ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

করোনা টেস্টের ফি পুনঃনির্ধারণের দাবি

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪৬, ৯ মে ২০২১   আপডেট: ১৭:৪৬, ৯ মে ২০২১
করোনা টেস্টের ফি পুনঃনির্ধারণের দাবি

বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোয় করোনা টেস্টের অতিরিক্ত ফি নেওয়ায় অভিযোগ তুলেছেন সেবাপ্রার্থীরা। তারা বলছেন, যার যেমন খুশি,  তেমন নীতিতেই চলছে হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো।  মহামারিকে পুঁজি করে চিকিৎসাসেবায় এমন তেলেসমাতিতে লিপ্ত হয়েছে এসব হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টার।  তাদের মতে, সরকারের নজরদারির অভাবেই বেসরকারি হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো এই নৈরাজ‌্য সৃষ্টির সুযোগ পেয়েছে। 

জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৬ এপ্রিল  প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে করোনা টেস্টের অনুমতি দেয় সরকার।  তখন সবকিছু বিবেচনা করে সর্বোচ্চ ফি ৩ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ওই সময়ে প্রতিটি টেস্টের জন্য ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা করে খরচ হতো।  

প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে তখন স্যাম্পল কালেকশনের জন্য তাদের নিজস্ব ল্যাবের অধীন বিভিন্ন জায়গায় কালেকশন চার্জ সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা এবং হোম কালেকশনের জন্য সর্বোচ্চ চার্জ ১ হাজার টাকা নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।  

এই ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি ল্যাবের অধ্যাপক আশেকুর রহমান বলেন, 'সরকারিভাবে যখন করোনা টেস্টের মূল্য নির্ধারণ করা হয়, তখন বিশ্বজুড়ে করোনা মারাত্মক আকারে ছিল। তখন করোনার কিটসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি ছিল। এখন সেগুলোর দাম কমেছে। তাই করোনা টেস্টের মূল্য পুনঃনির্ধারণের ব্যাপারে সরকারিভাবে চিন্তা করা উচিত। ’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. ফরিদ হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্বময় কোভিড টেস্টের কিট ও রি-এজেন্টের দাম কমেছে, এটা সত্যি।  বিষয়টি আমাদের ভাবনার মধ্যে আছে।  এছাড়া আগের চেয়ে টেস্টের সংখ্যাও বেড়েছে।  এর মূল্য পুনঃনির্ধরণ করার বিষয়ে শিগগিরই আলোচনা করে ঠিক করবো।’ 

এদিকে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে একটি টেস্টের জন্য সরকারের তরফ থেকে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সর্বোচ্চ ৯৫০ রুপি নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর ভারতে সরকারি হাসপাতালে এই টেস্টের জন্য কোনো টাকা নেওয়া হয় না। যদিও দেশে সরকারি হাসপাতালে কোভিড টেস্টের জন্য সরকার নির্ধারিত ২০০ টাকা ফি এবং বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করলে ৫০০ টাকা নেওয়া হবে বলে সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।

কেন সরকারি হাসপাতালে কোভিড ভ্যাক্সিনের মতো কোভিড-১৯ টেস্ট ফ্রি না করে ফি নির্ধারণ করতে হলো? এই প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আব্দুল মান্নান বলেছিলেন, ‘জনস্বার্থের কথা চিন্তা করেই এই ফি নির্ধারণ করা হয়েছে৷ যাদের প্রয়োজন নেই, তারাও বিনা কারণে একাধিকবার টেস্ট করাচ্ছেন৷ ফি নির্ধারণের ফলে যাদের প্রয়োজন নেই, তারা আর টেস্ট করাতে যাবেন না।’

কিন্তু সরকারি হাসপাতালের বুথে গিয়ে কোভিড-১৯ নমুনা দিলে ২০০ টাকা আর বাসায় গিয়ে নমুনা নিলে ৫০০ টাকা ফি নির্ধারণ করার ফলে করোনা বিস্তারের সঠিক চিত্র পাওয়া যাবে না বলে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।

সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিদেশগামী যাত্রীদের জন্য সরকারিভাবে টেস্টের মূল্য সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বিদেশগামী যাত্রীদের জন্য বিশেষায়িত মহাখালী ডিএনসিসি (স্পেশালাইজড কোভিড হাসপাতাল)-তে প্রতিদিন যে পরিমাণ যাত্রী টেস্ট করাতে যান, তার সামান্য অংশই এই হাসপাতালে টেস্ট করাতে পারেন।  

এছাড়া তাদের অনেকের বিমানের টিকিট পাওয়ায় অনিশ্চয়তা, হঠাৎ করে একদিনের মাথায় টিকিট পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে কম সময়ে বেশিরভাগ যাত্রীর টেস্ট করাতে হয়। ফলে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় এসব যাত্রীর বেশিরভাগই দালালের সাহায্য নেন।  দালালদের পছন্দমতো বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ কিছু কিছু ল্যাবে কোভিড-১৯ টেস্ট করাতে বাধ্য হন। এই ক্ষেত্রে দালালরা বিদেশগামীদের রিপোর্ট ১২-১৪ ঘণ্টায় করে দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা নেন। ২ হাজার টাকা অথবা তার থেকেও কম টাকায় টেস্ট করিয়ে জনপ্রতি দালালরা ১ হাজার, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি টাকা হাতিয়ে নেন বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।

বিদেশগামীদের জন্য করোনার-টেস্টের খরচ কমানো হবে কি না, দালালের রোগী জোগাড় করা ও তাদের কমিশন দেওয়া প্রসঙ্গে ল্যাবএইড কলাবাগান শাখার ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা টেস্টের খরচ সরকারিভাবে কমালে আমাদেরও কমানো হবে। আসলে টেস্টের খরচ কমানো বা বাড়ানো ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।  তবে, আমাদের এখানে দালালের মাধ্যমে কোনো রোগী আসেন না। তাই দালালদের কমিশনের বিষয়টি অবান্তর।’

কিটের দাম কমার কারণে টেস্টের মূল্য কমানো হবে কি না? জানতে চাইলে প্রাভা হেলথ কেয়ারের ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানে উন্নত বিশ্বের, মানসম্পন্ন কিট ব্যবহার করা হয়। মানের ক্ষেত্রে কোনো আপস করি না।  তাই মূল্য কমানোর ব্যাপারেও  কোনো চিন্তা আপাতত নেই।’ 

তবে করোনা টেস্টের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, বিশ্বজুড়ে কিটের মূল্য কমে যাওয়া ও প্রচুর পরিমাণে প্রবাসীর টেস্ট করার কারণে টেস্টের মূল্য কমানো প্রয়োজন বলে মনে করেন এম আর খান শিশু হাসপাতালের ল্যাবের অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর। তিনি বলেন, ‘এতে এই দুঃসময়ে মানুষের উপকার হবে।  আশা করি, দ্রুত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিষয়টি বিবেচনা করে করোনা-টেস্টের মূল্য পুনঃনির্ধারণ করবে। ’
 

/এনই/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়