ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মিঠাপুকুরের শসা যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে, দামে খুশি কৃষকরা

রংপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০১, ১৩ মে ২০২৩  
মিঠাপুকুরের শসা যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে, দামে খুশি কৃষকরা

রংপুরের মিঠাপুকুর-পীরগঞ্জ উপজেলা উত্তরবঙ্গের সবজি উৎপাদনের শীর্ষে। এই দুই উপজেলার উৎপাদিত সবজি রংপুর অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে যায় দক্ষিণাঞ্চলে। অন্যবারের চড়া দামেও এবার মিঠাপুকুর এলাকার হাজারের অধিক চাষির উৎপাদিত শসা যাচ্ছে ঢাকা, খুলনা, চিটাগাংসহ দক্ষিণাঞ্চলের বাজারে। ভরা মৌসুমে দামের সঙ্গে চাহিদা থাকায় খুশি কৃষরাও। কৃষি বিভাগ বলছে, এবার জেলায় ২২৫ হেক্টর জমিতে শসা চাষাবাদ হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১১ মে) দুপুরে সরেজমিন মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নের তারাগঞ্জে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকের উৎপাদিত শসা কিনে ব্যবসায়ীরা প্রক্রিয়াজাত করে ট্রাক যোগে পাঠাচ্ছেন ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের সবজির পাইকারি আড়তে। তাজা আর সতেজ রাখতে পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করাসহ বস্তায় থরে থরে সাজিয়ে রাখতে ঘাম ঝরাচ্ছে শ্রমিকরা।

আরো পড়ুন:

তারাগঞ্জের শসা ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম দীর্ঘ এক যুগ ধরে মৌসুমী ব্যবসা করে আসছেন তিনি। চিটাগাংয়ে ট্রাক যোগে শসা বিক্রির উদ্দেশে এবারও কিনে ট্রাক লোড করছেন আমিরুল। শসার বাজার দিন দিন ঊর্ধ্বমুখী থাকার কথা জানিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, গত দুই দিন আগেও শসার দাম ছিল পাইকারি দরে ৮০০ থেকে সাড়ে ৮০০ টাকা মণ। আজ সেটি বৃদ্ধি পেয়ে কৃষকের কাছে কিনতে হচ্ছে ১০৫০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা মণ। প্রতি ট্রাকে ১৪ হাজার কেজি থেকে ১৫ হাজার কেজি করে শসা লোড করে ভাড়া আর শ্রমিক খরচ বাদেও ভালো ব্যবসার কথা জানান তিনি। 

শসার চাহিদার বিষয়ে তারাগঞ্জের এই ব্যবসায়ী বলেন, এখন শসার ভরা মৌসুম এই সময়ে গতবারের চেয়ে এবার তিনগুণ দাম ও চাহিদা বেশি। কৃষকের জমি থেকে অনেক কদর করে শসা কিনতে হচ্ছে। যা গতবারের চেয়ে চাহিদায় এবার উল্টো চিত্র। ভালো দামে অনেক খুশি চাষিরাও। 

শসা বিক্রি করতে আসা ওমর আলী নামের এক কৃষক বলেন, একদোন অর্থাৎ ২৪ শতক জমিতে হাইব্রিড শসা চাষ করেছেন তিনি। মধ্যবর্তী সময়েও ভালো দাম পেয়ে খুশি এই চাষি। সর্ব ১২০-১৩০ মণ শসা উৎপাদনের আশা তার। এই জমিতে তার খরচ হয়েছে ২০-২২ হাজার টাকা। চলমান দাম থাকলে খরচ বাদে লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন এই কৃষক। 

এরশাদ আলী নামের আরেক কৃষক বলেন, ‘গতবার শসা আবাদ করেছিলাম দাম আশানুরূপ পাইনি। এবার ১২ শতাংশ জমিতে চাষাবাদ করে দাম ভালো পাচ্ছি। কে জানত এবার শসার ভালো দাম থাকবে। অন্যবারের চেয়ে এবার শসার আবাদে রোগবালাইও কম। পাশাপাশি ফলনও অনেক ভালো। ফলন আর দামে তার ১২ শতাংশ জমিতে ৩০-৪০ হাজার টাকা লাভের স্বপ্ন তারও। 

সরেজমিন কৃষকের জমি আর রংপুরের সবজি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ে জমিতে শসা বিক্রি করছে ২০-২৫ টাকা কেজি দরে। ব্যবসায়ী আর পাইকারদের হাত ঘুরে খুচরা বাজারে এই শসা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে।

চট্রগ্রাম লোহাগাড়া এলাকা থেকে শসা কিনতে আসা ব্যবসায়ী রাশেদ আলম বলেন, ‘এই অঞ্চলে শসা চাষ বেশি হয় বিধায় আমরা এখানে কিনতে এসেছি। এই এলাকার ব্যবসায়ীর কাছে পাইকারি ২৭ টাকা কেজি দরে শসা কিনেছি। চিটাগাংয়ে নিয়ে গিয়ে ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের কাছে ৩৮-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হবে। খুচরা বাজারে এটি আবার ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে।’

রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান জানান, চলতি সময়ে শসা হারভেস্ট প্রায় শেষের দিকে। এ বছর রংপুর জেলায় ২২৫ হেক্টর জমিতে শসার আবাদ হয়েছে। যার বেশিরভাগ উৎপাদন জেলার মিঠাপুকুর-পীরগঞ্জ উপজেলায়। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ১৫৫ মেট্রিক টন। তবে শসার ফলনে এবার সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে বলে জানান তিনি।

দামের বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, এবার শসা চাষে কৃষক ভালো লাভবান হচ্ছে। ভরা মৌসুমেও চাহিদা ভালো বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা। 
 

আমিরুল/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়