শততম টেস্টের পর কতদূর যাবেন মুশফিকুর?

প্রবল চাপে ছিলেন। দলে জায়গা নিয়েও উঠছিল প্রশ্ন। পারফরম্যান্সের সঙ্গে অভিজ্ঞতার কোনো রসায়নই মিলছিল না। চেনা জায়গাটাও বড্ড অচেনা হয়ে যাচ্ছিল। তবে নিবেদনে কোনো ঘাটতি ছিল না। জানতেন পরিশ্রমে মিলবে সফলতা। চোয়ালবদ্ধ সেই প্রতিজ্ঞাতেই আলোর দেখা পেলেন। যে আলো নিভু নিভু হয়ে জ্বলছিল, এখন তা জাজ্বল্যমান।
বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে মুশফিকুর রহিমের শততম মাইলফলক ছোঁয়ার হাতছানি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলের পর কলম্বো টেস্টে খেলবেন মুশফিকুর। ৯৮ টেস্ট হয়ে যাবে। পরের দুই টেস্টের জন্য বছরের শেষ প্রান্তে আয়ারল্যান্ড সিরিজের জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হবে।
অথচ গলে নামার আগে তার ওপর রাজ্যের চাপ। এই টেস্টের আগে ১৩ ইনিংসে কোনো ফিফটি ছিল না। ৩৮ ছাড়ানো মুশফিকুরকে নিয়ে তাই প্রশ্ন উঠছিল। মুশফিকুরের জন্য বাংলাদেশ কী অপেক্ষা করবে? তার শততম টেস্ট পর্যন্ত কী সুযোগ দেবে? কতদিন খেলবেন তিনি? ব্যর্থ হলেও কী লাগাতার সুযোগ পাবেন? প্রশ্নের কুন্ডলি যখন ঘুরপাক খাচ্ছিল তখনই নিজের অতি পছন্দের আঙিনায় ফিরে চেনা ছন্দে ধরা দিলেন মুশফিকুর।
২০১৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন উইকেট রক্ষক এ্ই ব্যাটসম্যান। সেই গলেই ফিরে এবার ১৬৩ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস খেললেন। পরের ইনিংসে আবার ৪৯। দুই ইনিংস মিলিয়ে মুশফিকুর নিজের সামর্থ্যের জানান দেননি, বরং জানিয়ে রেখেছেন, ফুরিয়েও জাননি। লম্বা ইনিংস এখনো খেলতে পারেন।
দুঃসময় পেরিয়ে মুশফিকুরের আকাশ এখন সাদা মেঘের ঘনঘটা। শ্রীলঙ্কায় এবারের সফরের আগে দ্বীপরাষ্ট্রটিতে তার ব্যাটিং গড় ছিল ৬২.৬৩। এখন ৭১ পেরিয়ে। তার অধীনে কলম্বোতে ২০১৭ সালে শততম টেস্টে জয় পায় বাংলাদেশ। নিদাহাস ট্রফির মতো প্রতিযোগিতায় চিত্তাকর্ষক ইনিংস খেলেছেন লঙ্কান মাটিতে। জয়ের পর তার উদযাপনে গোটা দেশটা তেতে উঠেছিল। নিশ্চিতকরেই বলা যায়, ভারত মহাসাগরের কোলজুড়ে থাকা দেশটি মুশফিকুর রহিমের বেশ প্রিয়।
সেখানেই গিয়ে আবার পায়ের নিচে মাটি শক্ত করলেন। কলম্বোর পর ঘরের মাঠে মুশফিকুর শততম টেস্ট খেলবেন। তা নিয়ে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই। তবে শততম টেস্টের পর মুশফিকুর কী খেলা চালিয়ে যাবেন? অন্য দুই ফরম্যাটকে বিদায় বলে দিয়েছেন মুশফিকুর। নিজেদের সবচেয়ে পছন্দের ফরম্যাটেই এখন খেলছেন। এখনও সাদা জার্সি, রং চটা, ঔজ্জ্বল্য হারানো ক্যাপটা মাথায় নিয়ে মাঠে নেমে যান। যেখানে খুঁজে পান গর্ব।
লর্ডসে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই যাত্রা কী থেমে যাবে শততম টেস্টেই? যার হাত ধরে মুশফিকুরের টেস্ট যাত্রা শুরু হয়েছিল, হাবিবুল বাশার সুমন তিনি অবশ্য চান না একশতেই থেমে যাক।
‘‘একশ টেস্ট খেলে অবসরে যাবে এই আলোচনাটা আমার পছন্দের না। একশ টেস্ট কেন, তিনি যদি আরো ১০টা টেস্ট ম্যাচ খেলতে চান, কেন না? এই আলোচনাটা আমার পছন্দের না। হি সুড প্লে। অসাধারণ একজন ব্যাটসম্যান। সেটা আমরা দেখেছি এই টেস্ট ম্যাচে (গলে) । ভবিষ্যতেও এমন করবেন। এই আলোচনাটা আমরা না করে ওর উপরই ছেড়ে দেই। তিনি কবে অবসর নেবেন। আমি আশা করবো, যেদিনই নিক সেটা যেন মিরপুর স্টেডিয়ামে হয় এবং আমরা সবাই তাকে সেই সম্মানটা দিতে পারি।’’
গলেই বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন শ্রীলঙ্কার হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। বাংলাদেশের যে শীর্ষ ক্রিকেটার, কিংবদন্তি হিসেবে বিবেচিত তারা কেউই মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারেননি। হাবিবুলের চাওয়া, মুশফিকুরের যেন ওই সম্মানটা দিতে পারে দেশের ক্রিকেট বোর্ড।
‘‘আমাদের যে লিজেন্ড ক্রিকেটার, আমরা যেই টপ ফাইভের কথা বলি, আমি প্রত্যাশা করেছিলাম তাদেরকে আমরা মিরপুর স্টেডিয়ামে, যেভাবে স্টিভ ওয়াহ, যেভাবে শচীন টেন্ডুলকার অবসরে গেছেন তাদের মতো করে বিদায় জানাব। আমার ব্যক্তিগত আকাঙ্খা সেটা ছিল। আশা করছি মুশফিকুর রহিম সেটা করবেন। সেটা মুশফিকুর রহিম ডিজার্ভ করেন।’’
ঢাকা/ইয়াসিন