ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ফিটকিরিতে পানিবাহিত জন্ডিস প্রতিরোধ হয়?

ডা. সজল আশফাক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফিটকিরিতে পানিবাহিত জন্ডিস প্রতিরোধ হয়?

ডা. সজল আশফাক : বন্যার সময় ও বন্যার পর পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। কারণ, এ সময় বিশুদ্ধ বা নিরাপদ পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। ফলে অজ্ঞতা কিংবা অসাবধানতায় অনেকেই দূষিত পানি ব্যবহার করে থাকেন। দূষিত পানির এই ব্যবহার থালা-বাসন ধোয়া কিংবা গোসল করা থেকে শুরু করে পান করা পর্যন্ত গড়ায়। নিরাপদ বা বিশুদ্ধ পানি সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকার কারণে কিংবা স্বাস্থ্যসম্মত জীবনধারণের বিষয়ে সচেতন না হওয়ায় সাধারণ লোকজন পানিবাহিত রোগে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয়।

পানিবাহিত রোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, ডায়রিয়া, আমাশয়, রক্ত আমাশয়, কৃমি সংক্রমণ ও ভাইরাল হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘ই’।

পানিবাহিত এসব রোগ শুধু দূষিত পানির মাধ্যমেই ছড়ায় না, রোগাক্রান্ত ব্যক্তির মলে বসা মাছি যদি খাবারের ওপর বসে তাহলে সেই খাবারও জীবাণুযুক্ত হয়ে দূষিত হয়ে পড়ে। আর তাই খাবার-দাবার ঢেকে রাখার কথা বলা হয়।

এ ছাড়া পানিবাহিত রোগ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সবার আগে যে বিষয়ে সচেতন হতে হবে, তা হচ্ছে নিরাপদ পানি ব্যবহার নিশ্চিত করা। নিরাপদ পানি বলতে আমরা এমন পানিকে বুঝব, যা জীবাণুমুক্ত। অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, প্যারাসাইট ইত্যাদির কোনোটিই বিশুদ্ধ পানিতে থাকবে না। এই নিরাপদ পানি সংগ্রহ করা সর্বসাধারণের কাছে সহজলভ্য নয়।

ঘরোয়াভাবে পানিকে নিরাপদ বা বিশুদ্ধ করার জন্য যে পদ্ধতিগুলো প্রচলিত আছে, সেগুলো হচ্ছে পানি ফুটিয়ে পান করা, নলকূপের পানি পান করা, পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি নিয়মানুযায়ী ব্যবহার করা এবং পানিতে নিয়মানুযায়ী ফিটকিরি ব্যবহার করা। কিন্তু এসব পদ্ধতির মধ্যে পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি ও ফিটকিরি দিয়ে সব ধরনের জীবাণু ধ্বংস হয় না।

অনেকেরই ধারণা, পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি ও ফিটকিরি নিয়মানুযায়ী পানিতে ব্যবহার করলেই পানি বিশুদ্ধ হয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে এই ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়। পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি ও ফিটকিরি পানিতে নিয়মানুযায়ী ব্যবহার করলে পানির কিছু কিছু জীবাণু যেমন ব্যাকরেটরিয়া ও প্যারাসাইট ধ্বংস হয়, কিন্তু ভাইরাস ধ্বংস হয় না। এ ক্ষেত্রে টাইফয়েড, ডায়রিয়া, আমাশয় ও কৃমিসংক্রমণ জাতীয় রোগ থেকে রেহাই পাওয়া গেলেও হেপাটাইটিস ‘এ’ এবং ‘ই’ ভাইরাসজনিত রোগ (সাধারণের কাছে যা জন্ডিস বলে পরিচিত) থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না।

পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি ও ফিটকিরির মাধ্যমে পানিবাহিত ভাইরাসজনিত জন্ডিসের জীবাণু ধ্বংস হয় না। পানিবাহিত জন্ডিস প্রতিরোধের জন্য পানিকে টগবগ করে অন্তত ১৫ মিনিট ফুটাতে হবে। পানিবাহিত জন্ডিস শিশু ও গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। গর্ভাবস্থায় জন্ডিস মায়ের জন্য যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি গর্ভস্থ শিশুর জন্যও ঝুঁকির কারণ হতে পারে। গর্ভাবস্থায় জন্ডিসের কারণে প্রসব পরবর্তী রক্তপাত বৃদ্ধি ও লিভারের তীব্র অসুস্থতার কারণে জীবন আশঙ্কাপূর্ণ হতে পারে। তা ছাড়া এ কারণে গর্ভপাত, অকাল প্রসব, গর্ভে মৃত সন্তান এবং গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে। কাজেই পানি ফুটিয়ে পান করাই নিরাপদ। এর পরিবর্তে নলকূপের পানিও পান করা যাবে।

পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি ও ফিটকিরি দিয়ে পানিবাহিত জন্ডিস প্রতিরোধ হবে না। তাই ঝুঁকি না নিয়ে কষ্ট করে হলেও ফুটানো পানি ও নলকূপের পানি ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় ফুটানো পানি বা নলকূপের পানি পান না করলে মা ও গর্ভস্থ শিশুর উভয়কেই ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হবে। ফিটকিরি বা পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি নয়, ফুটানো পানি ও নলকূপের পানিই সবচেয়ে নিরাপদ।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, নাক কান গলা বিভাগ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/ইভা/এসএন/এএন

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়