ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

মায়ের থেকে শিখে ২ বোনের নকশী পিঠার ব্যবসা

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ২৯ জুলাই ২০২১   আপডেট: ০৯:২৩, ২৯ জুলাই ২০২১
মায়ের থেকে শিখে ২ বোনের নকশী পিঠার ব্যবসা

একসময় বিয়ে-শাদিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নকশী পিঠা ছাড়া জমে উঠতো না। সময়ের ব্যবধানে সেই নকশী পিঠা হারিয়ে যাচ্ছে। কেউ বলছেন, যান্ত্রিক জীবনে সময়ের স্বল্পতা, আবার কেউ বলছেন, মানুষের শখ-আহলাদের পরিবর্তন। এমন পরিস্থিতিতে পুরনো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে গাজীপুরের আফরিনা তানজিন উর্মি ও মুন্নী আক্তার নকশী পিঠা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

তারা দুই বোন প্রতিষ্ঠা করেছেন গাজীপুর শহরের ছায়াবিথী এলাকায় ‘শঙ্খনীল পিঠা ঘর’। নকশী পিঠা বানানোর আর কোনো ঝামেলা নেই। অনুষ্ঠানকে সুন্দর করতে পিঠা নিয়ে আপনার বাসায় হাজির হওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে এই প্রতিষ্ঠানটি। প্রতি পিঠার মূল্য ১৫ টাকা থেকে ও ২৫ টাকা পর্যন্ত রাখছে তারা।

নকশী পিঠা দেশের এক সমৃদ্ধ ঐতিহ্য, লোকজ খাবার। প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে নানা ধরনের পিঠা তৈরি ও তা দিয়ে অতিথি আপ্যায়নের রীতি। পিঠা শুধু লোকজ খাবারই নয়, গ্রামীণ শিল্প হিসেবেও পরিচিত। একেকটি পিঠার একেক গড়ন হয়ে থাকে। ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ। পিঠা তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে আছে এ দেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতির মেলবন্ধন।

গাজীপুরের শ্রীপুর, কালীগঞ্জ, কাপাসিয়া ও কালিয়াকৈরে প্রতিটি গ্রামেই রয়েছে পিঠা তৈরির ঐতিহ্য। বিশেষ করে পৌষ ও অগ্রহায়ণ মাসে প্রতিটি বাড়িতেই পিঠা তৈরির ধুম পড়ে যায়। গ্রামে শত রকমের পিঠা দেখা গেলেও কারুকাজ পূর্ণ পিঠার মধ্যে রয়েছে নকশী পিঠা। এর গড়নটিই ভিন্ন রকম সুন্দর। নকশী পিঠার পরতে পরতে লুকিয়ে থাকে পিঠাশিল্পীদের বিশেষ দক্ষতা।

নকশী পিঠাকে অনেকেই ফুল পিঠা হিসেবে চিনে থাকেন। তাই অধিকাংশ গ্রামেই ফুল পিঠা নামে পরিচিত। কেননা, এ পিঠা দেখতে নকশাদার ফুল বা আলপনার মতো। পিঠার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ও আকর্ষণীয় হলো নকশী পিঠা।

গাজীপুরের পিঠাশিল্পী আফরিনা তানজিন বলেন, মায়ের হাত ধরেই শেখা পিঠার নকশা। নকশী পিঠার সৌন্দর্য মূলত প্রস্তুতকারীর শিল্পবোধে, সে যা চায়, সে নকশাই ফুটিয়ে তুলতে পারে। সে অনুযায়ী একেকটা নাম হয়ে যায়। নকশা তোলার জন্য ব্যবহার করা হয় তীক্ষ্ণ খেজুর কাঁটা, বেলের কাঁটা ও বাঁশের ধারাল চাছ, ছিলা বা বাকল। অবশ্য এখন নকশী পিঠা বানানোর জন্য বাজারে বিশেষ ধরনের যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়। যেগুলো খেজুর কাঁটা বা বেলের কাঁটার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়।

নকশী পিঠা তৈরি করা হয় যেভাবে

উপকরণসমূহ: আমি এখানে আমার পরিমাণ মতো উপকরণ ব্যবহার করলাম। আপনারা চাইলে উপকরণের পরিমাণ বাড়িয়ে করতে পারবেন। তবে প্রস্তুত প্রণালী একরকমই। ২৫০ গ্রাম চালের গুড়া বা ময়দা, ৪টি ডিম, ১০০ গ্রাম ডাল, ২ কাপ পরিমাণ বিস্কুট গুড়া, পরিমাণ মতো লবণ, ১ কাপ পরিমাণ চিনি।

প্রস্তুত প্রণালী: প্রথমেই একটি প্যানে ১ কাপ পরিমাণ পানি ফুটিয়ে নিতে হবে, তারমধ্যে চালের গুড়া বা ময়দা ও লবণ ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। পানির সাথে ময়দা মিক্সিং করে হালকা গরম অবস্থায় ডিম দিয়ে ভালোভাবে হাত দিয়ে মাখাতে হবে। ডিম দিয়ে মাখানোর পরে এর সাথে বিস্কুট গুড়া ও সাথে ডাল দিয়ে মিশিয়ে দিতে হবে। এমনভাবে মেশাতে হবে, যাতে কোনো উপকরণ আলাদাভাবে না বোঝা যায়। এমনভাবে নিতে হবে, যাতে হাতে ধরে নকশা করা যায়।

গাজীপুর/মাহি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়