ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

এই ট্রফি নারীর ক্ষমতায়নের সাফল্যের ধাপ

আজাদ মজুমদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০১, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৩:৩২, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২
এই ট্রফি নারীর ক্ষমতায়নের সাফল্যের ধাপ

সানজিদা আখতার একজন উইং প্লেয়ার, যার প্রাথমিক দায়িত্ব গোল বানিয়ে দেওয়া। এই কাজের ক্ষেত্রে সানজিদা নিখুঁতভাবে পারফর্ম করেছেন। সানজিদা সম্ভবত ফাইনালে বলে পা লাগানোর আগেই মাঠের বাইরে প্রতিযোগিতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোলটি করেন। বাংলাদেশের অনেক ফুটবল ভক্ত তার ফেসবুক পোস্টে আলোড়িত হয়েছিল, যেটা তাদের লক্ষ্য নিরূপণের পাশাপাশি তাদের সংগ্রামও তুলে ধরেছিল।

এই পোস্ট নাটকীয়ভাবে ফাইনালের আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। একটি স্থানীয় ক্রীড়া চ্যানেলকে ধন্যবাদ দিতেই হয়, যারা জনসাধারণের আবেগ বুঝতে পেরেছে, ফুটবল ভক্তরা ম্যাচটি সরাসরি দেখতে পেরেছে। যদিও সম্প্রচারের মান ততটা ভালো ছিল না। তবে দেশের জনগণ অন্তত তাৎক্ষণিকভাবে ফলাফলটি জানতে পেরেছে।

এই দর্শকদের অনেকেই সম্ভবত প্রথমবারের মতো নারী ফুটবল দলের খেলা সরাসরি টিভিতে দেখেছেন। ধীরগতির আউটফিল্ডে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অবিশ্বাস্য খেলার স্টাইল দেখে অবাক হয়েছে তারা। খেলার ধারার বিপরীতে গিয়ে বাংলাদেশের দ্বিতীয় গোল যেভাবে সাবিনা খাতুন বানিয়ে দিলো এবং কৃষ্ণা রানি সরকার মেসিস্টাইলে বাঁ পায়ে শেষ করলো, তা যে কোনও ভক্তদের জন্য দেখা আনন্দের বিষয়।

নেপালের বিপক্ষে ৩-১ গোলের জয়ে তাদের প্রথম সাফ শিরোপা অবশ্য বিস্ময়কর ছিল না। টুর্নামেন্টের আগের চার ম্যাচে ২০ গোল করা ও কোনও গোল না খাওয়া যে কোনও দল এই ফল প্রত্যাশা করবে সবসময়। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো তাদের আধিপত্য বিস্তার করে খেলার ধরন, তাদের খেলার ওপর নিয়ন্ত্রণ।  জীবনের কোনও ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের মেয়েরা এতটা সম্মিলিত শক্তি বা নিয়ন্ত্রণ দেখাতে পারেনি। জয়ের প্রতিক্রিয়া তাই অভূতপূর্ব।

নারী দলের সাফল্য বেশিরভাগ সংবাদপত্রে একটি ব্যানার হেডলাইনে জায়গা করে  নিয়েছে এবং প্রায় সব টেলিভিশন চ্যানেলের প্রাইম-টাইম নিউজ বুলেটিনগুলোতে দাপট দেখিয়েছে। ভক্তরাও নজিরবিহীনভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের আবেগ প্রকাশ করেছেন।

এই জয়ের ফুটবলীয় তাৎপর্য আমলে নিলে এই প্রতিক্রিয়া বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। আমরা সবাই জানি বিশ্ব ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়া অনেক পেছনে। এখানকার কোনও কিছুই বাংলাদেশকে বিশ্ব ফুটবলে জায়গা করে দিতে পারবে না।

তারপরও আমরা এই সাফল্য উদযাপন করছি কারণ এটা শুধু শিরোপার ব্যাপার নয়। এটি তাদের বিরুদ্ধে বিজয়ের প্রতিনিধিত্ব করে যারা নারীদের ঘরে আটকে রাখার পক্ষে। এই জয় তাদের বিরুদ্ধে যারা লিঙ্গ সমতা সমর্থন করে না এবং সর্বোপরি, এটি পশ্চাদপসরতার বিরুদ্ধে একটি বিজয়।

সানজিদা তার ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, ফাইনালে এগারোজন যোদ্ধার মধ্যে অনেকেই তাদের বাবাকে হারিয়ে, তাদের মায়ের শেষ সম্পত্তি নিয়ে, তাদের বোনের অলংকার বিক্রি করে এবং পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস হয়ে এতদূর এসেছেন। নারীর ক্ষমতায়নের একটি মৌলিক উপাদান হলো এটি নারীদের কৌশলগত জীবন পছন্দ করার ক্ষমতাকে বোঝায়, যেটা থেকে আগে তাদের প্রত্যাখ্যাত করা হয়েছিল। কাঠমান্ডুতে তাদের সাফল্য বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নের দিকে একটি বিশাল লাফ।

লেখক: যুগ্ম বার্তা সম্পাদক, দি নিউ এইজ

ঢাকা/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়