ফুটবলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা বৈরিতা
আমিনুল || রাইজিংবিডি.কম
মাঠে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা দলের রুদ্রমূর্তি পরিস্থিতি
ক্রীড়া ডেস্ক : বৈরিতা খুঁজতে গেলে প্রায় সবখানেই খুঁজে বের কার যাবে। তবে খেলার মাঠে বৈরিতা একটুে বেশিই চোখে পড়ে। বিশেষ করে ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যে।
তবে বিশ্বকাপ আসলে এই বৈরিতা মারাত্মক আকার ধারণ করে। ফুটবলে ব্রজিল-আর্জেন্টিনার বৈরিতার সঙ্গে আর কারো তুলনা হয় না।
২০১৪ বিশ্বকাপের আয়োজক এবার ব্রাজিল। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল উভয় দেশের সমর্থকরাই চান তাদের দল জিতুক। আর সেটা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে একটাই চাওয়া ‘চিরশত্রু’ যেন না জেতে!
ব্রাজিলের ফুটবল পাগল মানুষদের কাছে ‘চিরশত্রু’ মানেই আর্জেন্টিনা। এই সত্যটি আবার উঠে এসেছে নিউটন সিজার সান্টোসের লেখা ৬০০ পৃষ্ঠার একটি বইয়ে। বইয়ের নাম, ‘ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা: স্টোরিজ অফ দ্য বিগেস্ট ক্লাসিক ইন ওয়ার্ল্ড ফুটবল’।
ব্রাজিল বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে যে বইটির কয়েক লক্ষ কপি বিক্রি হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ বই পড়লে ফুটবলের দুই পরাশক্তি সম্পর্কে অনেক মজার তথ্যই জানা যাবে।
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার মুখোমুখি লড়াইয়ে কে বেশিবার জিতেছে এ নিয়ে দুই দেশের তথ্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দুই রকম। প্রথম অফিসিয়াল ম্যাচ কবে খেলা হয়েছিল এ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে বলে দুই দেশই দাবি করে, বেশি ম্যাচ তারাই জিতেছে। তবে ‘ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা: স্টোরিজ অফ দ্য বিগেস্ট ক্লাসিক ইন ওয়ার্ল্ড ফুটবল’ গ্রন্থে নিউটন সিজার সান্টোস লিখেছেন, এ পর্যন্ত আর্জেন্টিনার সঙ্গে মোট ৯৯ বারের দ্বেরথে দুই বার বেশি জিতেছে ব্রাজিল। এ দুই প্রতিবেশী দেশের প্রথম অফিসিয়াল ম্যাচটি হয়েছিল ১৯১৪ সালের ২৭ জুন।
আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচ ১-০ গোলে জিতে বিজয়োল্লাস করতে করতে দেশে ফিরেছিলেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলাররা।
এমনিতে ব্রাজিলের অনেক আগে ফুটবল খেলতে শুরু করেছিল আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার জাতীয় দল ফুটবল বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের লড়াইয়ে নামে ১৯০২ সালে। অন্যদিকে ব্রাজিলের জাতীয় দল গড়া হয় ১৯১৪ সালে। তার মানে, জাতীয় দল যে বছর গড়া হলো সে বছরই আর্জেন্টিনায় গিয়ে বিজয়ীর বেশে ফিরেছিলেন ‘সাম্বা ফুটবল’ এর শিল্পীরা।
সেই থেকে আন্তর্জাতিক পরিসরে সাফল্যের বিচারেও আর্জেন্টিনাকে পিছনে ফেলতে থাকে ব্রাজিল। নিজের লেখা বইয়ে সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন নিউটন সিজার সান্টোস। ব্রাজিল পরে ফুটবল খেলা শুরু করেও প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনার আগে, ১৯৫৮ সালে।
তারপর সাফল্যের ধারায় থেকে ১৯৭০ সালে তৃতীয় বার চ্যাম্পিয়ন হয়ে জুলে রিমে ট্রফিটাও দেশে নিয়ে যায় চিরতরে। আর্জেন্টিনা প্রথমবার বিশ্বকাপ জেতে তারও আট বছর পরে ১৯৭৮ সালে।
এবার যখন ব্রাজিলে বসবে আরেকটি আসর তখন বিশ্বকাপ জয়ের হিসেবে আর্জেন্টিনার চেয়ে ৫-২ ব্যাবধানে এগিয়ে ব্রাজিল। ব্যাবধানটাকে কি ৫-৩ এ নামিয়ে আনতে পারবে লিওনেল মেসির দল?
পারলে আর্জেন্টিনা ভাসবে আনন্দের বন্যায় আর ব্রাজিল ডুবে যাবে হতাশায়, জ্বলে উঠবে বিক্ষোভের আগুন। দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণে ব্যয় না করে বিপুল ব্যয়ে বিশ্বকাপ আয়োজন করা হচ্ছে বলে সরকার বিরোধীরা অনেকদিন ধরেই ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে। ব্রাজিলের অধিকাংশ নাগরিকের মতো ফুটবল বিশেষজ্ঞ নিউটন সিজার সান্টোসেরও আশঙ্কা নেইমারের দল বিশ্বকাপ জিততে ব্যর্থ হলে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ তুঙ্গে উঠবে।
এ কারণে ব্রাজিলের সাধারণ মানুষ এবার আরো বেশি করে চায় নিজেদের দেশে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপটা নিজেদের দলই জিতুক। তাদের আরেকটি চাওয়া ব্রাজিল যদি না জেতে তাহলে অন্য যে কোনো দল জিতুক, তবে আর্জেন্টিনা যেন না জেতে। আর্জেন্টিনা সমর্থকদের ভাবনাও মোটামুটি একইরকম।
তথ্যসূত্র : ডিডব্লিউ
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ জুন ২০১৪/আমিনুল
রাইজিংবিডি.কম