ঢাকা     শুক্রবার   ২৪ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ১০ ১৪৩১

জিয়াউর রহমানই কর্নেল তাহেরকে হত্যা করেছেন: ইনু 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০৫, ২১ জুলাই ২০২৩  
জিয়াউর রহমানই কর্নেল তাহেরকে হত্যা করেছেন: ইনু 

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে বুঝলেন, কর্নেল তাহের বেঁচে থাকলে তার পাকিস্তানপন্থি রাজনীতির যে স্বপ্ন, সে স্বপ্ন পূরেণ হবে না। তাই, তিনি শেষ বাধাটাকে উপড়ে ফেলার জন‌্য ঠান্ডা মাথায় কর্নেল তাহেরকে হত্যা করেছেন। 

শুক্রবার (২১ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে জাসদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শহিদ কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তমের ৪৭তম হত্যাবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জাসদ সেই দল যারা সিপাহী বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরকে প্রতিহত করেছিল, অবৈধ ক্ষমতা দখলকে প্রতিহত করেছিল, সামরিক শাসনকে চ্যালেঞ্জ করেছিল, বাংলাদেশকে আবার গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছিল। 

জিয়াউর রহমান যে কর্নেল তাহেরেকে সাজানো মামলায় হত্যা করেছে, তা প্রমাণ হয়েছে, দাবি করে হাসানুল হক ইনু বলেন, বাংলাদেশের উচ্চ আদালত ২০১১ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন ও বিচারপতি জাকির হোসেন ঘোষণা করলেন, কর্নেল তাহেরের হত্যাটা সম্পূর্ণ আইনের বরখেলাপ করে করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো আইন পরিপালন করা হয়নি। ঠান্ডা মাথায় কর্নেল তাহেরকে হত্যা করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে করা মামলাটি অবৈধ। এটার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদেরই বিচার হওয়া উচিত। 

কর্নেল তাহের হত্যার বর্ণনা দিযে জাসদ সভাপতি ইনু বলেন, ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই বিকেল ৪টায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারগারে ভিতরে আমরা বন্দি ছিলাম। আমি শিরীন আখতারসহ অনেকই তখন কারাগারে ছিলাম। জেনারেল জিয়াউর রহমান সামরিক আদালতে তথাকথিত বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোনে ব্যাখ্যা না দিয়ে কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড দিলেন আর আমাদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিলেন। সাজা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কর্নেল তাগের হাসিতে ফেটে পড়লেন। কর্নেল তাহের জেনারেল জিয়াউর রহমানের কারাগারে বন্দি, এটা তিনি বুঝতে পারছিলেন। এটাই আমাদের শেষ দেখা। কর্নেল তাহের আমাদেরকে বলেছেন, মন খারাপের কিছু্ নেই, এক জীবনে তো সব হয় না। 

তিনি বলেন, আমি সব সময় বলি, সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম হচ্ছে রিলে রেসের মতো। আমার টাইম ১০০ মিটার দৌঁড়ানো। তারপর কাঠিটা আরেকজনের হাতে দিয়ে দেওয়া। সে তখন দৌঁড়াবে। এভাবেই মার্ক্স, লেনিন থেকে আমরা এসেছি। আমরা দৌঁড়াচ্ছি। 

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ও তার দল যতই গণতন্ত্রের আলখাল্লা পরার চেষ্টা করুক না কেন, যতই গণতন্ত্রের মুখোশ পড়ার চেষ্টা করুক না কেন, তাদের রক্তমাখা দাগ বেড়িয়েই থাকবে। জিয়া রাজনীতির বিশ্বাসঘাতক। অন্য ভাষায় বললে, জিয়া হচ্ছে রাজনীতির মীর জাফর। মূলত ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধা জিয়া ১৯৭৫ সালে এসে খলনায়কে পরিণত হলেন। সুতরাং জিয়াউর রহমান বাংলাদশের রাজনীতির খলনায়ক। জেনারেল জিয়াউর রহমানের মতোই তার হাতে গড়া দল বিএনপি যতই গণতন্ত্রের আলখাল্লা পড়ুক না কেন, তারা কোনোদিন গণতন্ত্রের মহিরূহ হতে পারবে না। 

জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, দেশকে সংবিধানের বাইরে ঠেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের রাজনীতি মোকাবিলার সংগ্রামের সমান্তরালেই শ্রমিক-নারী-সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম পরিচালনা করতে হবে। সমাজ বদলের সংগ্রামে শহিদ কর্নেল তাহের চিরদিন প্রেরণার উৎস হিসেবে থাকবেন। তার সেই স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানকে সমুন্নত রাখতে হবে। 

জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান চুন্নুর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন—জাসদের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট রবিউল আলম, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও ঢাকা মহানগর জাসদের যুগ্ম সমন্বয়ক নুরুল আখতার, জাসদের সহ-সভাপতি ফজলুর রহমান বাবুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা শফি উদ্দিন মোল্লা, নইমুল হক চৌধুরী টুটুল, জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান মুক্তাদির, শওকত রায়হান, রোকনুজ্জামান রোকন, নইমুল আহসান জুয়েল, মো. মোহসীন, জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুজ্জামান বাদশা, ঢাকা মহানগর পশ্চিম জাসদের সভাপতি মো. নুরুন্নবী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাসদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুহিবুর রহমান মিহির, জাতীয় কৃষক জোটের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিন কাউছার, জাতীয় আইনজীবী পরিষদের নেত্রী অ্যাডভোকেট নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী, জাতীয় যুব জোটের সহ-সভাপতি আমিনুল আজিম বনী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (ননী-মাসুদ) কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাশিদুল হক ননী প্রমুখ। 

কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তমের ৪৭তম হত্যাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ (২১ জুলাই) ভোর ৬টায় জাসদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে জেলা-উপজেলা কার্যালয়ে দলের পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির একটি প্রতিনিধিদল এবং ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর কমিটি, নেত্রকোনা জেলা কমিটি সকাল ১১টায় নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় কাজলা গ্রামে শহিদ কর্নেল তাহেরের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

নঈমুদ্দীন/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়