ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

হাতপাখায় দারিদ্র্য জয় 

সিদ্দিক আলম দয়াল, গাইবান্ধা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৯, ২ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ১৪:১৬, ২ অক্টোবর ২০২১
হাতপাখায় দারিদ্র্য জয় 

গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের দুটি গ্রামের নাম আরাজি ছান্দিয়াপুর ও খামারিপাড়া। সেখানে দুই শতাধিক পরিবারের বসবাস। এই গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির নারী- পুরুষ হাতপাখা তৈরির কাজ করেন। তাই গ্রাম দুটি হাতপাখার গ্রাম হিসেবে পরিচিত। 

আরাজি ছান্দিয়াপুর গ্রামের বাসিন্দা শামসুল ইসলাম ও তার স্ত্রী রোকেয়া বেগমসহ আশেপাশের রেখা রানী, শরিফা বেগম, দুলালী বেগম, শেমা বেগম, সাহেরা বেগম, আনোয়ারা বেগম এবং গোলেস্তা বেগম দিনরাত পাখা তৈরির কাজ করেন। সুই-সুতায় তৈরি পাখা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ও শহরের পাইকারি দোকানে বিক্রি করেন। আবার কেউ আরেকটু দাম বেশি পাওয়ার আশায় শহর থেকে অন্য শহরে ফেরি করেন। গরমে তৈরি ও বিক্রি দুটোই বেশি হয়। 

এলাকার মেম্বার আব্দুল লতিফ বলেন, জামালপুর ইউনিয়নের বুজরুক ও রসুলপুর ইউনিয়নের দুটি গ্রাম পাখার গ্রাম নামে পরিচিতি পেয়েছে। অভাব ঘোচাতে হাসিমুখে সমান তালে পাখা তৈরি করছেন এ গ্রামের নারী-পুরুষরা। 

সারাদিন বাঁশ কাটা, চাক তৈরি, সুতা গোছানো, কাপড় কাটা, আবার কেউ সুই দিয়ে সেলাই করে রঙ, বে-রঙের ডিজাইন তৈরি করছেন। বছর বছর উত্তপ্ত আবহাওয়া ও অতিরিক্ত গরম বৃদ্ধিতে হাতপাখার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তাই হাতপাখায় স্বপ্ন দেখেছেন তারা।

প্রতিদিন ১২০০ থেকে ১৫০০ পর্যন্ত হাতপাখা তৈরি হয় এ গ্রামে। প্রতিটি পাখা তৈরি করতে রঙ বে-রঙের সুতা, বাঁশের হাতল, কাপড় ও পারিশ্রমিকসহ রকম ভেদে প্রায় ১৭ থেকে ৪০ টাকা খরচ হয়। 

পাখা বাসায় পাইকারি এবং বিভিন্ন হাট-বাজারে, দোকানে বিক্রি করা হয় ৫০ থেকে ১০০ টাকায়। আগে এ গ্রামে অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। কিন্তু এখন শীত- গরম সবসময় তৈরি হয় পাখা। বেকার বসে থাকতে হয় না কাউকে। 

১৫/২০ বছর ধরে এই গ্রামে পাখা তৈরি শুরু হয়। চলছে অনবরত। যে যত কাজ করবেন, তার তত লাভ। এই পাখা বিক্রির টাকায় ফিরেছে সচ্ছলতা। সংসার, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াসহ অন্য সব খরচ আসে এ পাখা বিক্রির আয় থেকেই। হাতপাখা বিক্রি করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন এ গ্রামের অনেকেই। জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে এখানকার মানুষ পাখা তৈরি শুরু করলেও রয়েছে বর্ণালী শিল্পকর্মের ছোঁয়া। বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ট মানুষ এখনো হাতপাখার উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। আর সেই চাহিদার অনেকটাই পূরণ করছে এই পাখার গ্রাম। 

কারিগর আছমা খাতুন বলেন, দিনভর পাখা তৈরি করি আর আমার স্বামী তা বিক্রি করেন। সংসারের কাজ আর পাখা তৈরির পর হাতে সময় থাকে না। তবে, বাড়তি আয় করছি। ভালো চলছে সংসার। 

রসুলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল করিম দুলু বলেন, এই গ্রাম দুটো নিয়ে আমরা গর্ব করি। এখানকার নারী-পুরুষ কেউ বেকার বসে থাকেন না। তাই তাদের পরিবারে অভাব-অনটন নেই। 

গাইবান্ধা বিসিকের সহকারী মহা ব্যবস্থাপক রবিন্দ্র চন্দ্র রায় বলেন, হাতপাখা তৈরি ও বাজারজাতকরণ অথবা বিপপণ ব্যবস্থা তৈরিতে সহযোগিতার প্রয়োজন হলে করা হবে। প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ ও সহজে ঋণ দানের ব্যাপারে চেষ্টা করা হবে। 

/মাহি/ 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়