ঢাকা     বুধবার   ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ২ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

‘মাথায়’ সমস্যা, সমাধানে সংস্কৃতি বদলের পুরোনো সুর

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:১২, ১১ মে ২০২৫  
‘মাথায়’ সমস্যা, সমাধানে সংস্কৃতি বদলের পুরোনো সুর

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের টপ তিন স্কোরার যথাক্রমে এনামুল হক বিজয়, পারভেজ হোসেন ইমন ও নাঈম শেখ। রানের পসরা সাজিয়ে দেন দেশের একমাত্র পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেট প্রতিযোগিতায়। এনমুল ৮৭৪, পারভেজ ৭৯৮ ও নাঈম ৬১৮ রান করেন। দ্যুতিময় পারফরম্যান্সে তিনজনই জায়গা করে নেন নিউ জিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ ‘এ’ দলে।

এবার ‘এ’ দলের জার্সিতে তাদের পারফরম্যান্সটা দেখুন। এনামুল ৩ ম্যাচে ৭৯, পারভেজ ২ ম্যাচে ৩২, নাঈম ৩ ম্যাচে ৬২। ঢাকা লিগের গড় রানটাও নিউ জিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে সিলেটে করতে পারেননি তারা। তাই তো সাবেক সফল এক অধিনায়কের কড়া বক্তব্য, ‘‘ঘরোয়া ক্রিকেটে মুখস্থ বল খেলতে খেলতে রান করে। একটু বল এদিক-সেদিক হলেই আর পারে না।’’

আরো পড়ুন:

জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন মিরপুরে আজ সেই কথাটাই বোঝাতে চাইলেন, ‘‘খেলাটা তো আসলে মাথায়। আমাদের সমস্যাটাও আসলে মাথায়।’’

জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানোর আগে খেলোয়াড়দের নিয়ে এই অভিযোগ আগেও করেছেন সালাহউদ্দিন। ঘরোয়া ক্রিকেটে লম্বা সময় ধরে কাজ করেছেন তিনি। রুট লেভেলেও কাজ করেছেন। একাধিক ক্লাবে পেয়েছেন জাতীয় দলের সব ক্রিকেটারদের। সাকিব, তামিমের মতো ক্রিকেটাররা সমস্যায় পড়লেই ছুটেছেন তার কাছে। ছেলেদের এই ‘মাথার সমস্যা’ শুধরাতে না পারার দায় কোচদের কতটা প্রশ্নটাও উঠছে?

কিন্তু সেদিকে না গিয়ে সালাউদ্দিন হাঁটলেন সহজ পথে। যেখানে কাউকেই দায় দেওয়ার সুযোগ দেখেন না তিনি, ‘‘ছেলেদের স্কিলের উন্নতি নিয়ে কাজ করার খুব বেশি সময় পাই না আমরা। টানা এত সিরিজ থাকে। একটা থেকে আরেকটা সিরিজে যাওয়ার মতো বা স্কিল বাড়ানোর কাজ করার সুযোগ থাকে না।’’

তবে আশার কথাও শোনালেন তিনি, ‘‘এটা কীভাবে উন্নতি করা যায়... এটা যে বললাম আর হয়ে গেল, তা কখনোই হবে না। এর জন্য আসলে অনেক সংস্কৃতির ব্যাপার আছে। এই জিনিসগুলো নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে। দায়িত্বের ব্যাপারটা আমরা চেষ্টা করছি ছেলেদের ওপর ছেড়ে দিতে। তাহলে তারা হয়তো দ্রুত শিখবে।”

যে সংস্কৃতি বদলের কথা সালাউদ্দিন বলছেন তা দেশের ক্রিকেটের আদি চাওয়া। সেই পুরোনো সুরটাই নতুন করে ধরলেন তিনি, ‘‘এটা (দল গড়ে তোলা) একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। জাতীয় দলের ওপরেই সব কিছু নির্ভর করে না। যারা ‘এ’ দলে খেলছে, এইচপিতে আছে, টাইগার্সে অনুশীলন করবে, এর সঙ্গে আমাদের কাঠামো কতটা উন্নত হচ্ছে, সংস্কৃতি কত উন্নত হচ্ছে- সব কিছু মিলিয়েই কিন্তু বোঝা যাবে আমরা কোথায় যাচ্ছি। জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা তাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারা নিজেদের উন্নতি চাচ্ছে। তবে একটা দেশের ক্রিকেট শুধু এই গুটিকয়েক ক্রিকেটারের ওপর নির্ভর করে না। এর জন্য ভালো কাঠামো প্রয়োজন। ছেলেরা নিজ থেকে কীভাবে তৈরি হয়ে আসবে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। এটা সবাই মিলেই করতে হবে। প্রতিটি বিভাগের এক হয়ে কাজ করতে হবে। সব কিছু মিলে একটা দেশের ক্রিকেট এগোবে।”

“এটা কোনো নির্দিষ্ট ক্রিকেটারের ওপর নির্ভর করে না। সমষ্টিগতভাবে আমাদের কাজ করতে হবে। চারটা বিভাগ- গেম ডেভেলপমেন্ট, এইচপি, টাইগার্স, জাতীয় দল এবং এসব জায়গায় যারা কাজ করছে, তাদের সবার লক্ষ্য একই হতে হবে। পরিকল্পনা তাই ভালোভাবে করতে হবে এবং বাস্তবায়ন যদি ভালোভাবে না হয়, সবসময় একই জায়গায় থেকে যাব।” – যোগ করেন তিনি।

সঙ্গে কড়া বার্তাও দিয়ে রাখলেন, ‘‘আমরা একটা সংস্কৃতি তৈরির চেষ্টা করছি, এটা কারও নিজের দল না, কারও একার সম্পত্তি নয়। এটা দেশের সম্পত্তি। আপনাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হবে, যদি ভালো নাও লাগে, পালন করতে হবে। আপনার ভালো না লাগলে এখানে খেলার দরকার নেই। কৌশলগত জায়গা থেকে ম্যাচের আগে আমরা ঠিক করব কে কখন খেলবে।”

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়