ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

রোগীর দেহে ল্যাবরেটরিতে তৈরি হওয়া রক্ত!

প্রকাশিত: ১৭:০১, ৮ নভেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৭:০৬, ৮ নভেম্বর ২০২২
রোগীর দেহে ল্যাবরেটরিতে তৈরি হওয়া রক্ত!

চিকিৎসাবিজ্ঞানে এমন ঘটনা এই প্রথম। ল্যাবরেটরিতে অর্থাৎ গবেষণাগারে রক্ত উৎপাদন করেছেন ব্রিটেনের বিজ্ঞানীরা। আর তারা পরীক্ষামূলকভাবে সেই রক্ত দিয়েছেন মানুষের শরীরে।

বৃটিশ গবেষকরা জানান, বিশ্বে প্রথমবার গবেষণাগারে তৈরি রক্ত মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে। কয়েক চা-চামচের সম পরিমাণ রক্ত মানুষের শরীরে প্রয়োগ করে পরীক্ষার কারণ হচ্ছে, এই রক্তের ভূমিকা ও কার্যকারিতা যাচাই করা।

গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে রক্ত তৈরি করার পেছনে গবেষকদের প্রধান উদ্দেশ্যে হলো, বিরল গ্রুপের রক্ত তৈরি করা, যা সংগ্রহ করা খুব কঠিন। এছাড়া কিছু রোগের ক্ষেত্রে রোগীকে বারবার রক্ত দিতে হয়, অথচ এতো রক্তের জোগান পাওয়া সম্ভব হয় না। নতুন এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে এই সব সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা।

গবেষণাটি যৌথভাবে পরিচালনা করছে ব্রিস্টল, কেমব্রিজ, লন্ডন এবং ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ব্লাড এন্ড ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগের গবেষক দল।

সিএনবিসির খবরে বলা হয়েছে, পরীক্ষামূলকভাবে দুজন মানুষের দেহে গবেষণাগারে তৈরি রক্ত দেয়া হয়েছে। মোট দশজন স্বাস্থ্যবান স্বেচ্ছাসেবকের দেহে এই রক্ত প্রয়োগ করা হবে। তাদেরকে অন্তত চার মাসের ব্যবধানে ৫ হতে ১০ মিলিমিটার পরিমাণে দুবার গবেষণাগারে তৈরি রক্ত দেয়া হবে। এই রক্তের সঙ্গে ট্যাগ করে দেয়া হয়েছে তেজস্ক্রিয় চিহ্ন। ফলে বিজ্ঞানীরা দেখতে পাবেন এই রক্ত কতদিন শরীরে স্থায়ী হয়।

বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ল্যাবে তৈরি রক্ত সাধারণ রক্তের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হবে। লোহিত রক্তকোষ সাধারণত দেহে স্থায়ী হয় প্রায় ১২০দিন বা চার মাস। তারপরই তা বদলে ফেলতে হয়। সুস্থ মানুষের শরীরে তা এমনিতেই বদলে যায়।

সাধারণ রক্তে নতুন এবং পুরোনো- দুধরনের লোহিত রক্তকোষ থাকে। কিন্তু ল্যাবরেটরিতে তৈরি রক্তে সবই নতুন লোহিত রক্তকোষ, ফলে এই রক্ত পুরো ১২০ দিন কাজ করার কথা। গবেষকরা মনে করছেন, এর ফলে ভবিষ্যতে হয়তো রোগীর দেহে অত ঘন ঘন রক্ত দিতে হবে না, বা পরিমাণেও হয়তো কম লাগবে।

গবেষণাগারে রক্ত তৈরির করার জন্য গবেষকরা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দান করা রক্তের সামান্য নমুনা নিয়ে কাজ শুরু করেন। সেখান থেকে স্থিতিস্থাপক স্টেম সেলকে ম্যাগনেটিক বিডস দিয়ে আলাদা করা হয়। এসব সেল লাল রক্তকোষে পরিণত হওয়ার সক্ষমতা রাখে। স্টেম সেলকে ল্যাবরেটরিতে বড় আকারে বর্ধিত হতে অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়।সেগুলোকে লোহিত রক্তকোষে পরিণত করতে গাইড দেয়া হয়।

প্রায় তিন সপ্তাহ সময় লাগে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে। এ প্রক্রিয়ায় দেখা যায় শুরুতে প্রায় পাঁচ লাখ স্টেম সেল রূপান্তরিত হয়ে ৫০০০ কোটি লোহিত রক্তকোষে পরিণত হয়েছে। এরপর এই রক্তকে ফিল্টার করে সেখান থেকে পাওয়া যায় প্রায় ১৫০০ কোটি লোহিত রক্তকোষ। যা মানুষের দেহে ব্যবহারের উপযোগী।

তবে এক্ষেত্রে এখনো বড় ধরনের কিছু প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেসব কাটিয়ে উঠতে আরো অনেক গবেষণার প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

গবেষণাগারে তৈরি রক্ত যদি রোগীর দেহে কোনো সমস্যা না সৃষ্টি করে সুচারুভাবে সংবহন তন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে কার্যত একবিংশ শতকে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলবেন বিজ্ঞানীরা। সফল হওয়ার ব্যাপার বিজ্ঞানীরা খুবই আশাবাদী।

/ফিরোজ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়