ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মৃত্যুর দুয়ার থেকে বিশ্বকাপের মহামঞ্চে

আরিফুল হক বিজয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৮, ২ মে ২০২৪   আপডেট: ১৬:০০, ২ মে ২০২৪
মৃত্যুর দুয়ার থেকে বিশ্বকাপের মহামঞ্চে

৩০ ডিসেম্বর, ২০২২। এশিয়ার সূর্যোদয়ের দেশ জাপানে তখনও সূর্যটা হাসেনি। দেড়শো কোটি জনতার দেশ ভারত গভীর ঘুমে মগ্ন। এমন সময়েই খবরটা এলো; সড়ক দূর্ঘটনার কবলে ভারতীয় ক্রিকেটার ঋষভ পন্ত! সকাল হতেই বাতাসের গতিতে সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে পড়লো জাতীয় দলের তরুণ ব্যাটসম্যানের দুর্ঘটনার খবর। পত্র-পত্রিকা ভরে উঠলো বিষাদময় শিরোনামে!

বিষাদময় শিরোনাম হতে পারতো আরও বেদনাবিধূর। না হওয়ার কারণ, পন্ত তখনো বেঁচে ছিলেন। মৃত্যুকে একদম কাছ থেকে দেখে ফিরেছেন প্রতিভাবান ভারতীয় ব্যাটসম্যান। জীবনের দরজায় ভালোভাবেই কড়া নেড়ে গিয়েছিল যমদূত। পন্ত কেবল দরজাটা খোলেননি। শরীরজুড়ে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়েও পন্ত আরেকবার বাইশগজে দাপিয়ে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন।

আরো পড়ুন:

দুর্ঘটনার পর দুমড়ে-মুচড়ে আগুন ধরে যাওয়া পন্তের গাড়ি।

২৩ মার্চ, ২০২৪। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ম্যাচে মুখোমুখি মুখোমুখি দিল্লি ক্যাপিটালস ও পাঞ্জাব কিংস। মহারাজা যদাবিন্দ্র সিং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দিল্লির জার্সিতে মাঠে নামলেন পন্ত। কয়েকবার আকাশের দিকে তাকালেন মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা দিল্লির অধিনায়ক। কৃতজ্ঞতা জানালেন সৃষ্টিকর্তার প্রতি। পরক্ষণেই টের পেলেন মুহুর্মুহু করতালির অভিবাদন। সমাপ্তি হলো ৪৫৪ দিনের দুর্বিষহ সময়ের।

পন্তের ভাষায়, এ যেন ক্রিকেট মাঠে তার দ্বিতীয় অভিষেক, ‘মাঠে ফেরার জন্য তর সইছিল না। একইভাবে নার্ভাসও লাগছিল। মনে হচ্ছিলো, আমার যেন অভিষেক হতে চলেছে। আমি আবারও ক্রিকেট খেলতে পারব, এটা মিরাকলের চেয়ে কম নয়। বিসিসিআই এবং এনসিএর সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। সকলের সম্মিলিত চেষ্টাতেই আমি আবার মাঠে ফিরতে পেরেছি।’

মাঠে ফেরার লড়াইয়ে আইপিএল দিয়ে নিজেকে আরেকবার চেনালেন পন্ত।

আসলেই তো মিরাকলের চেয়ে কম ছিল না পন্তের ক্রিকেট মাঠে ফেরা। উত্তরাখন্ডের হাইওয়ের ডিভাইডারে পন্তের গাড়িটি যখন ধাক্কা খেয়ে আগুন ধরে গেল, তখন কি কেউ ভেবেছিল পন্ত আবার ক্রিকেটে ফিরবেন? ব্যাট হাতে ঝড় তুলবেন? জায়গা করে নিবেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে? এমন রূপকথা কি কেউ কখনো শুনেছে? পন্ত রূপকথাকেও হার মানিয়ে জায়গা করে নিলেন মহারণের মহামঞ্চে।

অস্ত্রোপচার, পুনর্বাসন, ঘরের মাঠে বিশ্বকাপে দর্শক হয়ে থাকা; সব মিলিয়ে দেড় বছর হতাশায় ডুবে ছিলেন পন্ত। সুস্থ হয়ে ফিরলেও বিশ্বকাপের দলে তার জায়গা পাওয়া নিয়ে ছিল সংশয়। দলটা যখন ভারত, দেড়শ কোটি মানুষের প্রত্যাশার ভার তখন কাঁধে। এই ভার কি নিতে পারতেন সদ্যই ইনজুরি কাটিয়ে আইপিএল দিয়ে ক্রিকেটে ফেরা পন্ত? প্রশ্নটা স্বাভাবিকভাবেই ধেঁয়ে এসেছিল। সকল সংশয় ছক্কায় উড়ালেন এই বাঁহাতি। আইপিএলের মঞ্চে নিজেকে চেনালেন আরেকবার। জানান দিলেন, তিনি প্রস্তুত।

দুঃসময়ে মা সরোজ পন্তই ছিলেন সর্বক্ষণের সঙ্গী। 

স্টার স্পোর্টসের ‘গেম প্ল্যান’ অনুষ্ঠানে পন্তের প্রসঙ্গ আসতেই সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার বলেছিলেন, ‘আমি একটা কথা বলতে চাই। ঋষভ পন্ত যদি ফিট থাকে, এমনকি সেটা এক পায়ে হলেও ওর দলে থাকা উচিত, কারণ পন্ত সব সংস্করণেই “গেম চেঞ্জার”। নির্বাচক হলে আমি সবার আগে ওকেই নিতাম।’

গাভাস্কারের কথার প্রতিফলন দেখা গেল ভারতের বিশ্বকাপ দলে। গেম চেঞ্জার পন্ত চেঞ্জ করে দিলেন দৃশ্যপট। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে জায়গা করে নিলেন বিশ ওভারের মহারণের মহামঞ্চে। জীবনের মহামঞ্চেও জিতে যাওয়া পন্ত কি আরেকবার পারবেন বাইশগজের লড়াইয়ে জিততে? ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের উত্তাল সমুদ্রের গর্জনের মতো ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালাবেন নাকি নীল সমুদ্রের মতো বিষাদ নীলিমা নিয়ে ফিরবেন? এই প্রশ্নের উত্তর সময়ের হাতে।

ভারতের জার্সি গায়ে আবারও বিশ্বমঞ্চে নিজেকে জানান দিতে চান পন্ত। 

ক্যান্সারকে সঙ্গী করে ভারতকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন যুবরাজ সিং। এরপর দীর্ঘ সময়ের জন্য মাঠের বাইরে চলে গিয়েছিলেন ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের মহানায়ক। অপারেশন, কোমা, ফেরার লড়াই; সে এক কঠিন সময়। যেদিন ফিরলেন, প্রথম বলটা ডিফেন্স করলেন, টিভি স্ক্রিনে ভেসে উঠলো মা শবনমের চোখে জল। ছেলেকে নিয়ে কঠিন এক সমুদ্র পেরিয়ে আসার আনন্দাশ্রু।

পন্তের ইনজুরি দেখে ডাক্তাররা বলেছিলেন, প্রয়োজনে পা কেটে ফেলতে হতে পারে। সায় দেননি তার মা সরোজ পন্ত। ছেলে যখন বিশ্বমঞ্চে সেই পা সামনে এগিয়ে কবজির মোচড়ে সাদা বলটা আছড়ে ফেলবেন সীমানার ওপাশে, ভাসিয়ে দিবেন বিশাল আকাশে, নিশ্চয়ই তখন চোখ মুছবেন মা নামক লড়াকু যোদ্ধা। এরচেয়ে নৈসর্গিক দৃশ্য কিছু আছে বলে জানা নেই। আর থাকলেও মৃত্যুর দুয়ার থেকে বিশ্বকাপের মঞ্চে ফেরার মতো অতোটা নৈসর্গিক নয়।

ঢাকা/বিজয়

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়