ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ২১ ১৪৩১

উপজেলায় অপ্রতিরোধ্য এমপি-মন্ত্রী

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ১০ মে ২০২৪   আপডেট: ১০:৪৮, ১০ মে ২০২৪
উপজেলায় অপ্রতিরোধ্য এমপি-মন্ত্রী

উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী না রেখে নির্বাচন তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, অংশগ্রহণমূলক এবং ভোট বিপ্লবের যে কৌশল প্রয়োগ করেছিলো আওয়ামী লীগ, তা মন্ত্রী-এমপিদের ‘অপ্রতিরোধ্য প্রভাবে’ হোচট খেয়েছে। নির্বাচনে তাদের নগ্ন হস্তক্ষেপে নেতাকর্মীরা যেমন ত্যক্ত-বিরক্ত হয়েছেন, তেমনি সাধারণ ভোটারদেরও আগ্রহ কমিয়েছে।

দলীয় সূত্র বলছে, ভোটার উপস্থিতিকে আওয়ামী লীগ নেতারা ‘সন্তোষজনক’ বললেও প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি বলে মনে করেন তারা। নেতারা বলছেন, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের আগে প্রথম ধাপের নির্বাচন বিশ্লেষণ করে এই বিষয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।

ইসি সূত্র জানায়, প্রথম ধাপে মোট এক হাজার ৬৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫৭০, ভাইস চেয়ারম্যান ৬২৫ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৪০ জন প্রার্থী রয়েছেন। প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান পদে ৮, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ করে অর্থাৎ মোট ২৮ জন প্রার্থী এরই মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন।

আরো পড়ুন:

পড়ুন: নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখা যাদের দায়িত্ব, তারাই প্রভাব বিস্তারে 

টানা চার মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের ধারাবাহিকতায় এ বছর চতুর্থবার উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে গড়ে ৪১ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছিল। ওই নির্বাচনে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ভোট হলেও বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলো নির্বাচন বর্জন করে। আর ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা ভোটে ৬১ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে ৬৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ ভোট পড়ে। নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপজেলা নির্বাচনগুলোর মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম ভোটার উপস্থিতি ছিল। তবে ভোটার উপস্থিতিতে মোটামুটি ‘সন্তোষজনক’ বলছে আওয়ামী লীগ।

দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনে প্রথম পর্যায়ে কোথাও ক্যাজুয়্যালিটি নেই, প্রাণহানির ঘটনা নেই। কিছু জায়গায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে, কিছু আহত হয়েছে, কিন্তু প্রাণহানির ঘটনা নেই। নির্বাচন কমিশন বলেছে, ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি। এই পরিস্থিতিতে আমি মনে করি, ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক। নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসন খুবই দৃঢ় অবস্থা নিয়েছে। দলে নেতাকর্মীরাও যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছে। যে কারণে প্রথম ধাপে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।’

প্রথমধাপের উপজেলা নির্বাচনে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে দলীয় সংসদ সদস্যরা প্রভাব বিস্তার করেছেন। এলাকায় নিজেদের প্রভাব কমতে পারে এই আশঙ্কায় নির্বাচনের শুরু থেকেই তারা তাদের মাইম্যানদের পক্ষে কাজ করেছেন। হুমকি-ধমকি থেকে শুরু করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে মারধর এবং অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে দলের মধ্যে বিভেদ প্রকট আকার ধারণ করেছে।

দলীয় সূত্র বলছে, বিএনপি নির্বাচনে না আসায় উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী না দিয়ে নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেওয়ার কৌশল নেয় আওয়ামী লীগ। তৃণমূলে বার্তা দেওয়া হয় যার ইচ্ছে সে নির্বাচন করবে, জনপ্রিয়রা নির্বাচনে জিতে আসবে। এতে মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন আয়োজনে নেওয়া হয় বিভিন্ন পদক্ষেপ। দেওয়া হয় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি। স্বজনদের নির্বাচনের মাঠ থেকে উঠিয়ে নেওয়ার বার্তাও আসে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নির্বাচনী মাঠ প্রভাবমুক্ত রাখতে সেসব হুমকি শুধুই কাগুজে বাঘ হয়ে থাকে। কেউই দলীয় নির্দেশনা মানেনি। এতে নির্বাচনী প্রভাব বিস্তারে বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষের দ্বৈরথ চলে। তবে দলের জনপ্রতিনিধিদের এই প্রভাব ভালো চোখে দেখছে না আওয়ামী লীগের কেন্দ্র। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন যাতে আরও সুষ্ঠু ও অবাধ হয়, একইসঙ্গে ভোটার অংশগ্রহণ বাড়ে, সেজন্য পরবর্তী করণীয় নিয়ে শিগগিরই বৈঠক করবে দলটি।

নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনে বিএনপির আহ্বানে ভোটাররা কর্ণপাত করেনি এবং সন্তোষজনক ভোটারের উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পড়ুন: আ.লীগের স্বস্তির বার্তা, তবু শঙ্কার কালো মেঘ

তিনি বলেন, এই অঞ্চলের মধ্যে ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানেও স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশের অন্যান্য নির্বাচন এবং এ অঞ্চলের অন্য দেশের নির্বাচনের তুলনায় বাংলাদেশে সহিংসতার মাত্রা খুবই কম। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নির্বাচন নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘ধান কাটার মৌসুম ও সকালে বৃষ্টি হওয়ায় ভোট পড়ার হার কম হতে পারে। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, ভোটাররা ধান কাটায় ব্যস্ত থাকায় কেন্দ্রে যাননি। এছাড়া কিছু কিছু জায়গায় ঝড়-বৃষ্টিও হয়েছে।’

/এসবি/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়