ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

করোনার টিকায় বন্ধ্যা হওয়ার আশঙ্কা নারীদের, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

এস এম ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৫, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৬:১৪, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১
করোনার টিকায় বন্ধ্যা হওয়ার আশঙ্কা নারীদের, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

সম্প্রতি ইএসপিএনের রিপোর্টার অ্যালিসন উইলিয়ামস চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। কারণ চাকরি চালিয়ে যাওয়ার পূর্বশর্ত ছিল, করোনার টিকা নিতে হবে। কিন্তু তিনি করোনার টিকা নিতে চান না, কারণ তিনি গর্ভধারণের চেষ্টা করছেন। তার ধারণা, করোনার টিকা নিলে বন্ধ্যা হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

চলতি সপ্তাহে ত্রিনিদাদের র‍্যাপার নিকি মিনাজ তারকাবহুল ফ্যাশন ইভেন্ট মেট গালাতে অংশগ্রহণ করেননি, কারণ তিনি করোনার টিকা নেননি। এই ইভেন্টেরও পূর্বশর্ত ছিল, করোনার টিকা না নিলে অংশগ্রহণ করা যাবে না। নিকি মিনাজেরও আশঙ্কা যে, করোনার টিকা গ্রহণ করলে গর্ভধারণে ব্যর্থ হতে পারেন।

অ্যালিসন উইলিয়ামস ও নিকি মিনাজের মতো আরো অনেক নারীও করোনার টিকা নিতে ভয় পাচ্ছেন, কারণ তারাও বন্ধ্যা হওয়ার ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। কিন্তু করোনার টিকা কি আসলেই নারীকে গর্ভধারণে অক্ষম করে তোলে? নাকি এটা স্রেফ গুজব? এ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা কি বলছেন? 

বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার টিকা গর্ভবতী নারীদের জন্য নিরাপদ এবং এটি গর্ভধারণেও প্রভাব ফেলে না। ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্লারা ভ্যালি মেডিক্যাল সেন্টারের অবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনিকোলজি ডিপার্টমেন্টের প্রধান জেমস বায়ার্ন বলেন, ‘ফাইজার ও মডার্নার কোভিড টিকা গর্ভবতী নারী ও গর্ভস্থ বাচ্চার জন্য নিরাপদ। এখনো পর্যন্ত কোনো গবেষণা এটা বলেনি যে, এই টিকা গর্ভধারণে বাধা দেয় বা বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করে।’ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) সুপারিশ মনে করিয়ে বলেন, নিজেকে ও পরিবারকে রক্ষার জন্য টিকাই শ্রেষ্ঠ উপায়। সিডিসির মতে, বয়স ১২ হলেই করোনার টিকা নেওয়া উচিত। এমনকি গর্ভবতী ও গর্ভধারণের চেষ্টারত নারীদেরও।

ডা. বায়ার্ন জানান, ‘কোভিড টিকা নারীর উর্বরতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এটাকে সমর্থনের জন্য বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। গবেষকরা এমনকোনো মেকানিজম খুঁজে পাননি যা গর্ভধারণে প্রতিবন্ধক হতে পারে।’ তিনি আরো বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল গুজব ছড়িয়েছে যে, করোনার টিকা নারীর উর্বরতাকে নষ্ট করে। এমন ভুল ধারণায় নারীদের একটা অংশ করোনার টিকা এড়িয়ে যাচ্ছেন।’

গর্ভফুলের একটি প্রোটিনের (সিনসাইটিন ১) গঠন করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের অনুরূপ। কেউ কেউ মনে করেন যে, করোনার টিকা এই প্রোটিনকে টার্গেট করে। কিন্তু এটা ভুল ধারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। লাস ভেগাসে অবস্থিত হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সি সেন্টারের মেটারনাল ফেটাল মেডিসিন স্পেশালিস্ট স্টিফেন এম উল্ড বলেন, ‘করোনার টিকা গর্ভফুলের প্রোটিনকে আক্রমণ করে এমনকোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’

গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নারী টিকা নিয়েছেন এবং যারা টিকা গ্রহণ করেননি উভয় গ্রুপের মধ্যে গর্ভধারণের হার প্রায় একই। আরেকটি গবেষণায় করোনার টিকায় সৃষ্ট অ্যান্টিবডি ছিল এমন নারী, করোনার সংক্রমণে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে এমন নারী ও কোনো ধরনের অ্যান্টিবডি ছিল না এমন নারীদের গর্ভধারণের হার বিশ্লেষণ করা হয়। দেখা গেল যে, তিন গ্রুপেই গর্ভধারণের হার প্রায় একই ছিল। অন্য একটি গবেষণায় ২,৫০০ নারী গর্ভবতী হওয়ার ২০ সপ্তাহ পূর্বে কোভিড টিকা নেন। এদের মধ্যে ১৩ শতাংশের গর্ভপাত হয়েছে। এই হারকে উচ্চ মনে হতে পারে, কিন্তু টিকা নেননি এমন নারীদের সঙ্গে তুলনা করলে স্বাভাবিকই মনে হবে। সিডিসির মতে, টিকা না নেওয়া গর্ভবতী নারীদের মধ্যে গর্ভপাতের হার ১১ থেকে ১৬ শতাংশ।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, গর্ভবতী নারীদের কোভিড-১৯ জনিত মারাত্মক পরিণতির বাড়তি ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্ত হলে গর্ভবতী নারীর অবস্থা খুবই নাজুক হতে পারে। এমনও হতে পারে, ডেল্টার চেয়েও ভয়ানক ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব ঘটতে পারে। এসব কারণে গর্ভবতী নারীদেরও কোভিড টিকা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন ডা. উল্ড। তিনি বলেন, ‘করোনার টিকা গ্রহণ জনিত ঝুঁকি ও কোভিড-১৯ জনিত মারাত্মক পরিণতি তুলনা করলে দেখা যাবে টিকা গ্রহণই বেশি নিরাপদ। গর্ভাবস্থায় কোভিড-১৯ হলে হাসপাতালে ভর্তি বা মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি।’

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়