ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

মাল্টায় আলতাব হোসেনের ভাগ্য বদলের স্বপ্ন

এইচ মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ৭ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১২:০৭, ৭ জুলাই ২০২১
মাল্টায় আলতাব হোসেনের ভাগ্য বদলের স্বপ্ন

মাল্টা ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ একটি ফল। রসালো ফলের মধ্যে এটি অন্যতম। এফল চাষ করে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন নরসিংদীর আলতাব হোসেন।

রায়পুরা উপজেলার মরজাল ইউনিয়নের দুকুন্দির চর গ্রামের হাজী ফজলু মিয়ার ছেলে আলতাব হোসেন। একবছর দুই মাস আগে লাগানো তার গাছগুলোতে এখন থোকায় থোকায় ঝুঁলছে মাল্টা।

বাজারে চাহিদা ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লাভজনক হওয়ায় এ ফল চাষে তিনি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আগে তিনি মাল্টার পাশাপাশি নিজের জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করে আসছেন।

মাল্টা চাষি আলতাফ হোসেন ২০২০ সালে মার্চ মাসের দিকে প্রথমে তার এক বন্ধুর পরামর্শে পরীক্ষামূলকভাবে নিজ উদ্যোগে এ মাল্টা চাষে মনোনিবেশ করেন। পরে একই এলাকার মরজাল নার্সারি থেকে বারি মাল্টা (১) জাতের মাল্টার চারা প্রতিটি ১০০ টাকা করে ১১০টি চারা এনে তার ১১ শতাংশ জমিতে রোপণ করেন। পাশাপাশি এ জমিতে সাথী ফসল হিসেবে মরিচ ও বেগুনের চাষও করেন।

এবছর মরিচ ও বেগুন ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। তবে মাল্টা চাষে খুঁটিসহ বিভিন্ন উপকরণে তার সবমিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা।

মাল্টার চারা লাগানোর পর নিবিড় পরিচর্যার কারণে ১৪ মাসের মাথায় প্রতিটি গাছে ফলন এসেছে অনেকটা চোখে পড়ার মতো। আর এই মাল্টা চাষের মধ্য দিয়ে নিজের ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাগানের প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুঁলে আছে সবুজ রঙের মাল্টা। আকারগুলো সুন্দন ও বেশ বড়।

মাল্টা চাষি আলতাব হোসেন বলেন, মাল্টা আমাদের দেশে চাষ উপযোগী নয়, তারপরেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনেকেই এফলের চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। আর সেই অনুপ্রেরণা থেকেই আমার মাল্টা চাষের দিকে আগ্রহ হওয়া। দেশে উৎপাদিত মাল্টা বিদেশ থেকে আমদানি করা যে কোনো মাল্টার চেয়ে রসালো, সুস্বাদু ও মিষ্টি।

তার রোপণ করা ১১০টি গাছের মধ্যে মাত্র ৬টি গাছ বাদে সবকয়টি মাল্টা গাছেই ফলন আসছে। একটি মাল্টা গাছে ১০০ থেকে ১২০টি ফল ধরেছে। যা ওজনে ১৫ থেকে ২০ কেজির মতো হতে পারে। তাই তিনি ৮০ টাকায় কেজি দরে বিক্রি করতে পারলেও এবছর ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী।

এদিকে আলতাব হোসেনের এই মাল্টা বাগান দেখে আশেপাশের অনেক কৃষক এখন এ জাতের মাল্টা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। অনেকে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে উদ্যোগী হচ্ছেন এফল চাষে।  

আলতাব হোসেন আরও বলেন, এ বাগাটি আমি ব্যক্তি উদ্যোগে করেছি। তবে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগিতায় আমি আরও ১১ শতাংশ জায়গায় আরেকটি বাগন করবো। কৃষি অফিস আমাকে বিনামূল্যে মাল্টা চারাসহ উপকরণ দেবে বলে জানিয়েছে।

মাল্টা চাষে আগ্রহী ওই গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকায় মাল্টা চাষ হয়, তা আগে জানতাম না। এখন মাল্টা বাগান করবো বলে চিন্তা করছি। আগে থেকে আমরা এই ফলটির চাষাবাদের সঙ্গে তেমন পরিচিত ছিলাম না। তাই আলতাবের বাগানের ফলন দেখে এখন এলাকার অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

রায়পুরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বনি আমিন খান বলেন, দেশে মাল্টা চাষ করে অনেকের যে সফলতা এসেছে, তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। তবে রায়পুরা উপজেলার মধ্যে মরজাল ইউনিয়নটি পাহাড়ি লাল মাটি অধ্যুষিত এলাকায়। তাই ওই এলাকাটি মাল্টা চাষে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা ওই ইউনিয়নের দুকুন্দির চর গ্রামে প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি প্রদর্শনী স্থাপনের কাজ হাতে নিয়েছি। তবে অচিরেই এ গ্রামটিকে আমরা মাল্টা গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করবো। তাছাড়াও রায়পুরা উপজেলায় যারা মাল্টা চাষ করেছেন দেখা গেছে, এখানকার মাল্টা অন্যান্য এলাকার মাল্টার চেয়ে অনেকটা মিষ্টি।

নরসিংদী/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়