ঢাকা     শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২০ ১৪৩১

স্মার্ট ঢাকা গড়ছে আ.লীগ সরকার, ভূগর্ভে যাবে বৈদ্যুতিক তার

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৩৮, ৫ নভেম্বর ২০২৩  
স্মার্ট ঢাকা গড়ছে আ.লীগ সরকার, ভূগর্ভে যাবে বৈদ্যুতিক তার

রাজধানীতে টেকসই ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতা তৈরি এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জঞ্জালমুক্ত সুন্দর স্মার্ট নগরী গড়তে আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম প্রকল্প ‘মাটির নিচে বৈদ্যুতিক তার’ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে বেশ জোরেশোরে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ঝুলন্ত বিদ্যুতের তার মাটির নিচে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের লাইন বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। কাজের সামগ্রিক অগ্রগতিও বেশ সন্তোষজনক। আগামী ৫ বছরের মধ্যে ঢাকা শহর বৈদ্যুতিক তার মুক্ত করা হবে। পুরো শহরে বৈদ্যুতিক তার থাকবে ভূগর্ভে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পাল্টে যাবে রাজধানীর চিত্র। থাকবে না কোনও তারের জঞ্জাল। কমবে দুর্ঘটনা। সম্ভব হবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সেবা দেওয়া। পুরো রাজধানীজুড়ে ডিশ, টেলিফোন ও ইন্টারনেটের তার পেঁচিয়ে ভয়ঙ্কর এক জঞ্জাল অবস্থা। পুরান ঢাকায় এ পরিস্থিতি আরও খারাপ। এভাবে সারাদেশে খুঁটি ও তারের কারণে প্রতিবছর গড়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে রাজধানীতে। গত সেপ্টেম্বরে অতিবর্ষণে মিরপুরের একটি রাস্তায় পানি জমে সেখানে বিদ্যুতের তার পড়ে চার জনের মৃত্যু হয়। এ অবস্থা থেকে রেহাই পেতে ঢাকার সড়কগুলোকে খুঁটি ও তারমুক্ত করতে যাচ্ছে সরকার। ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক লাইনের মাধ্যমে ঢাকাবাসীর ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, পাইলটিং কাজের অংশ হিসেবে ধানমন্ডির বেশ কয়েকটি সড়কে বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইন মাটির নিচে স্থাপন করা হচ্ছে। অভিজাত এ আবাসিক এলাকাকে চারটি ভাগে ভাগ করে কাজ করছে ডিপিডিসি। ২০২০ সালে বিদ্যুতের তার ভূগর্ভস্থ করা বিষয়ক ডিপিডিসির কাজ অনুমোদন পায়। শুরুতে প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। করোনা মহামারিসহ নানা কারণে প্রকল্প গতি হারায়। পরে ২০২৭ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহরের ১৯০ কিলোমিটার সড়কে এ কাজ করা হবে। ১ লাখ ১৫ হাজার গ্রাহক সেবা পাবেন। চীন সরকারের সঙ্গে জিটুজি পদ্ধতিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পাইলটিংয়ে সফলতা মিললে বড় পরিসরে কাজ করবে সরকার।

ডিপিডিসির প্রকল্প ও নির্বাহী পরিচালক আবদুল্লাহ নোমান রাইজিংবিডিকে বলেন, মাটির নিচে বিদ্যুতের তার নেওয়ার কাজ দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে। করোনার কারণে কাজের গতিটা কম ছিল, এখন তা পুরোদমে চলছে।  

ভূগর্ভস্থ তারের ফলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ঝড়-বৃষ্টির সময়ে অনেক সময় তার ছিঁড়ে যায়, শর্ট সার্কিট হয়ে যায়, সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। মাটির নিচে কেবল থাকলে এই সমস্যাটা আর হবে না। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনও সমস্যা হবে না। ধানমন্ডিতে এটা আমরা করছি। হয়তো ভবিষ্যতে ঢাকা শহরে মাটির নিচে আরও অগ্রগতি হবে।

নোমান বলেন, যেসব রোডে আমাদের এই কাজ হয়েছে, সেগুলো দেখতে অনেক সুন্দর ও উন্নত দেশের মতো। খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। ৩৬টির মধ্যে ১২টি রাস্তায় করা হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী যে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছেন, সেজন্য স্মার্ট শহর দরকার। ডিপিডিসি সেভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

ডিপিডিসি সূত্রে জানা গেছে, পুরনো সাবস্টেশনগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি থাকতো, যেগুলোর মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন গ্রাহকসেবা দেওয়া সম্ভব হতো না। কিন্তু এই প্রকল্প নেওয়ার পর ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক শক্তিশালী হবে। এই প্রজেক্টের মাধ্যমে মডার্ন স্কেডা প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে ডিপিডিসি। সুপারভাইজার কন্ট্রোল অ্যান্ড ডেটা ইকুজিশন এখানে স্টাবলিশড হবে। এটা হলে পুরো আধুনিকভাবে অপারেশন টেকনোলজি প্রয়োগ করতে পারবে ডিপিডিসি। একই সঙ্গে স্কেডার মাধ্যমে পুরো ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে উন্নত গ্রাহকসেবা নিশ্চিত হবে।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ডেসা থেকে যখন ডিপিডিসি হয়, তখন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যাচ্ছি। তখন আমাদের গ্রাহক ছিল ৬-৭ লাখ। এখন ১৭ লাখ। ফলে আমাদের নেটওয়ার্ক বড় হয়ে গেছে। আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দিয়ে যাচ্ছি। গ্রাহকের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা। ২০০৮ সালের পর থেকে ডেসার যে লাইনগুলো ছিল উপরে টানা, তা অনেক পুরনো জীর্ণশীর্ণ। এই লাইনগুলো দিয়ে আমাদের আসলে বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক ঠিকমত করা যাচ্ছিল না। একটু বৃষ্টি বা দুর্যোগ হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটতো। এই পরিস্থিতিতে ডিপিডিসির গ্রাহকসেবার মান বৃদ্ধি করতে ওভারডেডেট লাইনকে কীভাবে আমরা আন্ডারগ্রাউন্ডে নিতে পারি সে চিন্তা করি।’

ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক তারের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে কিন্তু বিদ্যুৎ লাইন আন্ডারগ্রাউন্ডে করেছে। আর আমাদের ঢাকা হলো রাজধানীর প্রশাসনিক, রাজনৈতিক, ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু। এখানে যদি আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে না পারি, তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্য রাজনীতি অর্থনীতি সব ব্যাঘাত ঘটবে। এজন্য আমরা মাটির নিচে তার নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে জিটুজি প্রকল্পের মাধ্যমে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ধানমন্ডিতে এই কাজ শুরু হয়। কিন্তু সেটা দেরি হচ্ছে বলে আরেকটি প্রকল্প হাতে নেয় ডিপিডিসি। যেখানে পুরনো তার আছে এবং ভিআইপি সড়ক, সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করতে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। অত্যন্ত ভিআইপি যেমন বঙ্গভবন থেকে জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত, আরেকটা হলো আজিমপুর থেকে গাবতলি। ইতোমধ্যে জাহাঙ্গীর গেট থেকে বাংলামটর পর্যন্ত আর ওদিক দিয়ে গাবতলি থেকে রেসিডেন্সিয়াল হয়ে ধানমন্ডির অনেকদূর এগিয়েছি কাজ। তবে সেবাখাতের প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন ওয়াসা, তিতাস, বিটিআরসি, সুয়ারেজ’র সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হয় বলে অনেক ক্ষেত্রে কাজ একটু ধীর হয়ে যায়। তবে সামগ্রিক কাজের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক।

অন্যদিকে, জিটুজি ভিত্তিতে কাজ হচ্ছে ধানমন্ডিতে। সেই কাজ ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ শেষ হয়েছে। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এটা নির্ভর করবে সিটি কর্পোরেশনের ওপর। কারণ সিটি কর্পোরেশনেরও অনেক কাজ হচ্ছে এবং তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হচ্ছে ডিপিডিসিকে।

ডিপিডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান রাইজিংবিডিকে আরও বলেন, ‘৪৫টি সাবস্টেশন হচ্ছে। প্রতিটি উপকেন্দ্রে কমপক্ষে দুটি সোর্স করছি। যাতে একটি বন্ধ হয়ে গেলে বিকল্প হিসেবে আরেকটি থাকে। মাটিরে নিচে লাইন যেহেতু, সেহেতু ফল্ট হওয়ার কোনও কারণ নেই। যদিও হয় কিছুদূর পরপর অপারেশন করতে বা মেইনটেইন করতে যাতে সুবিধা জয়, সে স্কোপ রাখছি। স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে স্মার্টভাবে মনিটরিংসহ সব ধরনের কর্মকাণ্ড স্মার্ট করছি।

জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নজরুল হামিদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ঢাকা শহর বৈদ্যুতিক তার মুক্ত করা হবে। পুরো শহরে আন্ডারগ্রাউন্ড হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে ধানমন্ডিতে এই প্রকল্পের কাজ অনেকটা শেষ হয়েছে। গ্রাহক সেবার মান উন্নয়নে ডিপিডিসি কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি, ঢাকা শহর আন্ডারগ্রাউন্ড কেবলে রূপান্তরিত করতে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এই শহর হবে স্মার্ট বিদ্যুৎব্যবস্থা।’

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়