ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

অক্টোবরজুড়ে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১৮, ১ নভেম্বর ২০২২  
অক্টোবরজুড়ে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা

ছবি: সংগৃহীত

ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছিল, অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমতে থাকবে। অথচ বাস্তব চিত্র ভিন্ন। এ বছরের মধ্যে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে অক্টোবর মাসে। সারাদেশে কেবল অক্টোবরেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন পুরো বছরের অর্ধেক রোগী (১৯ হাজার ৯৪৫ জন)। এই মাসে কখনও এত বেশি রোগী এর আগে পাওয়া যায়নি। রোগীর মতো মাসটিতে মৃত্যুতেও হয়েছে রেকর্ড। এ মাসে মারা গেছেন ৮৬ জন।

অপরদিকে, বর্তমানে সারা দেশে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩ হাজার ৫৮৪ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে ঢাকার ৫৩টি হাসপাতালে ২ হাজার ৩০৯ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ২৭৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।

এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩৮ হাজার ২৪ জন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৬ হাজার ১৬ জন এবং ঢাকার বাইরে সারা দেশে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ৮ জন। একই সময়ে সারা দেশে হাসপাতাল থেকে ছাড় পাওয়া রোগীর সংখ্যা ৩৪ হাজার ২৯৯ জন।
 
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দুটি কাজ করে থাকে। প্রথমত হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেওয়া। সেটা ঠিকঠাকই করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তরফ থেকে বিভিন্ন মৌসুমে ঢাকা মহানগরীতে সার্ভে করা। সেই সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী উত্তর-দক্ষিণ দুই সিটিতেই সমানভাবে মশার উপদ্রব পেয়েছি। সাধারণত বর্ষাকালে ডেঙ্গুর বিস্তার হলেও চলতি বছরের বর্ষা শেষ হলেও রোগটির প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। আমাদের ধারণা ছিল, অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ডেঙ্গু সংক্রমণ কমতে থাকবে। কিন্তু তা না হয়ে অক্টোবরে বরং আক্রান্ত ও মৃত্যু বেশি ঘটেছে। তাই, ডেঙ্গুর বর্তমান আক্রান্তের অবস্থা বিবেচনায় এনে মশা নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব সম্ভব হবে না।

এদিকে, ঢাকার দুই সিটি (দক্ষিণ ও উত্তর) করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ডেঙ্গুরোগ প্রতিরোধে মশার বিস্তার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নগরবাসীকে আরও বেশি করে সচেতন হতে হবে। না হলে অভিযান চালিয়ে বা ওষুধ ছিটিয়ে এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না।

মহামারির মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লে. কর্নেল মো. গোলাম মোস্তফা সারওয়ার বলেন, সাধারণত আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাস ডেঙ্গুর জন্য পিক সিজন বলা যায়। কিন্তু এবছর জুন থেকেই সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। অক্টোবরের প্রথম দিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে যাবার সম্ভাবনা থাকলেও সেটা কমেনি। ডেঙ্গুর বিষয়টি সিরিয়াসলি নিয়ে সিটি করপোরেশনের তরফ থেকে বিভিন্ন কার্যকর ভূমিকা নেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি নগরবাসী সচেতন না হলে; সহযোগিতা না করলে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া একটু কঠিনই হবে।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মনজুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে সিজন হিসাব করে ডেঙ্গু সংক্রমণ সাধারণত আগস্ট মাস থেকে বাড়া শুরু হয়। সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ চূড়ায় অবস্থান করে অক্টোবর মাসে ধীরে ধীরে কমতে থাকে। গত কয়েক বছর ধরে এভাবেই চলে আসছে। কিন্তু এ বছরের চিত্রটা ভিন্ন। সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে আক্রান্ত এবং মৃতের অনেক বেশি লক্ষ্য করা গেছে। তবে আর বৃষ্টি না হলে নভেম্বর থেকে সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা কমতে থাকবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ১২৬ জন। ফেব্রুয়ারিতে ২০, মার্চ ২০, এপ্রিল ২৩, মে মাসে ১৬৩ জন। এবছর প্রথম ডেঙ্গুতে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটে জুন মাসের ২১ তারিখ। জুনে মারা যান ২ জন এবং আক্রান্ত হন ৭৩৭ জন। জুলাই থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। জুলাইতে আক্রান্ত হন ১ হাজার ৫৭১ জন এবং মারা যান ৯ জন। আগস্টে আক্রান্ত ৩ হাজার ৫২১ জন, মারা গেছেন ১১ জন। সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যায় তিন গুণ। এমাসে আক্রান্ত হন ৯ হাজার ৯১১ জন আর মারা যান ২৪ জন।

বর্তমান বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্তের দ্বিগুণ আক্রান্ত হন কেবল অক্টোবর মাসে। আর মারা যান সারা বছরের তুলনায় ৬১ ভাগ মানুষ। সারা বছরে আক্রান্ত ৩৮ হাজার ২৪ জন এবং মৃত্যু ১৪১ জনের বিপরীতে অক্টোবরে মাসে আক্রান্ত হন ১৯ হাজার ৯৪৫ জন এবং মারা যান ৮৬ জন।

সম্প্রতি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, আমাদের দেশে এডিস মশা ছিল না, ডেঙ্গু রোগ ছিল না। এটা-তো বাইরের দেশ থেকে এসেছে। হয়তো ফ্লাইটে করে দুটি মশা দেশে এসে বংশ বিস্তার করেছে।

যদিও বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু রোগীর দেখা মেলে ২০১৬ সালে। পুরো ২০১৬ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৬০ জন। ২০১৭ সালে ২ হাজার ৮৮৫ জন, ২০১৮ সালে এক লাফে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার ১৬২ জন। ২০১৯ সাল ছিল ডেঙ্গুর জন্য ভয়াবহ বছর। এবছর মোট আক্রান্ত হন ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন এবং মারা যান ১৭৯ জন।

২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে ডেঙ্গু তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। পুরো বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন মাত্র ১ হাজার ৪০৫ জন। গত বছর ২০২১ সালে আবারও ডেঙ্গু মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এবছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৫ জন। আর ২০২২ সালে (৩১ অক্টোবর পর্যন্ত) আক্রান্ত হয়েছেন ৩৮ হাজার ২৪ জন এবং মারা গেছেন ১৪১ জন।

আক্রান্তের দিক থেকে বর্তমান বছরে একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয়েছেন ২৩ অক্টোবর, এদিনে আক্রান্ত হন ১ হাজার ৩৪ জন। আর একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু তাও ঘটেছে অক্টোবর মাসের ১৩ তারিখে। এদিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮ জন। 

ঢাকা/এনএইচ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়