জিদ: কোহলিদের আছে, মাহমুদউল্লাহদের নেই!
ক্রিকেটে মেধা লাগে, তবে জিদটা বোধহয় একটু বেশিই লাগে! জিদ্দি চরিত্রের ভিরাট কোহলি অন্তত তাই করেও দেখালেন। উড়ে গেল এক হাজার ২০ দিনের হাপিত্যেশ, বঞ্চনা, খোঁচাখুঁচি- আরও কত কি!
ভাবা যায় কোন ফরম্যাটেই প্রায় ৩ বছর ধরে সেঞ্চুরি ছিল না বিশ্বসেরা ব্যাটারের ব্যাটে! কি এক মরিচিকা, তাই না? এই এশিয়া কাপ শুরুর আগে কেউ ভাবেনি ভারত ফাইনালে খেলবে না, যেমনটা কেউ ভাবেনি কোহলি সেঞ্চুরি করবেন। ভাবার কি কোনও যুক্তিযুক্ত কারণ ছিল? এই প্রশ্নের নিরঙ্কুশ উত্তর পাবেন- ছিল না!
তবে যুক্তি মেনে সবসময় ক্রিকেট হয় না। হলে বলতাম- দিস ইজ নট ক্রিকেট। ক্রিকেটের ধারাপাতে দেখা আপ্তবাক্য সে নাকি গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা! এত ভণিতার কারণ এই অনিশ্চয়তার পেছনে ছোটার কারণ খোঁজা।
ক্রিকেট যে অনিন্দ্য সুন্দর তার কারণ এই অনিশ্চয়তা। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে এরকমটি নয়, অন্তত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে! বরং এই নিশ্চয়তা মিলছে বাংলাদেশ ধারাবাহিক এক ব্যর্থ দল এই ফরমেটে। ভারত এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠতে পারেনি- এটা ব্যর্থতা, তবে তারা দুর্বল নয়! কোহলি প্রায় ৩ বছর ধরে সেঞ্চুরি পাচ্ছিলেন না- এটাও কাকতালীয়। ফাইনালে উঠতে না পারলেও, শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানকে ধসিয়ে দিয়ে জানান দিয়েছে তাদের শক্তিমত্তা। প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশকি সেরকমটি পারে? পারে না! জং পড়া, মরিচা ধরা দুর্বল অস্ত্রে লড়াইয়ে নামা যায়, কিন্তু জেতা যায় কি?
টাইগারদের টি-টোয়েন্টি ব্যর্থতার হাজারটা কারণ রয়েছে। চর্চা, বোধন, আত্মপরিচয়ে এ দেশের ক্রিকেটাররা এই ফরম্যাট থেকে অনেক দূরে! তারা ভাবে এত পাওয়ার গেম, ঐ জিনিস তো তাদের নেই! যে কারণে হারার আগেই হেরে যাওয়ার মানসিক এক রোগ সৃষ্টি হয়েছে ক্রিকেটারদের মাঝে! এই মুহূর্তে পরিত্রাণের উপায় জানা নেই বিশৃংখল বিসিবি'র। আর তাইতো ক্রিকেট প্রিয় এই জাতিকে প্রতিদিন শুনতে হচ্ছে আলাপের নামে প্রলাপ-বিলাপ!
সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা তাতে মুখে চেপে হাসাহাসি করেন বটে, তবে ওপরে ওপরে বরং খুশী হন উপাদেয় কনটেন্ট পেয়ে যান বলে। যেদিন শুনতে হলো ভিরাটের চেয়ে আফিফ ভালো-সেদিনই দুশো স্ট্রাইক রেটে শতক হাঁকিয়ে দিলেন কিং কোহলি! এই যে বাংলাদেশের থিংক ট্যাংক এর একেবারে ওপর থেকে যা বলা হচ্ছে তা হাস্যরসের বিষয় ছাড়া আর কী?
বোর্ড সভাপতি সেই কবে বলেছেন যে তার তিন ফরমেটে প্রচুর ক্রিকেটার চায়! তো কোথায় ক্রিকেটার? এখন অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও ক্রিকেটার খুঁজে পাচ্ছে না বোর্ড। দীর্ঘ বিরতির পর যাকে ফেরানো হলো সেই এনামুল বিজয়কে টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি সবখানেই বাজিয়ে দেখা হচ্ছে। যার স্পেশালিটি ওয়ানডে, সে স্বাভাবিকভাবেই ব্যর্থ হচ্ছে বাকি দুই ফরমেটে! টপ অর্ডারে তামিম-লিটন ছাড়া নির্ভর করার মতো কেউ নেই! টি-টোয়েন্টি থেকে তামিম সরে দাঁড়ানোয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের অস্থিচর্মসার।
পাইপলাইনের দুর্বলতা বেরিয়ে পড়েছে! গত ৩/৪ বছরে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ব্যর্থতার (মিরপুরে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় ছাড়া) অনেক কারণের মধ্যে একটি সাকিবের অনুপস্থিতি ও কার্যকারিতা কমে যাওয়া! এর বাইরে সবচে বড় কারণটি হতে পারে মাহমুদউল্লাহ-মোস্তাফিজ এই দুই ক্রিকেটারের ব্যর্থতা! এবার আসি ব্যাখ্যায়। পাওয়ার হিটার নেই- এই বুলি আওড়িয়ে ৫/৬ এ নিয়মিত সুযোগ দেয়া হচ্ছে মাহমুদউল্লাহকে, কিন্তু ঐ এক নিদহাস ট্রফিতে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ারলেগের ওপর দিয়ে হাঁকানো ছক্কা ছাড়া কোন ক্লোজ ম্যাচ তিনি সফলভাবে শেষ করেছেন- মনে পড়ছে না!
কি আগে ব্যাট করা, কি চেজ করা- সবক্ষেত্রেই তাকে ঘিরে ঐ এক প্রশ্ন- তিনি কি সফল? সিকান্দার রাজা যেটি করছেন জিম্বাবুয়ের হয়ে, তিনি তো সেটিও পারেন না! ঐ রাজা নিশ্চয়ই পাওয়ার হিটার নন? আগে ব্যাট করলে অন্তত ১৫/২০ রানের ঘাটতি, আর পরে ব্যাট করে ২০ রানের নীচে বাংলাদেশ ক'টি ম্যাচ হেরেছে সেটি পরিসংখ্যান দেখলে স্পষ্ট হয়ে যাবে! এবার আসি মোস্তাফিজের কথায়!
গত চার বছরে মোস্তাফিজ তার কার্যকারিতা হারিয়েছেন অনেকাংশে! প্রতিপক্ষের কম্পিউটারে তিনি এখন বৈচিত্রহীন বোধগম্য এক বোলার, কবে কোন উইকেটে কাটার ধরবে তার জন্য তো আর বসে নেই ক্রিকেট! আর কাটারেও নেই সেই বিষ, যা ব্যাটারকে বিভ্রান্ত করতে পারে। শেষ ৫ ওভারে তিনি এখন না পারেন প্রতিপক্ষের উইকেট তুলতে, না পারেন বেঁধে রাখতে! এশিয়া কাপে আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কা ম্যাচ সবচে বড় উদাহরণ। ফিফটি-ফিফটি ম্যাচ জেতানোর সক্ষমতা কি আর এই মোস্তাফিজ-মাহমুদউল্লাহদের আছে? হয়ত আছে, কিন্তু আত্মবিশ্বাসে যে টান পড়েছে সেটি স্পষ্ট! আসলে জিদটাই হারিয়ে গেছে হয়ত! ভালো খেলার প্রেরণাটাই হয়ত হাতড়ে বেড়াচ্ছেন তারা, কিন্তু এভাবে আর কত?
লেখক: বিশেষ প্রতিনিধি, যমুনা টেলিভিশন।
ঢাকা/আমিনুল
আরো পড়ুন