পুরাতন আসবাবপত্রের প্রাণকেন্দ্র কালীগঞ্জের নয়াবাজার
রফিক সরকার, কালীগঞ্জ (গাজীপুর) || রাইজিংবিডি.কম
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমুলিয়া ইউনিয়নের নয়াবাজার পুরাতন কাঠের আসবাবপত্রের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে
যেখানে একসময় কেবল সাপ্তাহিক কাঁচাবাজার বসত, সেখানে এখন প্রতিদিন বেচাকেনা হয় পুরাতন কাঠের আসবাবপত্র। গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের নয়াবাজার পুরাতন কাঠের আসবাবপত্রের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। দরজা-জানাল থেকে শুরু করে শোকেস এমনকি লোহার তৈরি জিনিসও বিক্রি হচ্ছে এখানে।
গাজীপুরের পাশাপাশি নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল এমনকি রাজধানী ঢাকা থেকেও ক্রেতারা ছুটে যান নয়াবাজারে। সাশ্রয়ী দামে গৃহসজ্জার স্বপ্নপূরণের ঠিকানা হয়ে উঠেছে এই বাজার।
দুই দশক আগে নয়াবাজারে যখন কাঁচাবাজারের পরিসর সংকুচিত হচ্ছিল, তখনই বাজারের এক কোণে কয়েকটি পুরাতন দরজা বিক্রির জন্য বসেন মেজবাহ উদ্দীন। তার হাত ধরেই এখানকার পুরাতন আসবাবের ব্যবসার গোড়াপত্তণ। পুরাতন জিনিস মানেই ফেলনা নয়, এই বিশ্বাসকে ব্যবসায় পরিণত করেছেন তিন।
নয়াবাজারে বর্তমানে ৫০টিরও বেশি কাঠের আসবাবের দোকান রয়েছে। সবকটি দোকানই জমজমাট থাকে। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে আসবাবপত্র বেচাকেনা।
মেজবাহ উদ্দীন বলেন, “প্রথমে শুধু দরজা বিক্রি করতাম। ধীরে ধীরে বুঝলাম, মানুষ চায় সাশ্রয়ী, কার্যকর সমাধান। সেই ভাবনা থেকেই পুরাতন জানালা, চৌকাঠ, টিন, খাট-চেয়ার এসবও সংগ্রহ করতে থাকি।” এখন তার দোকানে প্রায় সব ধরনের কাঠের আসবাবপত্রই পাওয়া যায় তাও তুলনামূলকভাবে অর্ধেক বা তারও কম দামে।
বাজারের অপর ব্যবসায়ী মাহতাব দেওয়ান বলেন, “শুরুতে আমরা নিজেরাও সন্দিহান ছিলাম। ভাবতাম, পুরাতন জানালা বা খাট কেউ কিনবে কি না। এখন মেজবাহ ভাইয়ের দেখানো পথেই ব্যবসা করছি, দিন শেষে হাসিমুখে বাড়ি ফিরছি।”
নরসিংদীর পলাশ থেকে নয়াবাজারে দরজা কিনতে এসেছিলেন ৭০ বছর বয়সী হাসমত আলী। তিনি বলেন, “ছেলেরা নতুন ঘর দিয়েছে, কিন্তু নতুন দরজার খরচ সামলানো যাচ্ছিল না। এখানে অল্প টাকায় ভালো জিনিস পেয়ে গেছি।”
একই রকম সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন কালীগঞ্জের শামসুল ইসলাম। তিনি বলেন, “পুরাতন দরজার সঙ্গে একটা নতুন ডাইনিং টেবিলও কিনেছি। এত কম দামে ঘর সাজানো যাবে ভাবিনি কখনো।”
নয়াবাজার এখন শুধু পুরাতন জিনিসের বাজার নয়। আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে তৈরি নতুন আসবাবপত্রের দোকানও গড়ে উঠছে এখানে। কাঠের কাজ জানা দক্ষ কারিগররা পছন্দসই ডিজাইনে তৈরি করে দিচ্ছেন নতুন আসবাবপত্র সেটাও তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী দামে। এতে স্থানীয় কারিগরদেরও কর্মসংস্থান হয়েছে। একটি সাধারণ হাট থেকে নয়াবাজার আজ হয়ে উঠেছে একটি অর্থনৈতিক কেন্দ্র। প্রতিদিনের লেনদেন ও মানুষের আনাগোনা এই বাজারকে দিয়েছে জীবন্ত রূপ।
এই বাজারে নিয়মিত আসেন এমন কয়েকজন জানান, এখানে এলেই বোঝা যায়, একটি বাজার কেবল কেনাবেচার জায়গা নয়, এটি মানুষের জীবনের অংশ, স্বপ্নপূরণের ক্ষেত্র।
সব শেষে আবার ফিরে আসা যাক মেজবাহ উদ্দীনের কথায়। তার একার উদ্যোগ আর বিশ্বাসের জোরেই আজ নয়াবাজার একটি দৃষ্টান্ত। পুরাতন কাঠের দরজার আড়ালে লুকিয়ে থাকা নতুন সম্ভাবনাকে তিনি কেবল আবিষ্কারই করেননি, তা দিয়ে তিনি গড়েছেন একটি বাজার, একটি জীবনচক্র। নয়াবাজার তাই আজ শুধু একটি জায়গা নয়, এটি এক পরিবর্তনের নাম যেখানে পুরোনো কাঠে ঠাঁই পায় নতুন জীবনের প্রতিচ্ছবি।
ঢাকা/মাসুদ