ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘আমরা খেলব, বাঘের মতো খেলব’

ক্রীড়া প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম থেকে:  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৬, ৩০ মার্চ ২০২৩   আপডেট: ১৭:৩৪, ৩০ মার্চ ২০২৩
‘আমরা খেলব, বাঘের মতো খেলব’


৮ বছর পর জাতীয় দলে ফেরা। তীব্র আকাঙ্ক্ষা প্রবল জেদ না থাকলে হাল ছেড়ে দেওয়ার ঘটনাই ঘটতো। কিন্তু রনি তালুকদার ২০১৫ সালে জাতীয় দলের হয়ে এক টি-টোয়েন্টি খেলে বাদ পড়ার পর হাল ছাড়েননি। বরং নতুন উদ‌্যোমে লড়াই চালিয়ে গেছেন। হয়তো লম্বা সময় লেগেছে। কিন্তু ত্রিশ পেরুনো ক্রিকেটার দমে যাননি। ফিরে এসে নিজের সামর্থ‌্যের সবটুকু জানান দিয়ে যাচ্ছেন। 

টি-টোয়েন্টিতে যে ব্র‌্যান্ডের ক্রিকেটের চাহিদা ছিল দীর্ঘদিন। তার ব‌্যাটে যোগান মিলেছে। লিটনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিপক্ষের আক্রমণ এলোমেলো করে দিচ্ছেন। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম‌্যাটে তাদের জুটি বাংলাদেশের ভরসা হয়ে উঠেছে। নিজের ফেরা, দলের পরিকল্পনা, ওপেনিং জুটি ও নিজের সঙ্গীকে নিয়ে বৃহস্পতিবার টিম হোটেলে খোলাখুলি কথা বলেছেন মারকুটে ব‌্যাটসম‌্যান। তার কথা শুনেছে রাইজিংবিডি, 

টি-টোয়েন্টিতে আপনাদের উন্নতি চোখে পড়ছে। কোনো পরিকল্পনায় আসলে বাংলাদেশ এ ফরম‌্যাটে এগিয়ে যাচ্ছে? 

রনি তালুকদার: আমি আগেও বলে এসেছি, আমাদের একটা পরিকল্পনা থাকে। টিম ম্যানেজমেন্ট আমাদের একটা পরিকল্পনা দিয়ে দেয়, সেই অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করি। খুব সাধারণ পরিকল্পনা হলো-ইতিবাচক থাকা। আমরা যেন ইতিবাচক মানসিকতা দেখাতে পারি। টিম ম্যানেজমেন্ট ড্রেসিংরুমে একটা জিনিসই করতে চেষ্টা করি, সবাই যেন ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে পারি। এটাই আমাদের মূল কাজ।

৮ বছর পর জাতীয় দলে ফিরেছেন। এখন অনেকের হয়তো পরিকল্পনা থাকত কিছু রান করে জায়গা পাকাপাকি করা। কিন্তু আপনি প্রথম বল থেকেই অ‌্যাটাকিং মানসিকতায়। আপনি রান করেছেন ঠিকই। কিন্তু রান না করলে তো বাদ পড়তেন... 

রনি তালুকদার: আমার এই জায়গায় হারানোর কিছু নেই। আট বছর আগে যে রকম... শুরু থেকেই আমার খেলার ধরনটা এই রকম ছিল। আমি ইতিবাচক ইন্টেন্ট নিয়ে মাঠে নামি। আমার টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে যেই (ভূমিকা) দিয়েছে সেটা আমার খেলার ধরন দেখেই। বিপিএলে ওনারা আমার খেলা দেখছেন, ইংল্যান্ড সিরিজের আগেও বলল, বিপিএলে যা করছো, একেই জিনিসটা এখানে করবা। 

দলে জায়গা হারানোর ভয় কাজ করে না?

রনি তালুকদার: না এই ভয় কাজ করে না। কারণ টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে ওই সাহসটা দিয়েছে।  

সঙ্গী হিসেবে লিটন দাসকে পাওয়া কতটা আনন্দের?

রনি তালুকদার: ও (লিটন দাস) এখন বাংলাদেশ টিমের মূল ব্যাটসম্যান আমি মনে করি। ওর সাথে ব্যাটিং করতে পারা সত্যি অনেক আনন্দের ব্যাপার। আমরা সবসময় চেষ্টা করি, স্ট্রাইক রোটেট করার। ওর সঙ্গে ব্যাটিং করলে মনে হবে না যে কীভাবে রান হয়ে যাচ্ছে৷ ব্যাটিং দেখলে মনে হয় যে ব্যাটিং দেখেই যাই। দেখে অনেক কিছু শেখারও আছে।

পাওয়ার প্লে’তে অনেক রান হচ্ছে। প্রথম ম‌্যাচে রেকর্ড রান। পরের ম‌্যাচে প্রায় একই রকম। কোনো লক্ষ‌্য ছিল? 

রনি তালুকদার: না না আমাদের কোনো লক্ষ‌্য স্থির করা ছিল না। আমরা বল বাই বল খেলার চেষ্টা করছি যে, আমরা বলের মেরিট অনুযায়ী খেলব। এটাই আমাদের পরিকল্পনা ছিল। 

লিটনের সঙ্গে আপনার জুটিটা খুব কম ইনিংসের। কিন্তু মনে হয়েছে আপনারা জমাট হয়ে গেছে। দুজেরন আগ্রাসী মনোভাবই কি পরিবর্তন এনে দিল? 

রনি তালুকদার: দেখেন এই জিনিসটা প্রতিটা ব্যাটসম্যানেরই একই উত্তর থাকবে। আমিও চাই, আমার খেলার ধরন যখন আক্রমণাত্মক খেলি, আমার পার্টনারও যেন একই রকম খেলে। খেলতে পারে। এটা দুইজনের জন্যই সহজ হয়ে যায়। একটা লং ইনিংস খেলার জন্য..(দুই পাশ থেকে রান হওয়া) খুবই জরুরি আমি মনে করি। এইজন্য লিটন ওর সঙ্গে ব্যাটিং করতে পারা...(আনন্দের)। বললাম না কখন রান স্কোরবোর্ডে যে হচ্ছে বোঝায় যায় না।

দুই ওপেনারের রসায়ন জমে উঠার পেছনে বড় কারণ?

রনি তালুকদার: আমরা বল বাই বল খেলার চেষ্টা করি। আমরা বলে মেরিট অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করি। আমরা দুইজন কথা বলি, প্রতিটা বল খেলার চেষ্টা করি। এবং প্রপার শট খেলার চেষ্টা করি। প্রতি বলে যদি স্ট্রাইক রোটেট কর‍তে পারি,ইতিবাচক মানসিকতা থাকে তাহলে ইনিংসটা লং হওয়ার সর্বোচ্চ সুযোগ থাকে। 

ডট বল কম হচ্ছে। তাতে কি মনে হচ্ছে আপনাদের ওপর চাপ কম পড়ছে?

রনি তালুকদার: টি-টোয়েন্টি হোক বা ওয়ানডে, আপনি যদি স্ট্রাইক রোটেট করে খেলতে পারেন ব্যাটসম্যানের দিক থেকে চাপ কমে যায়। আমরা ওইটাই চেষ্টা করতেছিলাম যে আমরা প্রতি বলেই রান নিবো। যদি ইন্টেন্ড পজিটিভ থাকে, তাহলে আপনি এটা কর‍তে পারবেন। আমরাও চেষ্টা করতেছিলাম, সেই জিনিসটা করার। 

আয়ারল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করতে চাইবেন নিশ্চয়ই...

রনি তালুকদার: আমাদের একটা ম‌্যাচ পরিকল্পনা আছে। প্রতিটা সিরিজেই পরিকল্পনা করে মাঠে নামি। তো ওইটাই পরিকল্পনা করে চেষ্টা করি। আমরা প্রতিটা ম্যাচ বাই ম্যাচ ওই পরিকল্পনা করি। সিরিজ অনুযায়ী ওইটা যে... ইংল্যান্ডের সঙ্গে কেমন খেলব, আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে কেমন খেলব, এমন না। আমরা প্রতিটা ম্যাচ অনুযায়ী করি। একই ধাঁচে যদি আমরা খেলতে পারি যা ভবিষ‌্যতে আমাদের কাজে দিবে। এই জিনিসটাই ক্যারি করতেছি। আর টি-টোয়েন্টিতে টিম অনুযায়ী যে জিনিসটা বুস্ট আপ করতে চাচ্ছি, অ্যাগ্রেসিভ খেলার প্রবণতা যাতে খেলোয়াড়দের মধ্যে থাকে। 

আইরিশরা দূর্বল কী না?

রনি তালুকদার: না আমরা ভালো খেলছি। আমাদের টিম ভালো খেলছে। ব্যাটসম্যান-বোলাররা ভালো খেলছে। দলগতভাবে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি। 

আপনার প্রতি সাকিবের বার্তা কি ছিল?

রনি তালুকদার: সাকিব ভাই কিংবদন্তি ক্রিকেটার সেটা আপনারাও জানেন। ওনার সঙ্গে আমি যখন আবাহনীতে খেলছি, আজকে থেকে ১২ বছর আগে তখনও তার মধ্যে একই ইন্টেন্ট ছিল। একই মনমানসিকতা ছিল। উনি সব সময় ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করে। আর ডোমিনেট করার চেষ্টা করে। ওনার ডমিনেটিং যে চিন্তা ভাবনা সেটা দলের মধ্যে ছড়ায় দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা খেলব, বাঘের মতো খেলব। আমরা ডমিনেট করার চেষ্টা করব। আমাদের ভয় ডর থাকবে না। আমরা সব সময় ইতিবাচক শারীরিক ভাষা নিয়ে মাঠে যাবো। হতে পারে আমরা কখনও ফেল করব, আবার দেখা যায় সফল হবো। যদি এটা ক্যারি করতে পারি, তাহলে আমাদের সফলতার পরিমাণ বাড়বে। 

হাথুরুসিংহের চিন্তা ভাবনাও কি একই রকম?

রনি তালুকদার: হ্যাঁ, অধিনায়ক-কোচের চিন্তা ভাবনা একই রকম।

পরিবারের কথা বলবেন?

রনি তালুকদার: আমরা ক্রীড়াপ্রেমি পরিবার। আমার বাবা সবসময় খেলা পছন্দ করতেন। আমরা তিন ভাই খেলাধুলা করতাম। বড় ভাই খেলত, জনি ছোট ভাই এখনও খেলছে। আমার বাবা-মা, বলতে গেলে পরিবার থেকে যে সাপোর্ট পেতাম, এটা এক কথায় অসাধারণ। মূল সাপোর্ট পরিবার থেকেই পেতাম। আমার মা এখন আমার জন্য অনেক আশীর্বাদ করে। সব সময় চিন্তা ভাবনা করে আমি যেন, ইনজুরিতে না পড়ি, ভালো খেলতে পারি। আমার টিম যেন ভালো খেলে। এটা আমার প্রতি তার আশীর্বাদ থাকে। আমাকে সবসময় ফোনে যোগাযোগ করে কী অবস্থা। খেলার আগেও ওনার সঙ্গে কিথা বলে মাঠে যাই। ওনার সঙ্গে কিথা না বললে আমি নিজেই শান্তি পাই না।

চট্টগ্রাম/ইয়াসিন/রিয়াদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়