ঢাকা     রোববার   ১৯ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

রাজনীতিকদের সাজা বাতিলের বিরুদ্ধে আপিলে যাচ্ছে দুদক

|| রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৩   আপডেট: ০৮:৪৫, ১১ আগস্ট ২০২০
রাজনীতিকদের সাজা বাতিলের বিরুদ্ধে আপিলে যাচ্ছে দুদক

দুদক

এম এ রহমান
ঢাকা, ২ সেপ্টেম্বর: ওয়ান ইলেভেনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ অনেক শীর্ষ রাজনীতিবিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছিল দুর্নীতির অভিযোগে। কিন্তু উচ্চআদালতের রায়ে সাজা  বাতিল হয়ে যায় অধিকাংশের।

রাজনীতিবিদদের অনেক দূর্নীতি মামলার কার্যক্রম উচ্চ আদালতে স্থগিত আছে।  দীর্ঘসময় এসব মামলার ব্যাপারে উদাসীন ছিল দুদক। কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে তারা মামলাগুলোর সর্বশেষ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে। এজন্য আইনজীবীও নিয়োগ করা হয়েছে বলে দুদক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৭-০৮ বছরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির শতাধিক মামলা হয়। এসব মামলার মধ্যে ৭৫টিতে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয় সংশ্লিষ্টদের।

চাঁদাবাজি, ঘুষ, দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক মন্ত্রী-এমপি, ব্যবসায়ী ও তাদের স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে এসব মামলা হয়। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর তারা উচ্চ আদালত থেকে খালাস ও স্থগিতাদেশ পেয়েছেন।

এ বিষয়ে দুদকের চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান রাইজিংবিডিকে বলেন, ওয়ান ইলেভেনে অনেক রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলা উচ্চ আদালতে টিকেনি। তাই দুদক মামলার মেধা যাচাই বাছাই করে আপিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দুদকের প্যানেল আইনজীবী থেকে প্রতিটি মামলার জন্য একজন করে আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হচ্ছে যারা মামলাগুলোর সর্বশেষ পরিস্থিতি দেখবে।

সূত্র মতে, আওয়ামী লীগ  না বিএনপি- কোন পক্ষের ব্যক্তিদের মামলাগুলোয় আপিল করবে দুদক, এমন প্রশ্নের  জবাবে  তিনি বলেন, আমরা দুর্নীতিবাজদের আওয়ামী লীগ, বিএনপি কিংবা জাতীয় পার্টির নেতা হিসেবে আলাদা করে দেখছি না। ওয়ান ইলেভেনে যাদের সাজা হয়েছিল , সে সময়ের সব মামলাই দেখা হবে।

দুদকের অন্য একটি সূত্র বলেছে, দুদক বর্তমানে যাদের মামলায় আপিল করতে যাচ্ছে সেই তালিকায় ক্ষমতাসীন দলের কোন নেতার মামলা নেই। এখন পর্যন্ত যাদের নাম জানা গেছে তারা সবাই বিএনপি বা অন্য দলের  বা পক্ষের লোক।  

 সম্ভাব্য আপিলের তালিকায় আসা কয়েকটি মামলা ও নিয়োগকৃত আইনজীবীর নাম জানা গেছে খোঁজ নিয়ে।  বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ২১ জুন ২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ৮৫৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও তাঁর স্ত্রীকে ৩ বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড  দেয়া হয়েছিল।

উচ্চ আদালত পরে সাজা বাতিল করে। আমান ও তাঁর স্ত্রীর মামলাটি দেখার জন্য অ্যাডভোকেট আনিসুল হককে  ও সুফিয়া খাতুনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পাটির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে অবৈধ উপায়ে ১২১ জনকে নিয়োগ ও ৭৮৫ জনকে সরাসরি নিয়োগ দানের অভিযোগে মামলা হয়। এই মামলাটি দেখার জন্য আইনজীবী তাইফুর কবীরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এভাবে দুদক বিভিন্ন মামলায় অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতাদের বিরুদ্ধে আরও আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে বা নিয়োগের   প্রক্রিয়া চলছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত:  ২০০৭ সালে ক্ষমতাসীন তত্ত্বাবাধয়ক সরকারের আমলে দুর্নীতির অভিযোগে ৭০১টি  এবং ২০০৮ সালে ৯৭৯ টি মামলা হয়। ২০০৭ সালে ১৭০টি ও ২০০৮ সালে ৩৯৭টি মামলার চার্জশীট দাখিল করেন সংশ্লিষ্ট  তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

এসব মামলায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও খালেদা জিয়ার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানসহ মন্ত্রী-এমপি এবং রাজনীতিকদের অভিযুক্ত করা হয়।

২০০৭ ও ২০০৮ সালে ৭৫টি মামলার রায়ে বিভিন্ন রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন ব্যক্তির দ- হয়।  রায়ে সাবেক এমপি শামীম ওসমান, জয়নাল হাজারী ও ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের ৩ বছর, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আমান উল্লাহ আমানের ১০ বছর, তাঁর স্ত্রী সাবেরা আমানের ৩ বছর, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর নাসিরের ১০ বছর ও তাঁর ছেলে মীর হেলালের ৩ বছর, সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ ভুঁইয়ার ২০ বছর, বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ১০ বছর, সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার ৭ বছর ও তাঁর স্ত্রী সিগমা হুদার ৩ বছর, সাবেক এমপি আলী আসগর আলী লবীর ১০ বছর, সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের ১০ বছর ও স্ত্রী লায়লা আরজুমান বানুর ৩ বছর, হারিছ চৌধুরীর ৫৯ বছর, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর ৭ বছর, সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদের ৭ বছর, সাবেক এমপি রাশেদুজ্জামান মিল্লাতের ৭ বছর, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ৭ বছর ও তাঁর ছেলে সাজেদুল হক চৌধুরী দিপুর ৩ বছর, সাবেক এমপি শেখ হেলাল উদ্দিনের ১০ বছর ও তাঁর স্ত্রী রূপা চৌধুরীর ৩ বছর,  সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ১০ বছর, সাবেক এমপি ডা. এইচবিএম ইকবালের ১০ বছর, সাবেক এমপি এসএম মোস্তফা রশিদী সুজার ১০ বছর ও  তার স্ত্রী খোদেজা রশিদী সুজার ৩ বছর, সাবেক এমপি মুফতি শহীদুল ইসলামের ১০ বছর, সাবেক এমপি এম নেসার রহমানের ১০ বছর, সাবেক এমপি মো. শাহজাহান চৌধুরীর ১০ বছর, সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান সিরাজের ১০ বছর ও তাঁর স্ত্রী রাবেয়া সিরাজের ৩ বছর, সাবেক এমপি হাজী মো. সেলিমের ১০ বছর, সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর ৭ বছর ও তাঁর স্ত্রী সামছুন্নাহার জামানের ৩ বছর, সাবেক এমপি হাজী মকবুল হোসেনের ১০ বছর ও তাঁর স্ত্রী গোলাম ফাতেমা তাহেরা খাতুনের ৩ বছর, সাবেক এমপি ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের ১০ বছর ও তাঁর স্ত্রী মেহজাবীন ফারহানার ৩ বছর, সাবেক এমপি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর ৭ বছর ও তার স্ত্রী তাসমিমা হোসেনের ৫ বছর, সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ১০ বছর, সাবেক এমপি মোসাদ্দেক আলী ফালুর ৫ বছর, সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমেদের ১০ বছর, সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহিমের ৭ বছর করে মোট ৭৫টি মামলায় আদালত কারাদন্ডাদেশ দেন।

এদিকে সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে গিয়াসউদ্দিন আল মামুন বর্তমানে কারাবন্দি আছেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী এখনও পলাতক।  

এদিকে বর্তমান মহাজোট সরকারের সময়ে পদ্মা সেতু দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান ও হলমার্ক ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ  করা হলেও কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ দায়ের করেনি দুদক। দুদকের এই অবস্থান নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে বিভিন্ন মহলে।  

এছাড়া পটুয়াখালী-৩ আসনের সরকারদলীয় এমপি গোলাম মাওলা রনি, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন, সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সদস্য ও মহিলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদিকা জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী, আওয়ামী লীগ উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র সিংহ রায়সহ সরকারদলীয় বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে দুদক বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া, পুত্র তারেক রহমান, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, সাবেক স্পিকার জমিরউদ্দিন সরকার, সাবেক প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশারফ হোসেন, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর স্ত্রী রোমানা মাহমুদ এমপি ও তাঁর ছেলে, হাওয়া ভবনের মালিক আলী আসগর লবী ও তাঁর  স্ত্রী ও সন্তান, সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার স্ত্রী সিগমা হুদা ও তাদের কন্যা অন্তরা হুদা, মোসাদ্দেক আলী ফালু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এহছানুল হক মিলনসহ আরও বেশ কজন নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান, তদন্ত ও আইনি লড়াই চালাচ্ছে।

 

রাইজিংবিডি/এমএআর/ এএম

 

 

 

 

 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ