ঢাকা     বুধবার   ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

‘খালেদা জিয়ার মৃত্যুর দায় থেকে শেখ হাসিনা কখনো মুক্তি পাবেন না’

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০১, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫   আপডেট: ২০:২১, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
‘খালেদা জিয়ার মৃত্যুর দায় থেকে শেখ হাসিনা কখনো মুক্তি পাবেন না’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। 

‘‘খালেদা জিয়ার মৃত্যুর দায় থেকে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা কখনো মুক্তি পাবেন না’’- এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। 

তিনি এ সময় অভিযোগ করে বলেন, ‘‘বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ না দেওয়ার কারণেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে এবং শেষ পর্যন্ত তাকে মৃত্যুর কাছে হার মানতে হয়।’’

আরো পড়ুন:

বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুর ২টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় বক্তব্য দিতে গিয়ে নজরুল ইসলাম খান প্রয়াত এই নেত্রীর বর্ণাঢ্য জীবন, রাজনৈতিক সংগ্রাম ও রাষ্ট্রনায়কসুলভ ভূমিকার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে আসা আকস্মিক হলেও দেশের প্রয়োজনে তিনি অপরিহার্য ছিলেন।  

নজরুল ইসলাম খান জানান, বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু সংবাদ মুহূর্তের মধ্যে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশি শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভরে ওঠে দোয়া, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায়। একইসঙ্গে বিশ্ব রাজনীতির অঙ্গন থেকেও আসতে শুরু করে শোকবার্তা।

বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি পরিচ্ছন্নতা ও পরিপাট্য পছন্দ করতেন। ফুলের প্রতি ছিল তার গভীর অনুরাগ, যা তার ব্যক্তিগত জীবন ও রাজনৈতিক আচরণেও প্রতিফলিত হয়েছে। তার রাজনৈতিক ভাষা ও আচরণে ছিল সৌন্দর্য, দৃঢ়তা এবং আত্মমর্যাদাবোধের স্পষ্ট প্রকাশ।

১৯৬০ সালে বেগম খালেদা জিয়া তৎকালীন সেনাবাহিনীর চৌকস কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকো ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় অবস্থানকালে চিকিৎসার অভাবে মাত্র ৪৫ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। সে সময় খালেদা জিয়াও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে গৃহবন্দি ছিলেন।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে আগমন আকস্মিক হলেও দেশের প্রয়োজনে তা হয়ে ওঠে অনিবার্য। ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের শাহাদাতের পর বিএনপি ও সরকার গভীর সংকটে পড়ে। দলের ভেতরে ও বাইরে ষড়যন্ত্র তীব্র হয়ে ওঠে। সেই সংকটময় সময়ে দল ও নেতাকর্মীদের মনোবল দৃঢ় রাখতে ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির সদস্যপদ গ্রহণ করেন। এর মধ্য দিয়েই শুরু হয় তার দীর্ঘ, ক্লান্তিহীন ও সংগ্রামী রাজনৈতিক পথচলা। পরবর্তীতে তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং কাউন্সিলের মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।’’ 

‘‘প্রায় ৪৩ বছরের রাজনৈতিক জীবনের ৪১ বছরই তিনি বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বে থেকে দলকে সংগঠিত, সুসংহত ও শক্তিশালী করেছেন। দীর্ঘ নয় বছরের স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের পর ১৯৯১ সালে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। পরবর্তীতে তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী।’’

গণতন্ত্রের প্রতি তার অটল বিশ্বাস এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামের কারণে দেশ-বিদেশে তিনি ‘গণতন্ত্রের মাতা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। নারী শিক্ষা বিস্তার, খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা কর্মসূচি, মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবাসীদের কল্যাণে পৃথক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠাসহ বহু যুগান্তকারী উদ্যোগ তার শাসনামলের উল্লেখযোগ্য অর্জন হিসেবে উল্লেখ করেন নজরুল ইসলাম খান।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য অভিযোগ করে বলেন, ‘‘বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক সক্ষমতা এবং দেশের স্বার্থে আপসহীন অবস্থানের কারণেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার তাকে ব্যক্তি শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে। মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে কারাবন্দি করা হয়।’’

‘‘খালেদা জিয়া পায়ে হেঁটে কারাগারে প্রবেশ করেছিলেন, কিন্তু কারাগার থেকে বের হন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায়। কারাবাস এবং পরবর্তী গৃহবন্দিত্বের দীর্ঘ সময়ে তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হয়নি। দেশ-বিদেশের চিকিৎসকদের মতে, সময়মতো বিদেশে চিকিৎসা পেলে হয়তো তার জীবন রক্ষা করা সম্ভব হতো।’’ 

রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই তাকে পরিকল্পিতভাবে চিকিৎসাবঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “এই মৃত্যুর দায় থেকে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা কখনও মুক্তি পাবে না।”

বক্তব্যের শেষে নজরুল ইসলাম খান আরো বলেন, ‘‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ লক্ষ কোটি মানুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও দোয়া নিয়ে বিদায় নিচ্ছেন। তিনি রেখে গেলেন এক মহীয়সী নারী, আপসহীন রাজনীতিবিদ এবং দেশপ্রেমী রাষ্ট্রনায়কের অনন্য দৃষ্টান্ত, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের রাজনীতিবিদদের জন্য অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।’’

খালেদা জিয়ার একটি উক্তি স্মরণ করে তিনি বলেন, “দেশের বাইরে আমার কোনো ঠিকানা নেই। বাংলাদেশই আমার ঠিকানা।’ এই দেশের মাটিতেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত হচ্ছেন, তার শহীদ স্বামীর পাশে।’’

তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি গণতন্ত্র, শান্তি, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে—এই প্রত্যাশা রেখে বক্তব্য শেষ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

উল্লেখ্য, এরপর ৩টা ৫ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনসংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে খ্যাত বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজা পড়ান জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক।

জানাজা শেষে বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর জিয়া উদ্যানে স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়