ফুটবল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর!
আমিনুল || রাইজিংবিডি.কম
ইনজুরিতে পড়ার একটি দৃশ্য
বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বিভিন্ন দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে ইনজুরি নানান শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পর্তুগালের রোনালদো কি ফিট থাকবেন? জার্মানির শোয়েনস্টেইগার, ফিলিপ লাম কিংবা নয়ারেরই বা কি হবে?
ফুটবলের সাথে ইনজুরির গাঁটছড়া তো আজকের নয়। তলপেটে টান, পায়ের হাড় ভাঙা, পায়ের ডিমে টান, হাঁটুর লিগামেন্ট ছেঁড়া, ফুটবলে কিনা ঘটে। এবং এগুলো বিশ্বকাপ আসছে বলেই থেমে থাকে না।
জার্মানির ডুইসবুর্গ-এসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োমেকানিক্সের অধ্যাপক এভাল্ড হেনিগ বলেন, ‘আমরা বড় দলগুলো সম্পর্কে জানি যে, সব সময়ই তাদের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ খেলোয়াড় ইনজুরিতে থাকে। এটা একটা বড় সমস্যা। এই সমস্যার মূল আবার ফুটবল খেলার ধরন ও প্রকৃতিতে।’
ফুটবলে যে ধরনের কর্মক্ষমতা ও দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে, সেগুলোর অনেকটাই এসেছে মানব ইতিহাসের সেই আদিপর্ব থেকে। যখন মানুষ ‘শিকারি বা সংগ্রাহক’ ছিল, মানুষের কৃষিজীবী হবার অনেক আগে। আজও ক্ষিপ্রতা, নমনীয়তা এবং ‘বডি কনট্যাক্ট, অর্থাৎ শারীরিক সংঘাতই হল ফুটবলের উপজীব্য। যে কারণে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার মধ্যে ইনজুরিতে ফুটবল নিজেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।
ঘন ঘন ইনজুরির কারণ হিসেবে আরো যোগ করতে হবে, পেশাদার ফুটবলের সুদীর্ঘ মরশুম। এ ছাড়া ফুটবলের পোশাক এবং অনুশীলনে নিত্য নতুন অভিনবত্বও কিছুটা দায়ি। ফুটবলারদের অনুশীলন আজকাল অনেক বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে, বলে প্রফেসর হেনিগের ধারণা।
মাসল কন্ডিশনিং অনুশীলনের কথাই ধরা যাক। আগে এই ট্রেনিং এ খেলোয়াড়দের দৌড়ে চড়াইয়ে উঠতে হতো, কিন্তু তারা পায়ে হেঁটে নীচে নামতে পারতেন। এখন ট্র্যাক আর ফিল্ডের অ্যাথলিটদের অনুকরণে ফুটবল খেলোয়াড়রাও সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে নীচে নামেন। এর ফলে গাঁট ও হাড়ের ওপর বেশি চাপ পড়ে, যার ফলে ইনজুরির সম্ভাবনা বাড়ে।
ফুটবলারদের ‘কিট` অর্থাৎ সাজপোশাক কিংবা সাজসরঞ্জামের কথায় এলে বলতে হয়, ফুটবলের বিস্মৃত অতীতে ফুটবল বুটের ওজন ছিল প্রায় ১ কিলোগ্রাম। সেগুলো ছিল শক্তপোক্ত এবং উচ্চতায় বেশি। যাতে গোড়ালির গাঁট সুরক্ষিত থাকে। বিপক্ষ খেলোয়াড়দের বুটের স্টাড অথবা অন্য কোনো শকে আঘাত না পায়। আজকালকার ফুটবল বুটের ওজন মাত্র ১০০ গ্রাম। এগুলোর ট্র্যাকশন বেশি, তাই খেলোয়াড়রা দিক পরিবর্তন করার সময় চাপ বেশি পড়ে। পেশি ঘুরে যায়, যার ফলে পেশির স্ট্রেস ও ইনজুরির সম্ভাবনা বাড়ে।
কিন্তু খেলোয়াড়দের সবচেয়ে বড় শত্রু হল শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি। ১২ জুন বিশ্বকাপ শুরু হতে চলেছে। কিন্তু এখনো ইউরোপের বেশ কয়েকটি বড় টুর্নামেন্ট শেষ হয়নি। অথচ খেলোয়াড়দের ঠিকমতো বিশ্রাম নেয়ার জন্য অন্তত মাসখানেক ব্যবধানের প্রয়োজন ছিল।
ইনজুরির জন্য ম্যাচের শেষ পনেরো মিনিটই সবচেয়ে বিপজ্জনক। সেই সময়ে ঠিক ঐ ক্লান্তির ফলেই উল্টাপাল্টা ‘ট্যাকল’ হতে পারে। কোনে দল হয়ত গোল করেছে; কিংবা হলুদ কি লাল কার্ড দেখেছে; কিংবা এগিয়ে রয়েছে, ঠিক সেইরকম সময়ে ইনজুরির ঝুঁকি থাকে বেশি। সুইডেনের একটি প্রতিষ্ঠান বিগত তিনটি বিশ্বকাপের তথ্য ঘেঁটে এই সব সিদ্ধান্তে এসেছে।
কিন্তু সিদ্ধান্ত নিয়ে কি হবে? ফুটবলপ্রেমীরা চায় উত্তেজনাপূর্ণ, দ্রুতগতির খেলা। তারা চায় আগ্রাসনপূর্ণ খেলা। আর ফুটবল খেলোয়াড়রা চায় জিততে। আর তাতেই ইনজুরির প্রবণতা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। ইনজুরি- এমনই একটা শব্দ, যা একজন খেলোয়াড়ের পুরো ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিতে পারে। এ কথা বলাটা হয়তো অত্যুক্তি হবে না যে, ‘ফুটবল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।’
তথ্যসূত্র : ডয়েচে ভেল
রাইজিংবিডি/ঢাকা/ ২৩ মে ২০১৪/আমিনুল
রাইজিংবিডি.কম