ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ড্রাগন ফল চাষে আব্দুল্লাহর সাফল্য

মোঃ মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০০, ১৬ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১১:০১, ১৬ জুলাই ২০২১

ড্রাগন ফল। কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের মানুষ জানতো এটি বিদেশি ফল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দেশে এ ফলের চাষ এতটা বেড়েছে যে, এখন এটি দেশি ফল বলেও পরিচিত। হবিগঞ্জেও ড্রাগনের চাষ হচ্ছে। বর্তমানে জেলার কৃষি বিভাগের মাধ্যমে এ ফলের চাষ ছড়িয়ে দিতে নানাভাবে চেষ্টা চলছে। দেওয়া হচ্ছে উৎসাহ। এতে কৃষকরা ফলটি চাষে মনোযোগী হচ্ছেন।

ইতোমধ্যে জেলার কয়েকটি স্থানে চাষ শুরু হয়েছে। যারাই এ ফলটি চাষ করেছেন, সবাই সফল। প্রতি মৌসুমে মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ড্রাগন ফল পাওয়া যায়। সঠিক পরিচর্যায় প্রতিটি গাছ ১০ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত ভালো ফলন দেবে। জেলা কৃষি বিভাগ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, টক-মিষ্টি ও মিষ্টি স্বাদের ড্রাগন চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন জেলার বাহুবল উপজেলার ছিলামী গ্রামের কৃষক আব্দুল্লাহ মিয়া।

তিনি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীমের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর মাত্র ১৫ শতক জমিতে গড়ে তুলেন শখের ড্রাগন ফলের এক ছোট্ট বাগান। করোনার মধ্যেও তিনি প্রথম দফা ফল বিক্রি করেছেন প্রায় ২২ হাজার টাকা। চাষাবাদে তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার টাকা। প্রথম বছরের শুরুতেই তিনি খরচ বাদ দিয়ে ৬ হাজার টাকা আয় করেছেন।

বাকি সময়ে কয়েক লাখ টাকার আয় হবে জানিয়ে কৃষক আব্দুল্লাহ মিয়া বলেন, পাশাপাশি এলাকার কৃষকদের মাঝে এই ফলের চাষ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। এলাকার প্রায় বাড়ির আঙ্গিনায় শোভা পাচ্ছে ড্রাগন ফল গাছ। তাদের গাছ থেকেও ফল উৎপাদন হচ্ছে। ২৬টি পাকা পিলারে ড্রাগন বাগানের সূচনা করি মাত্র ১০৪টি চারা দিয়ে। পরিচর্যার পর দেড় বছরে গাছে গাছে ফল শোভা পায়। এরমধ্য থেকে বিক্রির পাশাপাশি নিজেদের খাবার চাহিদাও পূরণ হচ্ছে। 

পরিদর্শন করে দেখা গেছে, তার ড্রাগন বাগান দূর থেকে দেখলে মনে হয় সযত্নে ক্যাকটাস লাগিয়েছেন কেউ। একটু কাছে যেতেই দেখা যাবে অন্য রকম দেখতে ফুল ও এক লাল ফলে ভরা বাগান। প্রতিটি গাছে রয়েছে ফুল, মুকুল এবং পাকা ড্রাগন। এ দেশের আবহাওয়া লাল, হলুদ এবং সাদা ড্রাগন ফল চাষের জন্য বেশ উপযোগী। বাগানে তিনি গড়ে তুলেছেন লাল ড্রাগনের বাগান।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন,  ড্রাগন লতানো কাটাযুক্ত গাছ, যদিও এর কোনো পাতা নেই। গাছ দেখতে অনেকটা সবুজ ক্যাকটাসের মতো। ড্রাগন গাছে শুধু রাতে সপরাগায়ন হয়ে ফুল ফোটে। ফুল লম্বাটে সাদা ও হলুদ রঙের হয়। তবে মাছি, মৌমাছি ও পোকা-মাকড় পরাগায়ন ত্বরান্বিত করে। কৃত্রিম পরাগায়নও করা যায়। এ গাছকে ওপরের দিকে ধরে রাখার জন্য সিমেন্টের কিংবা বাঁশের খুঁটির সঙ্গে ওপরের দিকে তুলে দেওয়া হয়। ড্রাগনের চারা বা কাটিং রোপণের ১০ থেকে ১৫ মাসের মধ্যেই ফল সংগ্রহ করা যায়।

কৃষক আব্দুল্লাহ মিয়া বলেন, গাছে উৎপাদিত ফল বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে না। এলাকার ক্রেতারাই বাড়ি এসে ৫০০ টাকা কেজিতে ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করতে পারছি না। তাই আরও কিছু জমি আবাদ করে ড্রাগনের ফলন বৃদ্ধি করতে চাই। আমাকে সার্বিকভাবে সহায়তা করছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম। অনেকেই আমার কাছে চারা কেনার জন্য আসছে। এতে বুঝতে পারছি, এ ফলটি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন লোকজন।

বাহুবল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল বলেন, মার্চ থেকে মে মাসে ফুল আসে আর শেষ হয় নভেম্বর মাসে। ফুল আসার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। নভেম্বর মাস পর্যন্ত ফুল ফোটা এবং ফল ধরা অব্যাহত থাকে। এক একটি ফলের ওজন ২৫০ গ্রাম থেকে এক কেজিরও বেশি হয়ে থাকে। একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে ১০০ থেকে ১৩০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে একটি গাছ থেকে ২০ বছর বয়স পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব।

উপজেলার দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম বলেন, জেলা ও উপজেলার স্যাররা আমাকে নির্দেশ দিলেন ড্রাগন ফলের চাষ করানোর জন্য। কিন্তু কৃষক খুঁজে পাচ্ছিলাম না। অবশেষে কৃষক আব্দুল্লাহ মিয়াকে পরামর্শ দেই। তিনি আমাকে বললেন, যাইহোক শখের বসে ড্রাগনের ছোট্ট একটি বাগান করবেন। এখানে লাভ বা লোকসান হতে পারে। এখন তিনি ফল পাচ্ছেন। লাভের মুখ দেখছেন। শুধু তাই নয়, ড্রাগন বাগানের ঘাস দিয়ে ছাগল পালন করছের এ কৃষক। ক্ষেতের আইলে রোপণ করেছেন পেঁপে গাছ।

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. তমিজ উদ্দিন খান  বলেন, আব্দুল্লাহ মিয়ার চাষের সফলতা দেখে ড্রাগন ফলের চাষ করতে আগ্রহ তৈরী হচ্ছে অন্যান্য কৃষকের মাঝে। বিদেশি এ ফল দেশের মাটিতে চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এ ফল চোখকে সুস্থ রাখে, শরীরের চর্বি কমায়, রক্তের কোলেস্টেরল কমায়, উচ্চ রক্তচাপ কমানোসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এফল চাষে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।

হবিগঞ্জ/মাহি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়