারভেজ/রফিক
আরো পড়ুন