ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

বাবার অপকর্মে লজ্জিত: দেশ ছাড়ছেন আরিফুলের ২ সন্তান

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫২, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১৬:৫২, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
বাবার অপকর্মে লজ্জিত: দেশ ছাড়ছেন আরিফুলের ২ সন্তান

আরিফুল হক চৌধুরী

করোনাভাইরাস শনাক্তে নমুনা পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগ আছে জেকেজি হেলথকেয়ারের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনা শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করেই ২৭ হাজার মানুষকে রিপোর্ট দেয়। এর বেশিরভাগই ভুয়া বলে অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগে ২০২০ সালের ২৩ জুন অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। পরে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা করা হয়।

গত বছরের ১৯ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী ও তার স্বামী প্রতিষ্ঠানটির সিইও আরিফুল হক চৌধুরীসহ আট আসামিকে ১১ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। 

বাবা আরিফুল চৌধুরীর অপকর্মে লজ্জিত তার সন্তানরা। এজন্য দুই সন্তানকে নিয়ে দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আরিফুল চৌধুরীর প্রথম স্ত্রী ফকীহা ত্বা-সীন মোস্তফা অনন্যা। এজন্য সন্তানদের আইনি অভিভাবক ও তত্ত্বাবধায়ক হওয়া জরুরি মর্মে মামলা করেছেন অনন্যা।

গত ১৬ জানুয়ারি পঞ্চম অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক আফরোজা খাতুনের আদালতে এ মামলা করেন অনন্যা। ওই দিন আদালতে অনন্যা বলেন, দুই নাবালক সন্তানের মা তিনি। বাচ্চাদের দেখভাল করেন। স্বামী আরিফুল চৌধুরীর সঙ্গে ডিভোর্সের পর তিনি আর বিয়ে করেননি। সন্তানরা তার কাছেই থাকে। ওদের গার্ডিয়ানশিপ চাই। ওদের বাবা জীবিত আছেন। সন্তানদের দেশ ছাড়ার ক্ষেত্রে বাবার কোনো আপত্তি নেই।

কারাগারে থাকা আরিফুলের বক্তব্য শোনেন আদালত। আরিফুল চৌধুরী বলেন, আমি ওই দুই সন্তানের বাবা। তারা দেশের বাইরে গেলে আমার আপত্তি নেই।

গত ২৯ জানুয়ারি আদালত মাকে গার্ডিয়ানশিপ দেন। এ বিষয়ে জানতে অনন্যার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে, এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অনন্যার আইনজীবী মলয় সাহা বলেন, আরিফুল চৌধুরী জেলে আছেন। মা গার্ডিয়ানশিপ চেয়ে আবেদন করেছেন। আদালত তা মঞ্জুর করেছেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ আরিফুল চৌধুরীর সঙ্গে ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয় ফকীহা ত্বা-সীন মোস্তফা অনন্যার। ২০১৪ সালে কন্যা এবং ২০১৫ সালে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন তারা। গৃহিনী অনন্যা সন্তানদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। এরইমধ্যে আরেক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে আরিফুলের। উল্লেখ্য, এজাহারে ওই নারীর নাম উল্লেখ করেননি অনন্যা। তবে জানা যায়, ওই নারী নাম ডা. সাবরিনা চৌধুরী। ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর থেকে আলাদা থাকা শুরু করেন তারা অনন্যা ও আরিফ। পরে সাবরিনার সঙ্গে বসবাস শুরু করেন আরিফ। ২০১৬ সালের ৩ মার্চ আরিফুল একটি অঙ্গীকারনামার শর্ত অনুযায়ী স্ত্রীকে মাসে ৭৫ হাজার টাকাসহ সন্তানদের স্কুলের যাতায়াত, ভর্তি ও ইমার্জেন্সি খরচ এবং মেয়ের ডিপিএস বাবদ ৫ হাজার টাকা দিয়ে আসছিলেন।

এদিকে অনন্যা আলাদা হওয়ার পর বহুবার আরিফুল চৌধুরীর সঙ্গে পুনরায় সংসার শুরু করার চেষ্টা করেন। কিন্তু, আরিফুল তার কথায় কর্ণপাত না করেননি। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সময়কালে অনন্যা বুঝতে পারেন, তাকে একাই দুই সন্তানকে লালনপালন করতে হবে। এমন অবস্থায় পড়াশোনার তাগিদে বাদী বিবাদীকে বিদেশে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু, আরিফুল জানান, তিনি বিদেশে যেতে অনিচ্ছুক এবং সংসারও করতে চান না। ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সমঝোতার মাধ্যমে আরিফুলকে তালাক দেন অনন্য।

অঙ্গীকার অনুযায়ী আরিফুল চৌধুরী ২০২০ সালের ২৩ জুলাই পর্যন্ত সন্তানদের ভরণপোষণের যাবতীয় খরচাদি দিয়ে আসছিলেন। করোনার মধ্যে জালিয়াতির মামলায় গ্রেপ্তার হন আরিফুল চৌধুরী। পরে তাকে ১১ বছরের অধিক সাজা দেন আদালত। এর পর থেকে সন্তানদের ভরণপোষণের খরচ বহন করে আসছেন অনন্যা। দুই সন্তান স্কুলে পড়ছে। আরিফুল চৌধুরীর কারাদণ্ড হওয়ার পর থেকে তার সন্তানরা সামাজিকভাবে হেয় হচ্ছে। এ কারণে তারা স্কুল পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে। অনন্যা এখন সন্তানদের নিয়ে কানাডায় গিয়ে নতুনভাবে জীবন গড়ার প্রচেষ্টা করছেন। এজন্য সন্তানদের আইনি অভিভাবকত্ব পাওয়া প্রয়োজন। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর অনন্যাকে কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন অফিস সন্তানদের অভিভাবকত্বের আইনি কাগজ দিতে বলে। তাই, সন্তানদের আইনি অভিভাবকত্ব চেয়ে মামলা করেছেন অনন্যা।

মামুন/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়