ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ফ্রিল্যান্সিং করে লাখ টাকা আয় সায়েমের

আমিরুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২৮ নভেম্বর ২০২১   আপডেট: ০৬:২২, ২৮ নভেম্বর ২০২১
ফ্রিল্যান্সিং করে লাখ টাকা আয় সায়েমের

অদম্য ইচ্ছা বুকে ধারণ করে নিজের লালিত স্বপ্ন পুরণে ঝুঁকে পড়েন ইন্টারনেটে। প্রশিক্ষণ ছাড়াই সারাদিন গুগল ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন সাইট ঘেটে ঘেটে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ধারণা রপ্ত করতে থাকেন আবু সায়েম নামের রংপুরের এক তরুণ। ইন্টারনেটে ফ্রিল্যান্সর হিসেবে কাজ করে বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে এখন তিনি প্রতি মাসে প্রায় লাখ টাকা আয় করছেন।

সায়েম এখন শুধু নিজে নন, প্রত্যন্ত এলাকা থেকে তিনি ফ্রিল্যান্সিংয়ে অন্যদেরও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তার দেখানো পথে হেঁটে এলাকার অনেক তরুণ-তরুণী সাবলম্বী হয়েছেন। এখন তাদের অনেকেই দেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠানে ফ্রিল্যান্সর হিসেবে কাজ করছেন।

সায়েম রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের দোলাপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল আউয়ালের ছেলে। তার বাবা ছিলেন স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম ছিলেন। মা আরজিনা বেগম গৃহণী। চার বোন ও দুই ভাইয়ের সংসারে সায়েম পঞ্চম। বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের জন্য কিছু করার ইচ্ছে থেকেই সায়েম ঝুঁকে পড়েন ফ্রিল্যান্সিংয়ে।

সায়েম জানান, তিনি ২০১৬ সালে ইন্টারনেটে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন। শুরুর অভিজ্ঞতাটা খুব ভালো ছিল না। নিভৃত গ্রামে একবুক স্বপ্ন নিয়ে নিজের নামে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেন। তখন প্রশিক্ষণার্থী সংখ্যা ছিল মাত্র ৫ জন। নেটওয়ার্ক সমস্যা আর প্রশিক্ষণার্থী সংখ্যা কম থাকায় কিছুটা হোচট খেতে হয় তাকে। তবে হাল ছাড়নেনি তিনি। পড়াশুনাসহ ব্যক্তিগত কারণে পরের বছরই শহরে পা রাখেন সায়েম। এরপর আর তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি। দীর্ঘ ছয় বছরের কঠোর পরিশ্রম করে এখন তিনি সফল।

২০১৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে উত্তীর্ণ হন সায়েম। ২০১৫ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় সফলতার সঙ্গে পাশ করেন। কোনো প্রশিক্ষক ছাড়াই ফ্রিল্যান্সিং শেখা সায়েমের ইচ্ছা পড়াশুনা শেষ করে চাকরি হিসেবে শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নেওয়া।  

সায়েম বলেন, ‘পরিবারে আমরা দুই ভাই ও চার বোন। এরমধ্যে আমার দায়িত্ব একটু বেশি। পড়াশুনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং থেকে আমার আয়ের পথ খুলেছে। এখন মাসে আয় হয় লাখ টাকার কাছাকাছি। তবে বছর শেষে প্রায় ১০ লাখ আয় করছি। ফ্রিল্যান্সংয়ের আয় থেকে পরিবারের দেখভাল ও ছোট ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছি।’

বেকারত্ব দূরীকরণে ভূমিকা রাখার আগ্রহের কথা জানিয়ে এই তরুণ বলেন, ‘বেকারত্ব একটা অভিশাপ। আমি চাই এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ফ্রিল্যান্সিং শিখে নিজেদের আয়ের ব্যবস্থা নিজেরাই করুক। বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে ডিজিটালাইজ করার যে উদ্যোগ গ্রহন করেছে সেই উদ্যোগে উদ্যোগী হয়ে আমি কাজ করে যাচ্ছি। পড়ালেখার পাশাপাশি নিজেরা কিছু করতে চাইলে ফ্রিল্যান্সিং সুবিধা নেওয়া উচিত। প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে কাজ করতে পারলে বেকারত্ব দূরী করা সম্ভব।’

সায়েম রংপুর নগরীতে নিজের নামে গড়ে তুলেছেন দুটি ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখান থেকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন), লিড জেনারেশন, সিপিএ মার্কেটিং, কন্টেন্ট মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংসহ আউটসোর্সিংয়ে বিভিন্ন মাধ্যম সম্পর্কে তরুণ-তরুণীরা কাজ শিখছেন।

বর্তমানে সায়েম একাডেমিতে অর্ধশত শিক্ষার্থী ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোসিং এর ওপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন দেড় হাজেরের বেশি তরুণ-তরুণী। 

ফ্রিল্যান্সিং পেশা বিষয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুক বলেন, 'আউটসোর্সিং বা ফ্রিল্যান্সিং পেশাটি বাংলাদেশের দক্ষজনশক্তি তৈরি করার একটি বড় খাত হিসেবে আগমীতে বিবেচিত হবে। তাই এই খাতকে সঠিকভাবে মূল্যায়িত করে দখল করা জরুরি। এই পেশার কারণে দেশে শিক্ষিত বেকার যুবকের হার কমবে ও সায়েমের মতো হাজারো মানুষ স্বাধীনভাবে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র পাবে। এই পেশাটিকে সামাজিকভাবে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া দরকার।’

রংপুর/ মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়