ঢাকা     শনিবার   ০৪ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২১ ১৪৩১

গেজেট জারির পরও মুক্তিযোদ্ধারা ‘সুবিধাবঞ্চিত’

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩১, ৫ এপ্রিল ২০২৩  
গেজেট জারির পরও মুক্তিযোদ্ধারা ‘সুবিধাবঞ্চিত’

বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশের সূর্য সন্তান। জীবন বাজি রেখে তাঁরা দেশ স্বাধীন করেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এ ত্যাগকে সম্মান জানিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, মৃত খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এবং শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারকে বাড়তি কিছু সুবিধা দিয়ে একটি (গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল, হোল্ডিং ট্যাক্স এবং পানি ও পয়োনিষ্কাশন বিল মওকুফ) গেজেট জারি করা হয়। কিন্তু আবেদন করেও যুদ্ধাহত এবং খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধারা সেসব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট প্রবিধান গেজেট আকারে জারি করে সরকার। এতে বলা হয়, সিটি করপোরেশন এলাকায় বসবাসরত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, মৃত খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এবং শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পুরো বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স এবং পানি ও পয়োনিষ্কাশন বিল মওকুফ সুবিধা পাবেন।

এ ছাড়াও, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, মৃত খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এবং শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার দুই বার্নার গ্যাস বিল এবং পুরো বাড়ির বিদ্যুৎ বিল মওকুফের সুবিধা পাবেন।

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স, পানি, পয়োনিষ্কাশন, পুরো বাড়ির বিদ্যুৎ এবং দুই বার্নারের গ্যাস বিল মওকুফের জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে আবেদন করেছেন যুদ্ধাহত ও খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধারা। আবেদনের তিন মাস পার হলেও এসব সুবিধা পাননি অনেক আবেদনকারী।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই কর্মকর্তা বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকায় বসবাসরত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, মৃত খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এবং শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পুরো বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স ২০১৩ সালে মওকুফ করা হয়েছে। এরপর থেকে তাদের আর হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হচ্ছে না।

জানা গেছে, পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল মওকুফের অনুরোধ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে আবেদন করেন যুদ্ধাহত ও খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধারা। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ডিপিডিসির নির্বাহী প্রকৌশলীকে তার বাড়ির বিদ্যুৎ বিল মওকুফের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে ঢাকার বাবর রোডে বাসার ঠিকানা, গ্রাহক ও মিটার নম্বরগুলোও উল্লেখ করা হয়।  

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বিদ্যুৎ বিল মওকুফ করতে আবেদন করেন মো. শাহজাহান কবীর বীরপ্রতীক। চিঠিতে তিনি তার বাসাবোর বাড়ির বিদ্যুৎ বিল মওকুফের অনুরোধ জানিয়েছেন। 

শাহজাহান কবীর বলেন, পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল মওকুফ করতে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে গেজেটের কপিসহ আবেদন করেছি, কিন্তু এখনো এসব সুবিধা পাচ্ছি না। অফিসগুলো এসব সুবিধা দিতে টালবাহানা করছে।

নাম প্রকাশ না করে খেতাবপ্রাপ্ত এক বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে আমাদের তালিকা ও ঠিকানা পাঠিয়ে দিলেই তারা সহজেই আমাদের এসব সুবিধা দিতে পারত। এটা না করে এখন আমাদের বিভিন্ন সরকারি অফিসে চেয়ে চেয়ে এসব সুবিধা নিতে হবে। বাড়তি কিছু সুবিধা দেওয়ার গেজেট জারি করেও সুবিধা পাওয়ার প্রক্রিয়াটিকে জটিল করা হয়েছে।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের এক কর্মকর্তা বলেন, গেজেট অনুযায়ী সবাইকে সুবিধা দিতে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি অফিসে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিল যারা মওকুফ করবেন সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, গেজেট অনুযায়ী যাদের এসব সুবিধা পাওয়ার কথা তারা আলাদা আলাদাভাবে আবেদন করলে এসব সুবিধা দেওয়া হবে। আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গেই সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের যাচাই করা হবে। যাচাইয়ে যারা পার হবেন, তারা সুবিধা পাবেন।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশের পর যারা আমাদের কাছে আবেদন করেছেন, তাদের সবার বিদ্যুৎ বিল মওকুফের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গেজেট অনুযায়ী যাদের বিদ্যুৎ বিল মওকুফ করার কথা, তারা আবেদন করলেই আমরা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। আর একারণে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সরকার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, মৃত খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এবং শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারকে বাড়তি কিছু সুবিধা দিয়ে একটি গেজেট জারি করা হয়। এর মধ্য থেকে কিছু সুবিধা পাচ্ছেন, বাকিগুলোও পাবেন।  

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ