ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

পদ্ম ফুলে নয়নাভিরাম বলাকইড় বিল

বাদল সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৯, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পদ্ম ফুলে নয়নাভিরাম বলাকইড় বিল

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি: ঋতুর হিসাবে বর্ষা ফুরালেও প্রকৃতির তারতম্যে এখনো রয়ে গেছে বর্ষার আমেজ। বর্যাকালের মতো গোপালগঞ্জের বিল এখনো ভরে উঠছে পদ্ম ফুলের অপার সৌন্দর্য্যে।

গোপালগঞ্জের যে বিলে সবচেয়ে বেশি তার নাম বলাকইড় বিল। এ বিলটি পদ্মবিল নামেও পরিচিত। বলাকইড় বিলের অবস্থান জেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে। জানা গেছে, ১৯৮৮ সালের পর থেকে বর্ষাকালে এ বিলের অধিকাংশ জমিতেই প্রাকৃতিকভাবে পদ্মফুল ফুটছে।

এ সময়ে বিলের চারদিকে শুধু পদ্ম আর পদ্ম। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গোলাপি রং এর পদ্ম দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। রয়েছে সাদা পদ্মও। চোখ যত দূর যায় শুধু পদ্ম আর পদ্ম। ৬৪টি পাপড়ি মেলে প্রকৃতিপ্রেমিদের স্বাগত জানায় জলজ ফুলের রানী।

তাইতো এমন অপরূপ দৃশ্য দেখতে ছুটে আসেন প্রকৃতিপ্রেমিরা। ভিড় জমান বলাকইড় বিলে। নৌকা নিয়ে বেড়িয়ে আসেন বিলের বহুদূর অবধি। আকাশে সূর্য উঁকি দেওয়ার পরপরই বিলে আসেন পর্যটকরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, এ বিলের সৌন্দর্য ও পদ্ম দেখার জন্য প্রতিদিনই ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। তারা নৌকায় ঘুরে সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। স্থানীয়রাও ভ্রমণ পিপাসুদের সার্বিক সহযোগিতা করছেন।



বর্ষা মৌসুমে এ বিলে প্রায় ১০ হাত পা‌নি‌ থাকে। সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের এ সময় কোন কাজ থা‌কে না। তাই শুধু সৌন্দর্যই নয় বর্যা মৌসুমে কোনো কাজ না থাকায় এ বিলে জন্ম নেওয়া পদ্ম ফুল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন শত শত পরিবার। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজায় পদ্ম ফুলের চাহিদা থাকায় ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত বিল থেকে পদ্মফুল তুলে বাজারে বিক্রি করছেন।

বিল এলাকায় মূল্য কম থাকলেও শহরে এক একটি ফুল ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি করছেন। এতে দৈ‌নিক ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা উপার্জন করছেন তারা। এছাড়া এ বিলের পদ্ম ফুল ঢাকা, খুলনা, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছে পাইকাররা।

স্থানীয় বাসিন্দা কাইমুজ্জামান সরদার ব‌লেন, ‘১৯৮৮ সা‌লের বন্যার পর থেকে এ বিলে পদ্মফুল ফুটতে দেখা যায়। প্রতি বছরই ফুলের সংখ্যা ও প‌রিধি বৃ‌দ্ধি পাচ্ছে।’

সাহাবু‌দ্দিন শেখ (৬০) বলেন, ‘প্রতি‌দিন অনেক মানুষ দল বেঁধে পদ্মফুল দেখার জন্য পদ্ম বি‌লে আসছেন। তারা নৌকা ভাড়া করে বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। স্থানীয় ভ্রমণ পিপাসুদের সহিযোগিতা করছেন তারা।’

হাসমত আলী শেখ (৭২) বলেন, ‘হিন্দু ধর্মালম্বীরা বি‌ভিন্ন পূজা পার্বণে পদ্মফুলের ব্যবহার করেন। তাই এলাকার শ্রমজীবী মানুষ ফুল ও ফল বি‌ক্রি করে জী‌বিকা নির্বাহ করছেন।’



ঘুরতে আসা শিশু মেহজাবিন মোহনা, প্রত্যাশা মন্ডল বলেন, ‘স্কুল থাকায় তেমন একটা ঘুরতে যেতে পারি না। তাই ছুটির দিতে বিলে পদ্ম দেখতে এসেছি। পদ্ম দেখে খুব ভাল লাগছে।’

নিউটন মেল্যা, সালমা আক্তার কেয়া জানান, প্রতিদিনই অসংখ্য পর্যটক বিলে পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে আসেন। কিন্তু এখানে থাকার বা বসার কোন ব্যবস্থা নেই।

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সমীর কুমার গোস্বামী জানান, বর্ষা মৌসুমে এ বিলে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া পদ্মফুল একদিকে যেমন বিলের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করছে তেমনি কাজ না থাকা লোকজন ফুল বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।

গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থল। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকের এখানে আসেন। সেখানে থেকে তারা পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে বলাকইড় বিলে ছুটে যান।’ যাতে তাদের কোন সমস্যা না হয় তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।




রাইজিংবিডি/গোপালগঞ্জ/৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮/বাদল সাহা/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়