ব্রাজিলের সেরা ১০ তারকা (শেষ পর্ব)
ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম
ফুটবলকে যদি শিল্প ধরা হয় তাহলে সন্দেহাতীতভাবে শিল্পী লাতিন ফুটবলাররা। আরও নিশ্চিত করে বলতে গেলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফুটবলাররাই সেই সুরের শিল্পী। পেলে হতে শুরু করে নেইমার, ম্যারাডোনা হতে মেসি যুগে যুগে পায়ের ছন্দে মাতোয়ারা রেখেছিলেন ফুটবল ভক্তদের। লাতিন ফুটবলের মর্যাদার আসর কোপা আমেরিকার ফাইনালে দুই দল মুখোমুখি। ২০০৭ সালের পর এই প্রথম মেসি-নেইমাররা লড়বে ট্রফির লড়াইয়ে।
রোববার (১১ জুলাই) বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টায় ফাইনাল শুরুর আগে পাঠকদের জন্য নানা আয়োজন নিয়ে হাজির রাইজিংবিডি। আজ থাকছে ব্রাজিলের অতীত-বর্তমান মিলিয়ে সেরা ১০ ফুটবলারকে নিয়ে বিশেষ লেখার শেষ পর্ব ।
৬. জারজিনহো
ব্রাজিলের হয়ে ১৯৭০ সালে বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার জারজিনহো। তার ফুটবল দক্ষতার জন্য তিনি ব্রাজিলের ইতিহাসে অন্যতম একজন ফুটবলার। বিশেষ করে দলের প্রয়োজনে যে কোনো পজিশনেই নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার দারুণ দক্ষতা ছিল রাইট উইং হিসেবে দলে আসা এই ফুটবলারের। ব্রাজিলের হয়ে একটি বিশ্বকাপের ফাইনালসহ প্রত্যেক ম্যাচে গোল করা রেকর্ড রয়েছে তার। ১৯৬৬, ১৯৭০ আর ১৯৭৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের হয়ে খেলেছিলেনি তিনি।
বল পায়ে অসাধারণ কিছু দক্ষতা দেখাতেন তিনি। তার ফিনিশিং নজর কেড়ে নিতো সবার। গোলে শ্যুটিংয়ে তিনি ছিলেন দুর্ধর্ষ। ব্রাজিলের আরেক কিংবদন্তি গারিঞ্চাকে আইডল হিসেবে মানতেন জার্জিনহো। মাত্র ১৯ বছর বয়সে ব্রাজিলের জার্সিতে মাঠে নামেন তিনি। ১৯৮২ সালে চেকোস্লোভাকিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে বিদায়ী সংবর্ধনা পান জারজিনহো। ক্যারিয়ারে ৮১ ম্যাচে ৩৩ গোল করেন তিনি।
৭.রোমারিও
ব্রাজিল জাতীয় দলের অন্যতম এক ফুটবলারের নাম রোমারিও। ১৯৯০ ও ৯৪ সালে ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ দলে ডাক পান তিনি। তবে ৯০ বিশ্বকাপে তাকে মাত্র এক ম্যাচে মাঠে নামান তৎকালীন কোচ কার্লোস আলবার্তো পেরেইরা। সেবার নকআউট পর্বে আর্জেন্টিনার কাছে হেরে বিদায় নেয় ব্রাজিল। অবশ্য এরপর ক্লাব ক্যারিয়ারের দুর্দান্ত ফুটবল খেলতে থাকেন তিনি। যার কারণে জার্মানির বিপক্ষে এক প্রীতি ম্যাচে দলে ডাকা হয় তাকে। তবে দলে ডেকেও তাকে মাঠে না নাামনোর কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এরপর কোচ তাকে জাতীয় দলে নিষিদ্ধ করেন।
রোমারিও না থাকায় ১৯৯৪ বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব থেকে ছিটকে পড়তে যাচ্ছিল ব্রাজিল। বাছাইয়ের প্রথম সাত ম্যাচে তাকে দলে জায়গা দেননি পেরেইরা। এরপর বলিভিয়ার সঙ্গে লজ্জাজনক হারের পর ঘরের মাঠে উরুগুয়েকে হারাতে না পারলেই বাদ পড়তে হতো তাদের। সেবার সমর্থক ও সাংবাদিকদের চাপে পড়ে তাকে মাঠে নামান কোচ। মারাকানা স্টেডিয়ামে ব্রাজিলকে সেই ম্যাচে জোড়া গোল করে ২-০ ব্যবধানে জিতিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপের মূলপর্বে জায়গা করে দেন তিনি। সেবার বিশ্বকাপে পাঁচ গোল করে ব্রাজিলের শিরোপা জয়ের নায়ক হন রোমেরো। পরবর্তীতে ইনজুরি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ১৯৯৮ ও ২০০২ এর বিশ্বকাপে জায়গা হয়নি তার।
২০০৫ সালে গুয়েতামালার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ব্রাজিলের জার্সি পরে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেন রোমেরো। জাতীয় দলের হয়ে ৮৫ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে তিনি ৭১ টি গোল করেছেন।
৮.ফালকাও
ব্রাজিলের আরেক সফলতম ফুটবলার পাওলো রবার্টো ফালকাও। সাও পাওলোতে ইন্টারনালিয়ালাল এবং রোমার ইতিহাসে সেরা খেলোয়াড়ের মধ্যে অন্যতম একজন তিনি। ব্রাজিলের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলারদের মধ্যে সর্বজনীনভাবে বিবেচিত ফালকাও। ১৯৮০ দশকে তিনি ছিলেন বিশ্বের সর্বোচ্চ বেতনপ্রাপ্ত ফুটবলার। রোমার হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করায় ‘রোমের অষ্টম রাজা রোম’ উপনামটি অর্জন করেছিলেন তিনি।
ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে ১৯৮২ সালে বিশ্বকাপে জিকো, সক্রেটস এবং এডারের পাশে মিডফিল্ডে খেলেছিলেন তিনি। সেবার ব্রাজিলের দলকে সর্বকালের সেরা দল হিসেবেও বলা হয়েছিল।
৯.রোনালদিনহো
১৯৯৭ সালে ব্রাজিলের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ নতুন এক ফুটবলারের জন্ম হয়। তার নাম রোনালদিনহো। যাকে ব্রাজিলের প্লেমেকার বলা হয়ে থাকে। ওই বছরই তিনি ব্রাজিলের জাতীয় দলে ডাক পান। দু’বছর পর ব্রাজিলের হয়ে কোপা আমেরিকা জয়ের মূল কারিগরদের একজন হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেন রোনালদিনহো। সেই সময়ে নিজেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা তরুণ প্রতিভাবান হিসেবে পরিচিত করেন তিনি। তখন বিশ্বের বিভিন্ন ক্লাবগুলোর মাঝে সাড়া ফেলে দিতে সক্ষম হন তিনি।
নাম ডাকের কারণে ইংলিশ ক্লাব আর্সেনালে ডাক পেলেও ওয়ার্ক পারমিটের কারণে সেখানে খেলা হয়নি তার। পরে ২০০১ সালে ব্রাজিলের গ্রেমিও থেকে তিনি যোগ দেন ফ্রান্সের প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনে (পিএসজি)। শুরু দিকে দলে নিয়মিত সুযোগ হয়নি তার। পরের মৌসুমেই পিএসজিকে লীগ কাপের ফাইনালে নিয়ে যান এবং পারফর্ম্যান্স দিয়েই আবার সবার নজর কাড়েন। সেই মৌসুমে ফরাসি ক্লাবটি ছেড়ে বার্সেলোনায় যোগ দেন তিনি। মূলত বার্সার সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা মিডফিল্ডার ডেভিড বেকহামকে দলে নিতে না পারায় তাকে দলে টেনে নেন। এরই মাঝে ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে পঞ্চম শিরোপা জিতিয়ে বিশ্বকে নিজের জাত আরও একবার চেনান তিনি।
বিশ্বকাপের পর রোনালদিনহো বার্সার হয়ে মাঠ মাতাতে শুরু করেন। তখনকার চির প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকে হারানোর ম্যাচে তার অবদান ছিল চোখে পড়ার মতো। তার জাদুকরী ফুটবল দক্ষতার গুণে ২০০৪ ও ২০০৫ সালের ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার লাভ করেন তিনি। তার ছন্দময় ফুটবলে ২০০৪-০৫ মৌসুমের লা-লিগা শিরোপা জিতে বার্সা।
১০.নেইমার
ব্রাজিলের সেরা ১০ জনের মধ্যে এই যুগের নেইমারও জায়গা করে নেবেন। মাঠে অসাধারণ ড্রিবলিং কারিকুরির সঙ্গে আছে গোল করার অসামান্য দক্ষতা। বর্তমান ব্রাজিল দলের প্রাণভোমরা তিনিই। বার্সেলোনা থেকে রেকর্ড ট্রান্সফারে পাড়ি জমান প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনতে (পিএসজি)।
ব্রাজিল দলের হয়ে ইতিমধ্যে ১০৭ ম্যাচে করে ফেলেছেন ৬৮ গোল। যে কোনো সময় ভেঙে দিতে পারেন পেলের রেকর্ড (৭৭)। আর এটা করতে পারলেই নেইমার হয়ে যাবেন ব্রাজিলের জার্সিতে সর্বোচ্চ গোলদাতা। এই কোপাতেও আছেন দারুণ ফর্মে, ৫ ম্যাচে ৩টি অ্যাসিস্টের সঙ্গে দিয়েছেন ২টি গোলও। নেইমার ব্রাজিলের হয়ে ২০১৬ অলিম্পিকে গোল্ড মেডেল জেতেন, ২০১৩ সালে কনফেডারেশন্স কাপ জেতেন। ২০১৯ সালে ব্রাজিল কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন হলেও নেইমার ইনজুরির কারণে দলে ছিলেন না। এবার কোপা জিততে পারলেই জায়গা নিয়ে নেবেন ইতিহাসের পাতায়।
ঢাকা/রিয়াদ
আরো পড়ুন