তিনটি রাজনৈতিক দল মিলে ‘বৃহত্তর সুন্নিজোট’
বিশেষ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে সুন্নী মতাদর্শভিত্তিক তিনটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল মিলে বৃহত্তর সুন্নী জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। জোটের শরিক তিনদল হলো বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)।
তিন শরিকদলের চেয়ারম্যান যথাক্রমে আল্লামা এম এ মতিন, পীরে তরিকত আল্লামা ছৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী ও পীরে তরিকত আল্লামা ছৈয়দ সাইফুদ্দীন আল হাসানী নতুন জোটের শীর্ষনেতা থাকবেন। এই জোটে চেয়ারম্যান ও মহাসচিব বলতে কোনো পদ থাকছে না। তিন দলের মহাসচিব থাকবেন মুখপাত্রের দায়িত্বে।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জোটের ঘোষণা দেন ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব অধ্যক্ষ সওম আব্দুস সামাদ।
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের অধিকাংশই সুন্নি মুসলমান। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আদর্শে বিশ্বাসী। আজকে তিনটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে বৃহত্তর সুন্নিজোট গঠিত হয়েছে। আমরা দেশের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সুন্নি মুসলমানদের এই প্লাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ করবো। ইসলামের নামে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ বিরোধী এবং স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ও সুফিবাদের যত রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন, পীর দরবার রয়েছে তাদেরকেও এই জোটে শামিল করবো। সুন্নিদের বৃহত্তর ঐক্যগড়ে তুলবো। আশা করছি, আগামী দিনে বৃহত্তর সুন্নিজোটকে ছাড়া কেউ ক্ষমতায় যেতে পারবে না।’’
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন আল্লামা এম এ মতিন, পীরে তরিকত আল্লামা ছৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী ও পীরে তরিকত আল্লামা ছৈয়দ সাইফুদ্দীন আল হাসানী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শায়খুল হাদিস অধ্যক্ষ আল্লামা জয়নুল আবেদীন জুবাইর। তিনি বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সরকার জনপ্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। বিগত ১ বছরে মব ভায়োলেন্স, সন্ত্রাস, খুন, গুমসহ অসংখ্য বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অতীতের ন্যায় অব্যাহত রয়েছে। চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার, দখল-বেদখলের মতো ঘটনায় জনজীবন অতিষ্ঠ। এ যাবত শতাধিক মসজিদ, মাদরাসা ও মাজারসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা, ভাংচুর তথা অগ্নিসংযোগের মতো নেতিবাচক ঘটনা ঘটেছে। এক্ষেত্রে সরকারের নির্লিপ্ত ও নির্বিকার ভূমিকা জনমনে ক্রমাগত ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতীয় জীবনে প্রতিহিংসার রাজনীতি জগদ্দল পাথরের ন্যায় চেপে বসেছে। নির্বাচন এর সময় ঘোষিত হলেও এখনো এতদসংক্রান্ত ধোঁয়াশা কাটেনি।’’
বিগত এক বছরেও সংস্কার দৃশ্যমান হয়নি জানিয়ে আল্লামা জুবাইর বলেন, ‘‘সরকার সংশ্লিষ্ট অনেকেরই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন যা ২৪ এর আন্দোলনের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক।’’
তিনি বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতি একটি নতুন কনসেপ্ট। এতে জনগণ সংশয় ও বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত হওয়ার আশঙ্কা সর্বাধিক।’’
লিখিত বক্তব্যে বলা হয় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী জুলাই ২৪ এর ন্যায় অন্য কোন আন্দোলন-সংগ্রামে এদেশে এত বেশী রক্তপাত এর ঘটনা আর ঘটে নি। জুলাই '২৪ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি, শহীদদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, পূনর্বাসন এবং আহতদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করাসহ পূনর্বাসনেরও দাবি জানানো হয়।
জাতীয় নীতি নির্ধারনে সকল নিবন্ধিত দলের অংশগ্রহণ ও নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করণ, জুলাই আন্দোলনে বিভিন্ন থানা থেকে লুট হওয়া এবং সকল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে কম্বিং অপারেশন পরিচালনা করা, অবৈধ অর্থ পাচার রোধ এবং পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা, নির্বাচনের পূর্বে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা, দুর্নীতিবাজ, আদালতের রায়ে দণ্ডিত সন্ত্রাসী, ঋণখেলাফি, বিদেশে অর্থ পাচারকারী ও কালো টাকার মালিকদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা। এছাড়া ধর্মীয় মূল্যবোধ ও স্বাধীনতার চেতনার ভিত্তিতে ন্যায়ভিত্তিক, কল্যাণ-মুখী ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। শান্তিপূর্ণ ও অহিংস রাজনৈতিক সংস্কৃতি চর্চা এবং দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া। সুদমুক্ত, ন্যায্য ও উৎপাদনভিত্তিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা। কৃষি, শিল্প ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা খাতকে রাষ্ট্রীয় সহায়তা দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বাজারদর স্থিতিশীলকরণে সিন্ডিকেট ও কালোবাজারি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা। জাতীয় সম্পদ গ্যাসসহ খনিজ সম্পদের যথাযথ ব্যবহার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের নতুন বাজার সৃষ্টি ও প্রবাসীদের স্বার্থ সংরক্ষণ। কুরআন-সুন্নাহ এর আলোকে যুগোপযোগী জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রণয়ন। এছাড়া মাদরাসা, সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষার মধ্যে সমন্বয় সাধনের কথা বলা হয়।
মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের পদক্ষেপ গ্রহণ। নারী ও শিশু অধিকার সুরক্ষা এবং মাদক, জুয়া ও অনৈতিক সংস্কৃতি নির্মূল করাসহ ১৭ দফা দাবি এবং ২১ দফা ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অধ্যক্ষ আল্লামা স উ ম আবদুস সামাদ। তিন দলের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন,অধ্যক্ষ আল্লামা এস এম ফরিদ উদ্দীন, আল্লামা আবু সুফিয়ান আবেদী আলকাদেরী, এডভোকেট আবু নাছের তালুকদার, এম সোলায়মান ফরিদ, অধ্যক্ষ এম ইব্রাহীম আখতারী, আল্লামা খাজা আরিফুর রহমান তাহেরী, আল্লামা মোশাররফ হোসেন হেলালী, মাওলানা আশেকুর রহমান হাশেমী, মাওলানা বাকি বিল্লাহ আজহারী, মাওলানা রুহুল আমিন ভূঁইয়া, স ম হামেদ হোসাইন, এইচ এএম মুজিবুল হক শাকুর, ঢালি কামরুজ্জামান হারুন, মোহাম্মদ আবদুর রহিম, অধ্যক্ষ আলী মোহাম্মদ চৌধুরী, মোহাম্মদ সোহেল সামাদ বাচ্চু, এ এম মঈনউদ্দীন চৌধুরী হালিম, মাওলানা ওয়াহেদ মুরাদ, মাসুম বিল্লাহ মিয়াজি, এড ইসলাম উদ্দীন দুলাল, তরিকুল হাসান লিংকন, এড. ইকবাল হাসান, মোহাম্মদ ইব্রাহীম মিয়া, আবদুল হাকিম, এস এম তারেক হোসাইন, কাজী জসিম উদ্দীন আশরাফী প্রমুখ।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন//