ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ব্রাজিলের সেরা ১০ তারকা (প্রথম পর্ব)

ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৭, ৯ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৩:২৮, ৯ জুলাই ২০২১
ব্রাজিলের সেরা ১০ তারকা (প্রথম পর্ব)

ফুটবলকে যদি শিল্প ধরা হয় তাহলে সন্দেহাতীতভাবে শিল্পী লাতিন ফুটবলাররা। আরও নিশ্চিত করে বলতে গেলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফুটবলাররাই সেই সুরের শিল্পী। পেলে হতে শুরু করে নেইমার, ম্যারাডোনা হতে মেসি যুগে যুগে পায়ের ছন্দে মাতোয়ারা রেখেছিলেন ফুটবল ভক্তদের। লাতিন ফুটবলের মর্যাদার আসর কোপা আমেরিকার ফাইনালে দুই দল মুখোমুখি। ২০০৭ সালের পর এই প্রথম মেসি-নেইমাররা লড়বে ট্রফির লড়াইয়ে।

রোববার (১১ জুলাই) বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টায় ফাইনাল শুরুর আগে পাঠকদের জন্য নানা আয়োজন নিয়ে হাজির রাইজিংবিডি। আজ থাকছে ব্রাজিলের অতীত-বর্তমান মিলিয়ে সেরা ১০ ফুটবলারকে নিয়ে বিশেষ লেখার প্রথম পর্ব ।   

১.পেলে

ফুটবল নামের সঙ্গেই যেনো পেলে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শুধু ব্রাজিল নয় পুরো বিশ্বের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়ও বলা হয় তাকে। যদিও এটা নিয়ে আছে নানা বিতর্ক। তবে এটা সন্দেহাতীত যে, পেলে ফুটবল বিশ্বে এখন পর্যন্ত দেখা সম্পূর্ণ একজন খেলোয়াড়। যার পাওয়ার আর কিছুই নেই!

১৯৫৮ বিশ্বকাপে মাত্র ১৭ বছর বয়সে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন পেলে। সেমি ফাইনালে হ্যাটট্রিক ও ফাইনালে জোড়া গোলসহ ৬টি গোল করেছেন। ব্রাজিলও জেতে বিশ্বকাপ।

১৯৬২ সালে পরের বিশ্বকাপও জেতে ব্রাজিল। তবে সেবার ইনজুরিতে ভুগেছিলেন কালো মাণিক খ্যাত এই ফুটবলার। সেবার দারুণ ভূমিকা রেখেছিলেন গরিঞ্চা। পরের বিশ্বকাপেও (১৯৬৬) পেলে ছিলেন ইনজুরিতে। ব্রাজিল গ্রুপপর্ব থেকেই বাদ পড়ে যায়।

১৯৭০ বিশ্বকাপে জার্জিনহো-রিভেইলিনো ও গ্যারসনকে সঙ্গে নিয়ে পেলে গড়ে তোলেন এখন পর্যন্ত দেখা অন্যতম আক্রমণ বিভাগ। ব্রাজিলও জেতে বিশ্বকাপ। ব্রাজিলের সঙ্গে পেলেও জিতেন তিন-তিনটি বিশ্বকাপ। সেবার সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন জার্জিনহো। পেলের পা থেকে আসে ৪টি গোল।

পেলে এখন পর্যন্ত ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা গোল স্কোরার। তিনি ৯২ ম্যাচে ৭৭ গোল করেন।

পেলেকে নিয়ে আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট- রোনাল্ড রিগ্যানের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে। তিনি বলেন, 'আমার নাম রোনাল্ড রিগ্যান, আমি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তোমাকে তোমার পরিচিতি বলতে হবে না। কারণ সকলেই জানে পেলে কে।'

২.মানে গরিঞ্চা

 বিশ্ব ফুটবলে লিটল বার্ড হিসেবে খ্যাত গরিঞ্চা। পারিবারিক নাম ছিল ম্যানুয়েল ফ্রান্সিসকো দস সান্তোস। ছোটখাটো গড়নের জন্য তাকে বলা হতো লিটল বার্ড। বিশ্বের অন্যতম সেরা ড্রিবলার বলা হয় তাকে। কেউ কেউ কিং অব ড্রিবলারও বলেছেন গরিঞ্চাকে। পেলের সঙ্গে ১৯৫৮-১৯৬২ বিশ্বকাপ জিতেছেন। পেলে ইনজুরিতে পড়ায় তার পায়ে ভর করেই ব্রাজিল জেতে ৬২ কাপ। গোল করার সঙ্গে করিয়েছেন গোলও।

অভিষেক ম্যাচ থেকেই তাক লাগানো এই ফুটবলার ৬২ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড এবং স্বাগতিক চিলির বিপক্ষে ম্যাচ দু’টিতে অসাধারণ খেলেন করেন  ৪ গোল।  ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়ে থাকবে ফাইনাল ম্যাচের কথা। চেকোস্লোভাকিয়ার বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচে প্রচণ্ড জ্বর নিয়েও খেলা চালিয়ে যান গারিঞ্চা। ব্রাজিলের হয়ে ৫০ ম্যাচে ১২ গোল করেন এই রাইট উইঙ্গার।

তাকে নিয়ে বিখ্যাত লেখক এডুয়ার্দো গ্যালিয়ানো বলেন, 'গরিঞ্চা যখন ফর্মে থাকে তখন পিচ পরিণত হয় সার্কাসে। ফুটবলকে মনে হয় বাধ্যগত প্রাণী আর খেলা পরিণত হয় উৎসবে।'

৩. রোনালদো

মাত্র ২১ বছর বয়সে রোনালদো যখন ফ্রান্সে  অনুষ্ঠেয় ১৯৯৮ বিশ্বকাপ খেলছেন তখন তিনি চারটি দেশে ২০০ গোল করে ফেলেছেন। এর আগে ১৯৯৪ বিশ্বকাপ জেতেন সেলেসাওদের হয়ে। এরমধ্যেই দুবার নির্বাচিত হয় ফিফা বিশ্বসেরা ফুটবলার হিসেবে। সর্বমোট তিনবার হয়েছিলেন ফিফা বিশ্বসেরা ফুটবলার। ৯৮ বিশ্বকাপে চিলির বিপক্ষে করেন জোড়া গোল।

১৭ বছর বয়সে জিতেছিলেন বিশ্বকাপ। তবে তখনো রোনালদো হয়ে উঠতে পারেননি। ৯৮ বিশ্বকাপে শুরু করেছিলেন, ২০০২ বিশ্বকাপে ছাড়িয়ে যান নিজেকেই। ফাইনালে জোড়া গোলসহ পুরো বিশ্বকাপে করেন ৮ গোল। নাম লেখা ইতিহাসের পাতায়। ব্রাজিল পঞ্চমবারের মতো ঘরে তোলে বিশ্বকাপ। ১৯৯৬-৯৭ সালের পর ২০০২ সালে তৃতীয়বারের মতো ফিফা বিশ্বসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হন। খেলেছিলেন ২০০৬ বিশ্বকাপেও; সেবার ৩ গোল করে তৎকালীন বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে নাম লেখান ইতিহাসের পাতায়। ব্রাজিলের হয়ে ৯৮ ম্যাচে ৬২ গোল করেন।

৪.জিকো

আশির দশকের প্রজন্মে ফুটবল জোয়ার এনেছিলেন জিকো। রিও ডি জেনেইরোর ফ্লেমেঙ্গো ক্লাবের হয়ে জিতেছিলেন সবকিছু। আক্ষেপের বিষয় হলেও ব্রাজিলের অন্যতম সেরা এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার জিততে পারেননি বিশ্বকাপ। ১৯৮০ থেকে ৮৩ পর্যন্ত টানা তিনবার ব্রাজিলিয়ান চ্যাম্পিয়ন; পরে ১৯৮৭তে আবারও তিনি এই টাইটেল জেতেন। প্রায় ৮০০ ম্যাচ খেলে তিনি গোল করেন ৫০০টিরও বেশি। ১৯৭৮ বিশ্বকাপ থেকে ব্রাজিল দলের অন্যতম সদস্য; ৮২ বিশ্বকাপে পরিণত হন সেলেসাওদের মেইন-মেন হিসেবে। গোল করেছিলেন চারটি; কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। ৮৬ এর বিশ্বকাপেও তাকে নিয়ে স্বপ্নে বিভোর ছিলেন ব্রাজিলিয়ানরা; কিন্তু ফ্রান্সের কাছে কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে বাদ পড়ে যায় ব্রাজিল। জিকোকে অনেক ব্রাজিলিয়ান এখনো মনে রেখেছেন দ্বিতীয় পেলে হিসেবে। ব্রাজিলের হয়ে তিনি ৭২ ম্যাচে ৫২ গোল করেন।

৫. সক্রেটিস

৬ ফুট ৪ ইঞ্চির সক্রেটিসের জন্ম যেনো ফুটবলের জন্যই। দুই পায়ে সমানতালে দিতে পারতেন নিখুঁত পাস। যতক্ষণ মাঠে থাকতেন ততক্ষণ সেন্ট্রাল এরিয়া থাকতো এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের দখলে। এককথায় ফেনোমেনাল।

তবে ভুবনজুড়ে সক্রেটিসের খ্যাতি ছিল ব্যাকহিল পাসের জন্য। সেট পিসে যেকোনো দলের জন্যই ছিলেন হুমকি স্বরূপ। ১৯৮২ বিশ্বকাপে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে তার অসাধারণ ম্যাচটি এখনো মনে থাকবে ফুটবল ভক্তদের।

ক্লাব জগতে করিন্থিয়াসে কাটিয়েছেন অর্ধযুগের অসাধারণ সময়। শুধু তাই নয় ফ্লোরেন্টিনা-ফ্ল্যামেঙ্গো ভক্তরাও মনে রাখবেন সাবেক ব্রাজিল অধিনায়ককে। মাঠ নয় শুধু মাঠের বাইরেও তার ফুটবলীয় চিন্তাধারা এনে দিয়েছিল খ্যাতি। ১৯৮২ এর পর ৮৬ বিশ্বকাপেও খেলেছিলেন; কোনো রানআপ ছাড়াই পেনাল্টি নিয়ে শিরোনামে এসেছিলেন বিশ্বজুড়ে। ব্রাজিলের হয়ে ৬০ ম্যাচে ২২ গোল করেছিলেন সক্রেটিস।

(চলবে)

ঢাকা/রিয়াদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়