ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ক্রিকেটারের বেলা শেষের ভৈরবী

মানজুর মোরশেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৩, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৫:২০, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
ক্রিকেটারের বেলা শেষের ভৈরবী

সৃষ্টিশীল দুনিয়ায় সৃষ্টির কোনও বিকল্প নেই! তাতে চমক থাকতে হয়, থাকতে হয় দেখনদারি! না হলে যার ওপর সৃষ্টির ভার- তাকে চাপা পড়তে হয় সাধারণের ভিড়ে। এ পৃথিবী বড় নির্দয়, এ পৃথিবী বড় নিষ্ঠুর- এ যেন নদীর জোয়ার-ভাটা, সে যেন কারও অপেক্ষা করে না- বয়ে যায় নিরবধি। সময়ের বুকে দীর্ঘ রেখা তৈরি করা পথটিও হঠাৎ উধাও হয়ে যায়- কোথায় যেন! আজ বুঝি মুশফিকুর রহিম-মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সেরকম দুটি পথ!

তাদের স্ত্রীরা আজ শোকাহত! তারা তাদের স্বামীদের পাশে দাঁড়াবেন- সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই শোক পালন করতে যেয়ে তারা বিসিবিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। অযৌক্তিক প্রমাণ করতে চাচ্ছেন পুরো ক্রিকেট সিস্টেমকে; আসলে যে সিস্টেমের সুবিধা নিয়েই খুব আহামরি ক্রিকেট না খেলেও মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ দুজনেই দেশের পক্ষে সুযোগ পেয়েছেন শতাধিক টি-টোয়েন্টিতে, খেলে গেছেন ১৬/১৭ বছর! খুব বড় বোদ্ধা হওয়ার দরকার নেই- ভাবুন তো এই দুই ক্রিকেটারের যে পরিসংখ্যান টি-টোয়েন্টিতে, তাতে অন্য কোনও আর্ন্তজাতিক দলে তাদের স্থান হয় কি না? 

মুশফিকের ওই ভারতের বিপক্ষে একটি ইনিংস, আর মাহমুদউল্লাহর সেই ঐতিহাসিক ফিনিশ নিদাহাস ট্রফিতে- এ যেন হয়ে আছে ‘ঝড়ে বক মরে, হুজুরের কেরামতি বাড়ে’। খুব নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে- তারা অধারাবাহিকতো বটেই, দলের প্রয়োজনও কোনোভাবেই মেটাতে পারছিলেন না! তো বয়সী এমন ক্রিকেটার টেনে নিয়ে বেড়ানোর কী আছে? যাদের ভবিষ্যত শুধুই অবসরের অপেক্ষায়! হতে পারে বিসিবি অপেশাদার- সেটি সত্য বলেই তো তারা পড়ে পাওয়া সুযোগগুলো নিয়েছেন দিনের পর দিন। বিসিবি অপেশাদার বলেই, গত বছর টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ডকাপের পরও তাদেরকে দলে রেখেছিল। গুরুত্বে এগিয়ে থেকেও তাদের আগেই তামিম ইকবাল সরে দাঁড়িয়েছিলেন, কিন্তু তারা বোঝেননি, যখন বোর্ড সভাপতি বলেছিলেন তিন ফরম্যাটে তিনটি দল চাই তার। আসলে উপমহাদেশের ক্রিকেটাররা সঠিক সময়ে অবসর নিতে পারেন না- এমন মন্তব্য করে সম্প্রতি ঝড় তুলেছেন শহীদ আফ্রিদি। তো এই বাস্তবতা আফ্রিদির চেয়ে আর কে ভালো বুঝবেন। এই পাকিস্তানি তো কয়েকবার অবসর ভেঙে ফিরে এসেছেন ক্রিকেট মাঠে! কারণ, এই অবসরের সাথে একজন তারকা ক্রিকেটারের আছে বাণিজ্য-বেসাতির সংযোগ। কে আর মুফতে টাকা-পয়সা আয়ের সুযোগ হারাতে চায়! কিন্তু সে তো আর বোঝে না, সিস্টেমে কী সংকট সে তৈরি করছে।

এর সাথে ওই সিস্টেমে তার রিপ্লেসমেন্ট আছে কি নেই সেটি ভিন্ন আলোচনা! কিন্তু বিদায়ের রাগিনী বেজেছে যে ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারে, তার কি নিজে থেকে বিদায় নেওয়া সমীচীন নয়? অনেক যদি-কিন্তুর পর মুশফিক নিজ থেকেই সরে গিয়েছিলেন, কিন্তু মাহমুদউল্লাহ যাননি। তাদের এই সরে দাঁড়ানোটা বছরখানেক আগে হলে, আরও একটু গোছানো দল হিসেবে বিশ্ব আসর খেলতে পারতো বাংলাদেশ, কিন্তু সে তো আর হলো না! 

টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার হিটার ছাড়াই একটা দল কী করতে পারে, তার সবশেষ উদাহরণ শ্রীলঙ্কার এশিয়া কাপ জয়! ক্রিকেটের এই সংস্করণটি প্রতিদিন বদলাচ্ছে, সময়মতো অভিযোজন করতে না পারলে হতাশা বাড়বে বৈ কমবে না! বিসিবি অবশেষে সেই পথ ধরেছে এটাই স্বস্তি!

তবে সিনিয়রদের সাথে যে রেষারেষি তা বড় কালো দাগ ফেলেছে টাইগার ক্রিকেটে। জিম্বাবুয়েতে টেস্ট সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বিদায় বলে দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ- বরং তখন ওই ফরম্যাটে তিনি যুঁতসই ছিলেন বলে মনে করি; উল্টো টি-টোয়েন্টিতে তাকে প্রতিদান দিয়ে দিলো ক্রিকেট প্রকৃতি। 

ক্রিকেট বড় সুন্দর, ক্রিকেট বড় নিষ্ঠুর। ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলাও। এবছর জানুয়ারিতে পারিবারিক কারণে সবধরনের ক্রিকেট থেকে বিদায় বলেছিলেন ভানুকা রাজাপাকসা। আবার ফিরে এসে একইবছরে শ্রীলঙ্কাকে জেতালেন এশিয়া কাপ। অবাক হবেন না! এখনও মাস তিনেক বাকি বছরের, ইতিমধ্যে ২০ জন আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটার বিভিন্ন ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়েছেন, মুশফিক তাদেরই একজন! যদি স্টোকস, মরগ্যান, রস টেলর, হাফিজ,মরিস, ফিঞ্চরা অবসরের ঘোষণা দিতে পারেন, তবে মুশফিকরা নয় কেন? এতে কোনও পরাজয় নেই, এতে রূপান্তরের সৌন্দর্য্য আছে। ক্যারিয়ার শেষে টাইগার ক্রিকেটকে সেবা দেওয়ার দশরকম পথ নিশ্চয় আছে? আর্নেস্ট হেমিংওয়ের সেই বিখ্যাত উক্তি- ‘মানুষ ধ্বংস হতে পারে, কিন্তু মানুষ পরাজিত হয় না!’

লেখক- বিশেষ প্রতিনিধি, যমুনা টেলিভিশন

ঢাকা/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়