ঢাকা     শনিবার   ০৮ নভেম্বর ২০২৫ ||  কার্তিক ২৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে ‘না’, নভেম্বরে গণভোট চায় জামায়াত

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২৬, ১৩ অক্টোবর ২০২৫   আপডেট: ২২:২৭, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে ‘না’, নভেম্বরে গণভোট চায় জামায়াত

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, “জাতীয় নির্বাচন এবং জুলাই সনদের বিষয়ে গণভোট একসঙ্গে হওয়ার বিষয়ে কোনো কোনো দলের মত আছে। তবে আমরা বলেছি, এটি আলাদাভাবে নভেম্বরে হতে হবে।”

সোমবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন সঙ্গে জামায়াতের প্রতিনিধিদলের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। 

আরো পড়ুন:

গণভোটের বিষয়ে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “দেশে একটা গণভোটের সিদ্ধান্ত আমরা প্রায় নিয়েছি। যদিও এখনো চূড়ান্ত রূপ নেয়নি। এটা নিয়ে দুই ধরনের মত রাজনৈতিক অঙ্গনে আছে। একটা হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন এবং গণভোটে জুলাই সনদকে সাংবিধানিকভাবে ভিত্তি দেওয়ার জন্য। এ দুটি বিষয় একসঙ্গে হওয়ার ব্যাপারে কোনো কোনো দলের মত আছে। আমরা বলেছি, ‘না’, এটা আলাদা হতে হবে। কারণ দুইটা ভিন্ন বিষয়। যেহেতু এটি আলাদা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেহেতু এটি আলাদা গণভোটের মাধ্যমেই জনমত গ্রহণ করা উচিত। আমরা এটি জোর দিয়েই বলেছি। এ ক্ষেত্রে আমরা অনুরোধ করেছি, যদি জাতীয়ভাবে সিদ্ধান্তটি হয়, সেটি যেন আলাদাভাবে নভেম্বরে হয়। বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীসহ অনেকগুলো দল এটি চাচ্ছে।”

নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে, জামায়াতের এই নায়েবে আমির বলেন, “প্রথম সমস্যা হচ্ছে, প্রতিটি দল নির্বাচনের সময় প্রতীকে বিজয়ের জন্যই বেশি গুরুত্ব দেবে। এছাড়া নির্বাচনে কোনো একটি জায়গায় দখল হলে সংস্কারের ব্যালটও দখল হয়ে যাবে। ফলে একটির ভাগ্য আরেকটার সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত হয়ে যাবে। কোনো কারণে যদি কোনো জায়গায় নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়, তাহলে গণভোটও স্থগিত হয়ে যাবে। কোনো ফলাফল আসবে না।”

বৈঠকে এসব যুক্তি তুলে ধরেছেন জানিয়ে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “সব শুনে নির্বাচন কমিশন বলেছে, এটি সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়। সরকার সিদ্ধান্ত নিলে নির্বাচন কমিশন সেটি বাস্তবায়ন করবে। সেখানে কোনো সমস্যা হবে না।”

আলাদা ভোটে খরচ বাড়বে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “গণভোট তো খুব একটা সিম্পল বিষয়। এখানে বড় ধরনের কোনো অর্থনৈতিক বিষয় নেই। গণভোটের জন্য যে বাক্স কেনা হবে, সেটি দিয়েই জাতীয় নির্বাচন করা যাবে। বাড়তি খরচ বলতে একটা ব্যালট, কালি ও যারা এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবেন, তাদের খাবার, ভাড়া বাবদ কিছু খরচ হবে। এর বাইরে বেশি কিছু না। জাতির একটি বিশাল অর্জনের কাছে সেটি বড় বিষয় হবে না।”

আগে গণভোট জাতীয় নির্বাচনকে সমস্যায় ফেলবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা বলেন, “নির্বাচন ও গণভোট একই দিন হলে আমরা মনে করি সংস্কার ইস্যুটি একেবারেই গৌণ হয়ে যাবে। কারণ, প্রতিটি দলের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বেশি কনসার্ন থাকবে। গ্রামের সাধারণ ভোটারদের অনেকেই প্রতীকে ভোট দিয়ে আরেকটি ভোট দেওয়ার কথা মাথায় থাকবে না। আর এই নির্বাচনে যদি ঝামেলা হয়, তাহলে তো আম ও ছালা দুটোই চলে যাবে। এজন্য আমরা নভেম্বরে গণভোট করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে বলেছি।”

অতীতেও অনেক গণভোট হয়েছে উল্লেখ করে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “বাংলাদেশে অতীতেও অনেক গণভোট হয়েছে। এটি বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। সেখানে দেখা গেছে যে ২১ দিনের ব্যবধানেও গণভোট হয়েছে। আবার ১০ দিনের ব্যবধানেও হয়েছে। সুতরাং এটি করা সম্ভব। গণভোটে শুধু ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ ভোট থাকবে।”

আলোচনায় প্রবাসীদের ভোটের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা প্রবাসীদের ভোটের বিষয়ে দাবি জানিয়েছি। প্রবাসীরা ভোটের ক্ষেত্রে দুটো সমস্যার কথা বলেছিল। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, জাতীয় পরিচয়পত্র। এটি নিয়ে একটা জটিলতা আছে। তবে নির্বাচন কমিশন বলেছে যে জন্ম সনদের মাধ্যমেও তারা ভোটার হতে পারবে। ভোট দেওয়ার বিষয়েও নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন জায়গায় প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে। আমরা তাতে সন্তুষ্ট।”

ভোটার তালিকা হালনাগাদের বিষয়ে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “অক্টোবরের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ সম্পন্ন করার কথা ইসি জানিয়েছে। এছাড়া ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়েছেন। এটির ক্ষেত্রে ইসি বলেছে, ভোটার তালিকায় যে ছবিটা আছে, সেটিকে তারা আরো স্পষ্ট করার চেষ্টা করছে। সেটি হয়ে গেলে আর বাড়তিটা প্রয়োজন হবে না।”

নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার দাবি জানিয়েছেন বলে জানান আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, “এ ক্ষেত্রে সরকার বলেছে যে তারা লটারির মাধ্যমেই এ সমস্ত নিয়োগ করবে। এই পদ্ধতিটা যেন অনুসরণ করা হয়, আমরা সেটি নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছি।”

বৈঠকে গণভোট, প্রবাসী ভোট, পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতিতে নির্বাচন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে জামায়াত নেতারা তাদের মতামত তুলে ধরেন।

প্রতিনিধিদলে অন্যদের মধ্যে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ এবং জামায়াত নেতা ও বাংলাদেশ ল ইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি জসিম উদ্দিন সরকার ছিলেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়