ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ডেঙ্গুতে সেপ্টেম্বরে গড় আক্রান্ত ২০১ জন

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২  
ডেঙ্গুতে সেপ্টেম্বরে গড় আক্রান্ত ২০১ জন

ছবি: সংগৃহীত

প্রতিদিনই দেশব্যাপী বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছবে। বাস্তব অবস্থায় তাদের আশঙ্কাই সত্যি প্রমাণিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে জানা গেছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে (২০ তারিখ পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ২৪ জন। প্রতিদিন গড়ে ২০১.২ জন। এ মাসে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১৭ জন। জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত মোট মারা গেছেন ৪৫ জন। 

এবছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণেই ছিল ডেঙ্গু পরিস্থিতি। চলতি বছরের মে পর্যন্ত আক্রান্ত হয় ৩৫২ জন। জুন মাসে হঠাৎ করেই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে এক মাসে হয় ৭৩৭ জন। জুলাই মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ডাবলেরও বেশি হয়। এমাসে আক্রান্ত হয় ১ হাজার ৫৭১ জন। গত আগস্ট মাসে সারাদেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৫২১ জন।

এদিকে, ডেঙ্গুর বর্তমান আক্রান্তের অবস্থা বিবেচনা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, মশা নিয়ন্ত্রণ ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব সম্ভব হবে না। অপরদিকে ঢাকার দুই সিটি (দক্ষিণ ও উত্তর) করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ডেঙ্গুরোগ প্রতিরোধে মশার বিস্তার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নগরবাসীকে আরও সচেতন হতে হবে। না হলে অভিযান চালিয়ে বা ওষুধ ছিটিয়ে এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না। তবে অক্টোবর থেকে ধীরে ধীরে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমবে বলেও জানান তারা। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, এবছরের ১ জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত রাজধানী এবং সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন ৬ হাজার ৬৫২ জন। এসব রোগীদের মধ্যে ঢাকায় ৫ হাজার ৫৫২ জন এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় ১ হাজার ১০ জন। আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ২৮ জন। মোট মারা গেছেন ৪৫ জন। 

এই বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লে. কর্নেল মো. গোলাম মোস্তফা সারওয়ার বলেন, আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর এই দুই মাস ডেঙ্গুর জন্য পিক সিজন। যদিও এবছর জুন থেকেই সংক্রমণ বাড়ছে। তবে অক্টোবর থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে যাবে। সিটি করপোরেশনের তরফ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও, নগরবাসীর সচেতনতাই ডেঙ্গু আক্রান্ত কমাতে পারবে।  

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর এই বিষয়ে বলেন, এডিস মশা জন্মায় অল্প ও স্বচ্ছ পানিতে। তাই প্রত্যেকে নিজের বাসা-বাড়ির জমে থাকা পানি পরিষ্কার করে ফেললে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে ডেঙ্গু আক্রান্ত কম হবেন। এ ব্যাপারে প্রত্যেক নগরবাসীকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। খুব সকালে এবং সন্ধ্যায় এডিস মশায় কামড়ালে ডেঙ্গু আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে। তাই এই সময় সবাইকে মশারি টানিয়ে ঘুমানোর পরামর্শও দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ। 

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, ২০২১ সালের আগস্ট পুরো মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৬৯৮ জন। আর ২০২২ সালের আগস্টে রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৫২১ জন অর্থাৎ অর্ধেকেরও কম। তেমনি ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৮৪১ জন। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সর্বোচ্চ ৫ হাজার রোগী হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মনজুর রাহমান বলেন, ডেঙ্গু সংক্রমণ সাধারণত আগস্ট মাস থেকে বাড়া শুরু হয়। সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ চূড়ায় অবস্থান করে অক্টোবর মাসে ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় তাই দেখা গেছে। আমাদের দেশে ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল। সেবছর সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ১৬ হাজার ৮০০ জন। 

ডেঙ্গু সংক্রমণ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. শাতিল মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, ডেঙ্গু রোগ মূলত যে মশার কামড়ে হয়, সেই মশা অল্প পানিতে ডিম পাড়ে এবং জন্মাতে পারে। যেমন- ডাবের খোসা, ফুলের টব, এগুলোতে খুব অল্প পরিমাণ পানি থাকলেও এর মধ্যেই মশা জন্মাতে পারে। ঢাকা শহরে প্রতিনিয়ত যে কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে, সেখানে ড্রামসহ বিভিন্ন কৌটা আর খানাখন্দে পানি জমে থাকায় ডেঙ্গু মশার বংশ বিস্তার হয়।

তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে প্রায়ই অভিযান চালানো হচ্ছে। ওষুধ ছিটানো হচ্ছে, নগরবাসীকে সচেতন করা হচ্ছে। নগরবাসী দায়িত্ব নিয়ে এসব মশার উৎপাদনের স্থানগুলো পরিষ্কার করলে, জমানো পানি নিয়মিত ফেলে দিলে, মশার প্রজনন কমবে। ফলে আক্রান্ত ও মৃত্যু হারও কমবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির সেন্ট্রাল রোডের স্থায়ী বাসিন্দা ইমতিয়াজ পারভেজ বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে মাঝে মাঝে ওষুধ স্প্রে করে। কেবল এই স্প্রে করলেই হবে না, নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে। আমাদের চারপাশে অসংখ্য হাইরাইজ ভবন তৈরি হচ্ছে, যেখানে সিটি করপোরেশনের তেমন কোনও তদারকি নেই। সেসব ভবনের মালিকরাও উদ্যোগী হয়ে ঠিকমতো জমা পানি ফেলে দিলে, বাসায় বিভিন্ন পাত্রে, ফুলের টবে জমানো পানিও ২-৩ দিন পর পর ফেলে দিলে মশার জন্ম বাড়বে না। 
 
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু সংক্রমণ আগস্টের চেয়ে সেপ্টেম্বরে বাড়ছে এটা যেমন উদ্বেগের, তেমনি এটাও ঠিক যে- গত বছরের তুলনায় এবছর সংক্রমণের হার কম। এ বছর ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত (২০ সেপ্টেম্বর) ৪৫ জন মারা গেছেন। আমরা চাই না একটি মানুষও ডেঙ্গুতে প্রাণ হারাক। তাই কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ভালো। হাসপাতালে থাকলে একটা সেবার মধ্যে থাকে এবং তার মৃত্যু ঝুঁকিটা কমে যায়।
 
অধ্যাপক নাজমুল বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তরফ থেকে ঢাকা মহানগরীতে সার্ভে করা হয়েছে। সেই সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী উত্তর সিটিতে ১৩টি এবং দক্ষিণ সিটিতে ১৪টিসহ মোট ২৭টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পাওয়া গেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ১৩ শতাংশ বাড়িতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। দুই সিটি করপোরেশন মিলিয়ে ১০ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। 

উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ১২৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়, ফেব্রুয়ারি মাসে ২০ জন, মার্চ মাসেও ২০ জন, এপ্রিল মাসে ২৩ জন। মে মাসে ১৬৩ জন, জুন মাসে ৭৩৭ জন, জুলাই মাসে ১ হাজার ৫৭১ জন এবং আগস্ট মাসে ৩ হাজার ৫২১ জন। আর সেপ্টেম্বর মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ২৪ জন। এ পর্যন্ত (২০ সেপ্টেম্বর) মারা গেছেন ৪৫ জন। ২০১৯ সালে সারাদেশে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংখ্যক আক্রান্ত হন ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন এবং ডেঙ্গুতে মারা যান ১৭৯ জন।

ঢাকা/এনএইচ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়