ফার্স্ট ডে অ্যাট স্কুল: লিটনের ব্যাটে জাকেরের অনুশীলন, রিশাদের পকেটে সাকিবের উইকেট
ক্রীড়া প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম থেকে || রাইজিংবিডি.কম

নেটে ঢোকার অপেক্ষায় ছিলেন জাকের আলী অনিক। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উত্তরের নেটে তখন স্পিনারদের খেলছিলেন লিটন দাস। চন্ডিকা হাথুরুসিংহের ডাকে সাড়া দিয়ে নেট থেকে বেরিয়ে যান লিটন। এগোতে থাকেন জাকের।
পথে দুজনকে দেখা যায় ব্যাট বদল করতে। জাকেরের স্টিকারবিহীন সাদা ধবধবে ব্যাট নিয়ে বেরিয়ে আসেন লিটন। জাকেরের হাতে তখন লিটনের এসজি ব্যাট। ২২ গজে পা রেখে লিটনের ব্যাট দিয়েই চলল জাকেরের ব্যাটিং অনুশীলন। শুরুতে স্পিনারদের বিপক্ষে খেলার পর পাশের নেটে চলে যান পেসারদের খেলতে। হাতে সেই লিটনের ব্যাটই।
জাতীয় দলে জাকেরের প্রথম দিন। তার মতে,‘দিনটা অনেকটা ফার্স্ট ডে অ্যাট স্কুলের মতো।’ শুধু জাকের নন রিশাদ হোসেনের জন্যও তাই। এর আগে একাধিকবার জাতীয় দলের নেটে বোলিং করেছেন। শুধুমাত্র নেট বোলিংয়ের জন্যই তাকে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার লেগ স্পিনারকে মূল স্কোয়াডে রাখা হয়েছে। তাইতো শনিবার অনুশীলনের আগে তাকে দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনমাফিক নির্দেশনা।
দুপুর ২টায় জাতীয় দল অনুশীলন শুরু করে জহুর আহমেদে। মাঠে নামার আগে রিশাদকে ডেকে কাজ বুঝিয়ে দেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের ও বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ। নির্দেশনা ছিল এরকম, ‘ফ্লাইট নিয়ে কাজ করতে বলেছেন কোচরা। এছাড়া বলের সিম পজিশন নিয়ে বলেছেন। স্ট্রেইট সিম ও ক্রস সিম। বৈচিত্র্যর জন্য মাঝে মাঝে কুইকার। মিডল ও লেগ স্টাম্পে বল ফেলে শার্প টার্ন চাচ্ছিলেন।’ নেটে ঢোকার আগেই কোচের নির্দেশনা পেয়ে রিশাদ বুঝে গিয়েছিলেন তার কি করার প্রয়োজন।
সেই মোতাবেকই চলল তার অনুশীলন। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের নেটে তার প্রথম সেশন। যেখানে সম্ভাব্য প্রায় সব ডেলিভারি করেছেন লেগ স্পিনার। টানা বোলিংয়ে মিলেছে সাফল্য। সাকিবকে দুইবার আউট করে তা মনেও রেখেছেন। সচরাচর নেটে বোলিংয়ে নেমে উইকেটের হিসেব করেন না বোলাররা। তবে এবার ব্যাটসম্যান সাকিব বলেই উইকেট সংখ্যা হিসেব করে রেখেছেন ২০ বছর বয়সী তরুণ।
সাকিবের সামনে পরীক্ষায় রিশাদ কতটা মার্কস পেয়েছেন তা সময়ই বলে দেবে। তবে রিশাদের বোলিংয়ে নিশ্চিতভাবে সাকিবের অনেকদিনের আক্ষেপ ফুরাবে। গত বছরের শেষে ভারতের বিপক্ষে প্রায় টেস্ট জয়ের কাছাকাছি গিয়েও পাননি সাকিব। সেদিন খুব আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘বলতে বলতে, আফসোসে করতে করতে এখন আর ঐ (লেগ স্পিনার) চিন্তা আসে না। আশা করি ভবিষ্যতে কোনো সময় লেগ স্পিনার আসবে যে দলকে জেতাতে অবদান রাখবে।’
সঙ্গে লেগ স্পিনারের গুরুত্বটাও তুলে ধরেছিলেন এভাবে, ‘লেগ স্পিনার থাকলে আমাদের ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজটা একটু সহজ হত। কারণ, তখন আমরা আরও ভালোভাবে প্রস্তুত করা উইকেটে খেলতে পারতাম। ব্যাটসম্যানদের জন্য সহায়ক উইকেটে খেলতে পারতাম। কারণ, উইকেট নিতে লেগ স্পিনারদের পিচ থেকে খুব বেশি সহায়তার প্রয়োজন হয় না।’
রিশাদ সাকিবের অভাব পূরণ করতে পারবেন কিনা তা সময়ই বলে দেবে।
এদিকে তার মতো করেই অনুশীলনে দারুণ দিন কাটিয়েছেন জাকের আলী। বিপিএলে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে নির্বাচকদের নজরে আসার পর তাকে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ডাকা হয়েছে। নেটে ব্যাটিংয়ে তাকে খুব একটা দেখেননি হাথুরুসিংহে। তবে ব্যাটিং পরামর্শক সিডন্সের আড়াল হননি। শট নির্বাচন,পায়ের ব্যবহার, ব্যাটিং স্টান্সসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন। কাজগুলো খুব বড় না হলেও সূক্ষ্ণ ছিল। তাতে ব্যাটিংয়ে দম আরেকটু বেড়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যানের।
লিটনের ব্যাটে অনুশীলনের রহস্য বের করা সম্ভব হয়নি। তবে লিটন, তাওহিদ, রনি, শান্তদের সঙ্গে সেন্টার উইকেটে বিগ শট খেলার সময় নিজের ব্যাটেই ব্যাটিং করতে দেখা গেছে জাকেরকে। প্রথম দিনের শেষ সেশনে সেন্টার উইকেট থেকে বেশ কয়েকটি শট সীমানা পাড় করে চওড়া হাসি দিয়েছেন এ ব্যাটসম্যান। মিরাজ, শান্ত, জাকিরের পর তাদের ব্যাচের আরো একজন জাতীয় দলের চৌকাঠে। সুযোগ পেলে নিজেকে শতভাগ নিংড়ে দিতে প্রস্তুত উদ্দীপ্ত এ তরুণও।
চট্টগ্রাম/ইয়াসিন/রিয়াদ
আরো পড়ুন