ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

সরিষা ক্ষেতে মধুর হাসি 

সেলিম আব্বাস, জামালপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৮, ২১ ডিসেম্বর ২০২১  
সরিষা ক্ষেতে মধুর হাসি 

মাঠে মাঠে এখন সরিষার হলুদ ফুলের অপরূপ দৃশ্য। পুরো মাঠ যেন ঢেকে আছে সুন্দর এক হলুদের চাদরে। তাই এই সুযোগে জামালপুরের বিভিন্ন উপজেলায় মৌ চাষিরাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সরিষার ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহে।

ফসলি জমির পাশে পোষা মৌমাছির শত শত বাক্স নিয়ে হাজির হয়েছেন মৌয়ালরা। ওইসব বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলের মাঠে।

জেলার মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলের মাঠ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

দেখা যায়, চাষিরা পছন্দের একটি সরিষা ক্ষেতের পাশে খোলা জায়গায় চাক ভরা বাক্স ফেলে রাখেন। একেকটি বাক্সে মোম দিয়ে তৈরি ছয় থেকে সাতটি চাকের ফ্রেম রাখা হয়। আর তার ভেতর রাখা হয় একটি রানি মৌমাছি। রানির কারণে ওই বাক্সে মৌমাছিরা আসতে থাকে। ফুল থেকে মধু এনে বাক্সের ভেতরের চাকে জমা করে। আর এই চাক থেকেই মধু সংগ্রহ করেন মৌমাছি চাষিরা। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মৌ-চাষিরা এসব চাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন। এ থেকে চাষিরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, আবার দূর হচ্ছে বেকারত্ব। সরিষা ফুলের মধু খাঁটি ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানসহ বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জের মধু সংগ্রাহক উল্লাহপাড়া থানার বাসিন্দা মৌ চাষি সজীব জানান, মধু সংগ্রহের জন্য স্টিল ও কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় বাক্স। যার উপরের অংশটা কালো রঙের পলিথিন ও চট দিয়ে মোড়ানো থাকে। বাক্সের ভেতরে কাঠের তৈরি সাতটি ফ্রেমের সঙ্গে মোম দিয়ে বানানো বিশেষ কায়দায় লাগানো থাকে এক ধরনের সিট। পরবর্তী সময়ে বাক্সগুলো সরিষা ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়।

পাশাপাশি বাক্সগুলোর ভেতরে দেওয়া হয় রানি মৌমাছি। যাকে ঘিরে আনাগোনা করে হাজারো পুরুষ মৌমাছি। রানির আকর্ষণে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা। একটি রানি মৌমাছির বিপরীতে প্রায় তিন থেকে চার হাজারের মতো পুরুষ মৌমাছি থাকে একেকটি বাক্সে। 

সিরাজগঞ্জ আরেক মৌ চাষি হাসমত আলী বলেন, আমরা সরিষা ক্ষেত থেকে বছরে চার মাস মধু সংগ্রহ করে থাকি। অন্য আট মাস কৃত্রিম পদ্ধতিতে চিনি খাইয়ে মৌ মাছিদের পুষে রাখি। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সরিষা থেকে মধু সংগ্রহের উপযুক্ত সময়।

মধু চাষি রাইহান বলেন, আকার ভেদে একটি বাক্সে ২০ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যায়। এখানে মৌ চাষের বিশেষ বাক্স কলনী রয়েছে ১০০টি। প্রতিটি কলনীতে খরচ হয় আট থেকে ১০ হাজার টাকা। 

গাইবান্ধা সদরের বাসিন্দা মৌ চাষি সামিউল হক বলেন, আমরা কয়েকজন মিলে ইসলামপুরে মধু সংগ্রহ করতে এসেছি, সরিষা ক্ষেতে ৫০০টি বাক্স বসিয়েছি, এসব বাক্স থেকে প্রতি আট দিনে গড়ে প্রায় ১৫০০ কেজির মতো মধু পাওয়া যায়। আর প্রতি কেজি মধু বিক্রি করি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে থেকে জানা যায়, সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির চাষ হলে সরিষার ফলন ১০ ভাগ বেড়ে যায়। ক্ষেত থেকে বিনা খরচে মধু সংগ্রহ লাভজনক ব্যবসা। এতে মৌমাছি ব্যবসায়ী যেমন একদিকে মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে ক্ষেতে মধু চাষ করায় সরিষার ফলনও বাড়ছে।

/মাহি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়