ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

থাই পেয়ারা চাষ করে ভাগ্যবদল

রহিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৭, ২ আগস্ট ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
থাই পেয়ারা চাষ করে ভাগ্যবদল

সফল পেয়ারাচাষি মনিরুজ্জামান

এম এ রহিম, বেনাপোল : ব্যাগিং পদ্ধতিতে ত্রি জাতের থাই পেয়ারা চাষ করে ভাগ্য বদলেছেন যশোরের বেনাপোল ও শার্শা উপজেলার ছয় শতাধিক কৃষক। তাদের পরিবারে ফিরেছে সুদিন। ফলে এ অঞ্চলে বাড়ছে উন্নত জাতের থাই পেয়ারা চাষ।

 

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) উদ্ভাবন করা ‘থাই-৩’ হাইব্রিড জাতের পেয়ারায় ভরে গেছে শার্শার মাঠের পর মাঠ। এখন বছরের বারো মাসই পাওয়া যাবে পেয়ারা। ওই জাতের পেয়ারা চাষ করে কৃষকদের খুলে গেছে ভাগ্য। ছোট ছোট গাছে পেয়ারায় ভরে গেছে। পেয়ারাকে পোকামাকড় ও ধুলাবালি থেকে রক্ষায় ব্যবহৃত হচ্ছে ব্যাগিং পদ্ধতি। সকল খাই-খরচা বাদে প্রতি বিঘায় ২ লাখ টাকা ঘরে আনতে পারবেন বলে আশা করছেন কৃষকরা।

 

পেয়ারা চাষে সফলতার দৃষ্টান্ত বাগআচড়া কলোনির মনিরুজ্জামান ও বাহাদুরপুরের আবু রায়হান। তাদের সাফল্য দেখে এখানে অনেকেই পেয়ারা চাষে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। এখন এ অঞ্চলে অন্তত ছয় শতাধিক কৃষক অধিক লাভজনক এই থাই পেয়ারার চাষে ঝুঁকেছেন। এমনটাই জানালেন উপজেলা কৃষি অফিসার হীরক কুমার সরকার।

 

 

তিনি জানান, থাই-৩, ৫ ও ৭ জাতের পেয়ারা পাওয়া যায় বারো মাস। গাছগুলো দেখতে আকারে ছোট হলেও পেয়ারাগুলো দেশি পেয়ারার চেয়ে বেশ বড় হয়। দেখতে গোলাকার, রং হলুদ ও সবুজ। ওই পেয়ারার প্রতিটির ওজন ৭০০ গ্রাম থেকে এক কেজি। প্রতি কেজি পেয়ারা বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৯০ টাকায়।

 

বেনাপোল, বাহাদুরপুর, ধান্যখোলা, নাভারন, কাশিপুর, ফুলসরা, বাগআচড়াসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় হাজার বিঘা জমিতে থাই পেয়ারার চাষ হয়েছে বলে জানান উপজেলা কৃষি অফিসার।

 

জানা যায়, প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় ৬০-৮০ হাজার টাকা। পেয়ারা বিক্রি করে আসে দেড় থেকে ২ লাখ টাকা। পেয়ারা খেতে সাথি ফসল হিসেবে কুল, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, মরিচ, বেগুন, টমেটো, কলা, পেঁপে ও সবজি বিক্রি করেও বছরে আয় হচ্ছে ৬ লাখ টাকার উপরে- এমনটাই জানান সফল পেয়ারাচাষি মনিরুজ্জামান।

 

বাগআচড়া বসতপুর কলোনির মাদ্রাসাশিক্ষক পেয়ারাচাষি মনিরুজ্জামান আরো জানান, তিনি ১৫ বিঘা জমিতে থাই পেয়ারা চাষ করে খরচা বাদে চলতি মৌসুমে ১৫ লাখ টাকা ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করছেন।

 

বেনাপোল থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে বাহাদুরপুর বাঁওড়ের পশ্চিমে মেদের মাঠের জমিতে কখনো কৃষকরা ফসল ফলাতে পারেনি। ওই মাঠের ৩৬ বিঘা জমি ১০ বছরের জন্য ইজারা নিয়ে থাই জাতের পেয়ারা চাষ করে মাঠের বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন রায়হান উদ্দিন।

 

রায়হান উদ্দিন বলেন, ‘চার বছর আগে রাজশাহী থেকে ‘থাই-৩’ জাতের পেয়ারার চারা এনে ৪ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করি। তিন বছরে আমার লাভ হয়েছে ১৯ লাখ টাকা। এবার ওই মাঠের ৩৬ বিঘা জমিতে ৬ হাজার পেয়ারার চারা লাগিয়েছি। চলতি বছর সকল খরচ বাদেই ২০ লাখ টাকা ঘরে আসবে বলে আশা করছি।’

 

বাগআচড়ার রসুলপুর মাঠে কথা হয় পেয়ারাচাষি মাছুম বিল্লাহ, মতিয়ার রহমান, খোকন ও মিজানের সঙ্গে। মাছুম বলেন, ‘এই মাঠে এ বছর নতুন করে ২৫ বিঘা জমিতে পেয়ারা গাছ লাগাইছি। এক দিন বাদে এক দিন ৫০০ কেজি করে পেয়ারা পাচ্ছি। প্রতি কেজি পেয়ারা বিক্রি করছি ৫০-৯০ টাকায়। বিঘাপ্রতি ২ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করার আশা করছি।’

 

যশোর থেকে আসা পেয়ারা ক্রেতা সুমন হোসেন বলেন, ‘পেয়ারার দাম ভালো। ফলে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। প্রতিদিন শার্শা এলাকা থেকে ৩ থেকে ৪ হাজার কেজি পেয়ারা বিভিন্ন শহরে নিয়ে বিক্রি করেন তিনি।

 

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শওকত আলী বলেন, ‘দ্বিতীয় শস্য বহুমুখীকরণের আওতায় চাষিদের পেয়ারা চাষে প্রশিক্ষণ পরামর্শ দেওয়ায় পেয়ারা চাষ বেড়েছে।’

 

চাষি নুর ইসলাম বলেন, ‘মনিরুজ্জামান-মাসুম ভাইদের নতুন জাতের পেয়ারা চাষ দেখে ৮ বিঘা জমিতে থাই পেয়ারা লাগিয়েছি, ফলন হয়েছে ভালো।’ তিনি লাভবান হবেন বলে আশা করেন।

 

উপজেলায় কয়েক শ কৃষক পেয়ারা চাষে স্বাবলম্বী হয়েছেন বলে জানান শার্শা সদর উপজেলার চেয়ারম্যান সোয়ারাব হোসেন।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/বেনাপোল /২ আগস্ট ২০১৫/রহিম/টিপু/এএন

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়