ঢাকা     শনিবার   ০৪ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২১ ১৪৩১

অক্টোবরকে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস ঘোষণার দাবি

প্রকাশিত: ২২:৩০, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩  
অক্টোবরকে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস ঘোষণার দাবি

‘আমাদের বিশ্বকে সুরক্ষিত করি’- এই প্রতিপাদ্যে মাসজুড়ে সারাদেশে শুরু হতে যাচ্ছে অষ্টম সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস (ক্যাম) অক্টোবরের কর্মসূচি। বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও অক্টোবরকে ‘জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস’ ঘোষণা করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বিষয়ক জাতীয় কমিটি (এনসিসিএ)।

শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে অক্টোবর মাসব্যাপী সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা কর্মসূচি ঘোষণা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান এনসিসিএ’র নেতৃবৃন্দ।  

মোবাইল ফোন অপারেটর রবি এবং প্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সফোস ও সাইবার প্যারাডাইজের পৃষ্ঠপোষকতায় সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস অক্টোবর-২০২৩ এর কর্মসূচি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। এনসিসিএ’র এই আয়োজনে সহযোগী হিসেবে আছে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিক্যাফ), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি), নারী-শিশুদের অনলাইন সুরক্ষায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ১৪টি সংগঠনের প্রতিনিধিত্বকারী প্লাটফর্ম ‘সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন (সিএসডব্লিউসি) এবং প্রযুক্তি পেশাজীবীদের সংগঠন বাংলাদেশ সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরস ফোরাম (বিডিএসএএফ)। 

অনুষ্ঠানে কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরেন সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বিষয়ক জাতীয় কমিটির সদস্য, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লি. এর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা প্রকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান। সিক্যাফ সভাপতি কাজী মুস্তাফিজের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন রবির সাইবার সিকিউটি অ্যান্ড প্রাইভেসি বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় চক্রবর্ত্তী, ইন্টারনেট সোসাইটি বাংলাদেশের জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ কাওছার উদ্দিন, এনসিসিএ সদস্য মো. আবুল হাসান, বাংলাদেশ সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরস ফোরামের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আশফাকুর রহমান, ব্লাস্টের সহকারী পরিচালক-শালিস ও সিএসডব্লিউসির উপদেষ্টা তাপসী রাবেয়া প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের গবেষণার বরাত দিয়ে জানানো হয়, দেশে ২০২২ সালে সংঘটিত নতুন ধরনের অপরাধের মাত্রা বেড়েছে ২৮১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। নিত্যনতুন ও অভিনব কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে সাইবার দুর্বৃত্তরা। এসব অপরাধের মধ্যে রয়েছে নানা মাত্রিক প্রতারণা। যেমন: চাকরি দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস, ভুয়া অ্যাপসে ঋণ দেওয়ার ফাঁদ, সেবা বা পণ্য বিক্রির নামে প্রতারণা, ইত্যাদি)। ২০২২ সালে ভুক্তভোগীদের ১৪ দশমিক ৬৪ শতাংশই অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। সাইবার অপরাধে শিশু ভুক্তভোগীদের হার বেড়েছে ১৪০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ভুক্তভোগীদের ৭৫ শতাংশই তরুণ, যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। জেন্ডারভিত্তিক তুলনামূলক পরিসংখ্যানে সাইবার অপরাধের ভুক্তভোগীদের মধ্যে নারীদের হার বেশি (৫৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ)। 

ভুক্তভোগীদের মধ্যে আইনের আশ্রয় নেওয়ার সংখ্যা দিন দিন কমছে। ২০১৮ সালের জরিপে যেখানে অভিযোগকারীর শতকরা হার ছিল ৬১ শতাংশ, ২০২৩ এ গিয়ে তা কমে ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশে নেমেছে।  আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হার (২৪ শতাংশ) প্রচলিত আইন সম্পর্কে না জানা। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বিষয়টি গোপন রাখতে ২০ শতাংশ এবং তৃতীয়ত আইনি ব্যবস্থা নিয়ে উল্টো হয়রানির ভয়ের কথা জানিয়েছেন ১৮ শতাংশ ভুক্তভোগী।  

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইডিতে বহুস্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড, ফিশিং চেনার উপায় এবং নিয়মিত সফটওয়্যার হালনাগাদ- এই চারটি বিষয় মেনে চললে অনলাইনে ব্যবহারকারী নিজেই অনলাইনে নিজের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে পারবেন।  

এবারের ক্যাম কর্মসূচির থিম বা প্রতিপাদ্য: ২০২৩ সালে বাংলাভাষীদের জন্য ‘আমাদের বিশ্বকে সুরক্ষিত করি’ প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে এনসিসিএ। অক্টোবরের চার সপ্তাহে সুরক্ষার মৌলিক চারটি বার্তা প্রচারের মাধ্যমে সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে যে, আপনার তথ্য সুরক্ষিত রাখার সব ধরনের উপায় আছে। মাত্র চারটি মূল পদক্ষেপ অনুসরণ করলে সাইবার নিরাপত্তা বজায় রাখা কঠিন হবে না। কয়েকটি ক্লিকের মাধ্যমে আপনি অনলাইনে আপনার তথ্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখতে পারেন।  বার্তাগুলো হলো- প্রথম সপ্তাহ (১-৭): মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চালু করুন, দ্বিতীয় সপ্তাহ (৮-১৪): শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন, তৃতীয় সপ্তাহ (১৫-২১): ফিশিং চিনুন এবং রিপোর্ট করুন, চতুর্থ সপ্তাহ (২২-২৮): আপনার সফ্টওয়্যার আপডেট করুন। 

জাতীয় কমিটির কর্মসূচি: মাসব্যাপী ক্যাম ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সচেতনতার বার্তা সারাদেশে পৌঁছে দিতে যেকোনো ব্যক্তি/সংগঠনকে এই কর্মসূচিতে যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে এনসিসিএ। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অনলাইনে www.cyberawarebd.com এ রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে বাংলা টুল‌কিটসহ বিনামূল্যে বিভিন্ন উপকরণ পাবেন এবং এর মাধ্যমে প্রচারাভিযান করতে পারবেন।

তৃণমূল ছাড়াও জাতীয় পর্যায়ে কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- মাসব্যাপী সারাদেশে এসএমএস ক্যাম্পেইন, সারাদেশ থেকে সামাজিক সংগঠকদের কর্মশালা, সাইবার সুরক্ষা বিষয়ক আলোচনা সভা, প্রতি সপ্তাহে বিশিষ্টজনদের নিয়ে বিষয়ভিত্তিক ওয়েবিনার, স্যোশাল মিডিয়ায় ক্যাম্পেইন ইত্যাদি।  

অক্টোবরের ক্যাম কর্মসূচি: আমেরিকার ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যালায়েন্স (এনসিএসএ) এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি এজেন্সি (সিআইএসএ) পৃথিবীজুড়ে সাইবার সচেতনতা মাসের এই ক্যাম্পেইনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। ২০০৪ সাল থেকে বিভিন্ন দেশের অগণিত বাণিজ্যিক সামাজিক প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ের অসংখ্য ‘সাইবার চ্যাম্পিয়ন’ সাইবার সচেতনতা মাসের কর্মসূচিতে অংশ নেয়।  বাংলাদেশে ২০১৬ সা‌লে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউ‌ন্ডেশ‌ন (সিক্যাফ) এই কর্মসূ‌চির সূচনা করে। ২০২১ সালে জাতীয় কমিটি গঠনের মাধ্য‌মে তৃণমূলের সামাজিক সংগঠকদের যুক্ত করা শুরু হয়। ২০২২ সালে সারাদেশ থেকে ২২৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই ক্যাম্পেইনে অংশ নিয়েছে। এ বছরও এই কর্মসূচিকে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

/ফিরোজ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়