ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

টনসিলে পাথর সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ২১ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
টনসিলে পাথর সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : টনসিল হচ্ছে দুটি লিম্ফনোড, যা মুখের পিছনে এবং গলার উপর দিকে অবস্থিত। নাক ও মুখের মাধ্যমে প্রবেশ করা ইনফেকশন সৃষ্টিকারী জীবাণু থেকে শরীরকে রক্ষায় এই টনসিলগুলো কাজ করে। কিন্তু ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের আধিক্যে তারা নিজেরাও ইনফেক্টেড হতে পারে।

টনসিলগুলো শরীরের শক্তিশালী প্রতিরক্ষার অংশ হলেও দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা অথবা শ্বাসকার্যে সমস্যা হলে তাদেরকে অপসারণ করা যেতে পারে। কিন্তু টনসিল অপসারণের প্রশ্নে আজকের চিকিৎসকেরা রক্ষণশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন। এটা সত্য যে, টনসিলগুলো শরীরকে ইনফেকশন থেকে রক্ষা করতে পারে, কিন্তু তারা ব্যথারও বড় উৎস হতে পারে।

আপনার টনসিলকে ভোগাতে পারে এমন একটি অসুস্থতা হলো টনসিল স্টোন বা টনসিলে পাথর। টনসিল স্টোন খুব বিরক্তিকর হতে পারে এবং সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। খাবারের অতি ক্ষুদ্র অংশ, ব্যাকটেরিয়া অথবা মৃত ত্বক কোষ টনসিলের অতি ক্ষুদ্র ছিদ্রে আটকে থাকলে টনসিল স্টোন বা টনসিলে পাথর তৈরি হয়। টনসিলে খাদ্যকণা অথবা অন্যান্য কণা একে অপরের সঙ্গে লেগে শক্ত বল গঠন করে, যা টনসিল স্টোন নামে পরিচিত। আইএসআরএন ডেন্টিস্ট্রির একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, প্রায় ৮ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্কের টনসিল স্টোন হয়ে থাকে।

* টনসিল স্টোন কি?

টনসিলের ওপর ক্যালসিয়াম, খাদ্যকণা, ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য উপাদান মিলে যে শক্ত পাথর গঠিত হয় তাকে টনসিল স্টোন বলে। সাধারণত এ পাথরগুলো দেখতে হালকা হলুদ অথবা সাদা। আপনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখ হা করে পাথরগুলো দেখতে পারেন, কিন্তু কখনো কখনো এগুলো টনসিলের এত গভীরে হতে পারে যে আয়নায় দেখতে পাবেন না। জার্নাল অব ওটোল্যারিঙ্গোলজি-হেড অ্যান্ড নেক সার্জারিতে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, টনসিলের পাথর দাঁতের ওপর গঠিত প্লেকের অনুরূপ।

* টনসিল স্টোন কিভাবে গঠিত হয়?

আমাদের টনসিলগুলো শরীরের ইমিউন সিস্টেন বা রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি অংশ হিসেবে কাজ করে- এগুলো নাক বা মুখের মাধ্যমে প্রবেশ করা ব্যাকটেরিয়া অথবা অন্যান্য জীবাণুকে শরীরের ভেতর প্রবেশ করতে দেয় না। টনসিলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে শ্বেত রক্তকণিকা থাকে, যারা জীবাণু ধ্বংস করতে ভূমিকা রাখে। ইনফেকশন প্রতিরোধী এসব টনসিলে খাদ্যকণা, শ্লেষ্মা ও অন্যান্য কণা আটকে গেলে সেখানে ব্যাকটেরিয়া বংশবৃদ্ধি করতে থাকে ও ক্যালসিয়াম শোষিত হতে থাকে- এসবকিছু মিলে একটি শক্ত স্তূপ গঠিত হয় এবং সময় পরিক্রমায় স্তূপটি আরো বড় হতে থাকে, এ স্তূপকেই টনসিল স্টোন বা টনসিলের পাথর বলে।

* টনসিল স্টোনের লক্ষণগুলো কি?

টনসিল স্টোন আছে এমন অনেক লোকের উপসর্গ অনুভূত হয় না। আপনার জন্য সুখবর হলো, টনসিলের পাথরগুলো আপনাকে বিরক্ত না করলে বা সমস্যায় না ফেললে সেগুলোকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু টনসিল স্টোনের উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসা নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। উপসর্গগুলো হলো-

* টনসিল লাল ও উক্ত্যক্ত হওয়া

* শ্বাসে দুর্গন্ধ

* টনসিলাইটিসের (টনসিলের প্রদাহ) মতো ইনফেকশন

* গলাব্যথা

* গিলতে কাঠিন্যতা বা যন্ত্রণা।

টনসিল স্টোন হলে শ্বাস দুর্গন্ধময় হয় কেন?

এর কারণ হলো, এসব পাথরে ব্যাকটেরিয়া বসতি গেড়ে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকে। টনসিল স্টোনের কিছু লোক কানে ব্যথা বা চাপ অনুভবের অভিযোগ করেন।

* কাদের মধ্যে টনসিল স্টোন বেশি হয়?

চিকিৎসকেরা নিশ্চিতভাবে জানেন না যে কেন কিছু লোকের ঘনঘন টনসিল স্টোন হয়, কিন্তু বিবেচনা করার মতো কিছু ফ্যাক্টর রয়েছে। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ কায়রা অসবোর্নের মতে, যেসব লোকের টনসিলে বেশি বা গভীর ছিদ্র রয়েছে তাদের টনসিল স্টোন বিকশিত হওয়ার প্রবণতা বেশি। এছাড়া কিশোর-কিশোরীদের মধ্যেও ঘনঘন টনসিল স্টোন হতে পারে।

* টনসিল স্টোনের চিকিৎসা করবেন কিভাবে?

আপনার টনসিল স্টোন কি ছোট? এটি কি যন্ত্রণাদায়ক নয়? অথবা পাথরটি কি অন্যান্য উপসর্গে ভোগাচ্ছে না? তাহলে আপনি নিজে নিজেই এ পাথর অপসারণের চেষ্টা করতে পারেন। আপনার টুথব্রাশের ব্যাক দিয়ে পাথরটিতে হালকা ঘষা দিন। শ্বাসরোধ অথবা গিলে ফেলার ঝুঁকি এড়াতে পাথরটিকে সবসময় সামনের দিকে ধাক্কা মারুন। ভালোভাবে গড়গড়া বা কুলকুচা করলেও টনসিলের ছোট পাথর খসে পড়তে পারে।

আপনি নিজে নিজে টনসিল স্টোন অপসারণ করতে না পারলে আপনার চিকিৎসক কোনো অপসারণ পদ্ধতি সম্পন্ন করতে পারেন। ঘনঘন টনসিল স্টোন হলে টনসিলেক্টমি অথবা টনসিলের সার্জিক্যাল অপারেশন প্রয়োজন হতে পারে। কিছু লোকের টনসিলে পাথর হওয়ার প্রবণতা অন্যদের চেয়ে বেশি, কিন্তু মুখের স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলে এগুলোর গঠন প্রতিরোধ করা যেতে পারে। প্রতিদিন দুইবার দাঁত ব্রাশ ও একবার ফ্লস করুন। প্রতিদিন অ্যালকোহলমুক্ত মাউথওয়াশের ব্যবহারও আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ আগস্ট ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়