ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

আরব বসন্তে কী পেল মধ্যপ্রাচ্য

বকুল / সন্তোষ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৭, ২৭ জানুয়ারি ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আরব বসন্তে কী পেল মধ্যপ্রাচ্য

নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে প্রতিবাদ জানান বুয়াজিজি (ফাইল ফটো)

জাহাঙ্গীর আলম বকুল
উত্তর আফ্রিকার ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬১০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট দেশ তিউনিসিয়া। এ দেশের এক উচ্চশিক্ষিত বেকার যুবক মোহাম্মদ বুয়াজিজি। সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করা এ যুবক একটা চাকরির জন্য যা যা করার সব করেছিলেন। কিন্তু ৩০ শতাংশের এ বেকারের দেশে অনেকের মতো তাকেও হতাশ হতে হয়েছে। তবুও তিনি ভেঙে পড়েননি।

ভাইবোনের পড়াশোনার খরচ জোগাতে বৃদ্ধ মায়ের মুখে একমুঠো আহার তুলে দিতে সিদ্ধান্ত নিলেন ফেরি করে সবজি ও ফলমূল বিক্রি করবেন। একটি ভ্যান ভাড়া নিয়ে সিদি বুজিদ শহরের রাস্তায় সবজি বিক্রি শুরু করলেন তিনি। কিন্তু এখানেও বাদ সাধে সরকারি প্রশাসন। স্থানীয় এক সরকারি কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া সবজি ফলমূল বিক্রির দায়ে তার মালপত্রসহ ভাড়া করা ভ্যানটি বাজেয়াপ্ত করা হয়। ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও তিনি বিচার পাননি।

এর পরের ঘটনা আরো করুণ। ক্ষোভে-দুঃখে সিদি বুজিদ শহরের রাস্তায় ২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে প্রতিবাদ জানান অভিমানী এ যুবক। এর কয়েক দিন পর ৫ জানুয়ারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার। গল্পটা এখানে শেষ হতে পারত, কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য থেকে উত্তর আফ্রিকা পর্যন্ত লক্ষ-কোটি হতাশ যুবকের প্রতীক হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন বুয়াজিজি। যে আগুনে নিজেকে পুড়িয়েছিলেন তিনি, সে আগুনে তিন বছর ধরে পুড়ছে স্বৈরশাসকদের মসনদ। সৃষ্টি হয়েছে গণজাগরণ।

এই গণজাগরণ পশ্চিমা গণমাধ্যম নাম দিয়েছে ‘আরব বসন্ত’।  

তিউনেসিয়া

মোহাম্মদ বুয়াজিজির মৃত্যুর পর তিউনেসিয়ায় সরকারবিরোধী ক্ষোভ মহীরুহ রূপ নেয়। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরে। বিশ্ববাসী বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করে ২৩ বছর ক্ষমতাসীন জয়নাল আবেদিন বেন আলি সরকারের বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের কীভাবে সহিংস প্রকাশ ঘটতে থাকে।

এ আগুনে পুড়ে যায় জয়নাল আবেদিন বেন আলির ২৩ বছরের মসনদ। তিউনিশিয়া জুড়ে বিক্ষোভ-আন্দোলনে সামরিক বাহিনীর গুলিতে ৩০০ জনের হতাহতের প্রেক্ষাপটে বেন আলি ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। আশ্রয় নেন তার বন্ধুদেশ সৌদি আরবে। কিন্তু তাতেও তার শেষ রক্ষা হয়নি। পরে তার অনুপস্থিতিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় বেন আলির।তার বিরুদ্ধে আন্দোলনের এ সাফল্য আরব বিশ্নের অন্যান্য দেশকে উৎসাহিত করে।

এরপর ২০১১ সালের অক্টোবরে তিউনেসিয়ার ইতিহাসে প্রথম পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আধুনিক ইসলামিস্ট আন-নাহদা পার্টি ৪১ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়। শুধু নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ভিন্নমতাবলম্বী মুন্সেফ মারজোওকি পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

এরপর বিরোধীরা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রাস্তায় নামে এবং ২০১৩ সালের ডিসেম্বর সংবিধান প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত থাকে। পরে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো মেহেদি জোমাকে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিতে সম্মত হয়। গত ২৬ জানুয়ারি জাতীয় সংবিধান পরিষদে ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে নতুন সংবিধান পাস হয়। ২১৬ ভোটের মধ্যে সংবিধানের পক্ষে ২০০ ভোট পড়ে।

প্রধানমন্ত্রী মেহেদি জোমা জানিয়েছেন, তিনি একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেছেন। নতুন করে জাতীয় নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় থাকবেন এবং রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। অব্যাহত আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিউনেসিয়ার তিন বছর চলে গেছে। প্রাপ্তি একটি সংবিধান। দেশটির ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। গণতন্ত্র এখনো অধরা।   

মিসর

আরব বসন্তের পর মিসরে এখনো পর্যন্ত দুজন প্রেসিডেন্টের পতন হয়েছে। টানা ১৮ দিনের গণবিক্ষোভের মুখে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিন দশকের স্বৈরশাসক হুসনি মোবারকের পতন ঘটে। তিনি উপায়ান্তর না পেয়ে ক্ষমতা ছেড়ে দেন। গণবিক্ষোভের সময় ৮৪৬ জনের মৃত্যুর দায়ে হুসনি মোবারকের বিচারে শাস্তি হয়েছে। তিনি অবশ্য তার বিচারের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন।

হুসনি মোবারকের পতনের পরে দেশটির সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ কাউন্সিল (এসসিএএফ) ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে তাদের নিয়ন্ত্রণে নির্বাচনে বিস্ময়করভাবে জয়লাভ করে ইসলামপন্থীদল মুসলিম ব্রাদারহুড এবং জাস্টিস পার্টি। ২০১২ সালের জুনে মুসলিম ব্রাদারহুডের মুহম্মদ মুরসিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয়।

তিনি ক্ষমতা নিয়েই এসসিএএফের জারি করা বিতর্কিত সব ডিক্রি বাতিল করেন। এ ডিক্রির মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমিত করা হয়েছিল। হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ ভেঙে দেন এবং সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিবর্তন আনেন। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে মুহম্মদ মুরসি কয়েকটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেন। তিনি একটি ডিক্রি জারি করেন, যেখানে তার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার একটি সূদরপ্রসারী পরিকল্পনা ছিল। একটি সংবিধান চূড়ান্ত করেন তিনি, যেটা ইসলামপন্থীদের জন্য সুবিধাজনক ছিল। এরপর ২০১২ সালের নভেম্বরে মুরসির বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভ শুরু হয়।

মুরসির বিরুদ্ধে লাখ লাখ মানুষের রাস্তায় বিক্ষোভের পর ২০১৩ সালের জুন মাসে মুহম্মদ মুরসিকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করে সেনাবাহিনী। একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর সেনাবাহিনী মুসলিম ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে সারা দেশে অভিযান শুরু করে। এতে কায়রোর মুরসির নিজের আসনে ১ হাজার মানুষ নিহত হয়। মুসরিকে আটক করা হয়।

২০১২ সালের সংবিধানকে রহিত করে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। সে সংবিধানের ওপর গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে মিসর দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এর একদিকে আছে- অন্তর্বর্তী সরকারের সমর্থক এবং সেনাবাহিনী, আর অন্যদিকে আছে মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থকরা এবং সেসব ভীতসন্ত্রস্ত মানুষ, যারা মনে করে, কর্তৃপক্ষ জনগণের ওপর দমন-পীড়ন চালাবে।

অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, মিসর আবার পুলিশি রাষ্ট্রব্যবস্থার দিকে ফিরে যাবে। যেটি থেকে উত্তরণের জন্য ফেসবুকের মাধ্যমে তরুণরা সংগঠিত হয়ে হুসনি মোবারকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিল। তাদের আন্দোলনের সুফল হাইজ্যাক হয়ে যাবে পশ্চিমা শক্তির কাছে।

লিবিয়া
২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর বেনগাজিতে এক সরকারবিরোধী বিক্ষোভের ওপর সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণের পর অভ্যুত্থান শুরু হয়। এরপর সরকারবিরোধী বিক্ষোভ লিবিয়ার অন্য শহরে ছড়িয়ে পড়ে, যা সহিংস রূপ নেয় রাজধানী ত্রিপোলিতে।

এ আন্দোলন দমন করার জন্য ৪২ বছরের স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি শুরুতে শক্তি প্রয়োগের পথ বেছে নেন। ২০১১ সালের মার্চে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে লিবিয়ার জনগণকে রক্ষার জন্য ‘সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ’ নেওয়ার প্রস্তাব পাস হয়। এরপর ন্যাটো লিবিয়া সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়। ইতিমধ্যে পশ্চিমা এবং কিছু আরব দেশের সামরিক সহযোগিতায় গাদ্দাফি সরকারের প্রতিপক্ষ বিদ্রোহী গ্রুপ ত্রিপোলীমুখী অভিযান শুরু করে।

দীর্ঘ ছয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বিদ্রোহীরা ত্রিপোলির নিয়ন্ত্রণ নেয়। ৪২ বছরের সিংহাসন ছেড়ে গাদ্দাফি পালিয়ে যান। পরে ২০১১ সালের আগস্টে শিরথি শহরের বাইরে ধরা পড়েন এবং নিহত হন লৌহমানব মুয়াম্মা গাদ্দাফি।

জাতীয় অন্তর্বর্তী কাউন্সিল (এনটিসি) অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয়। তারা লিবিয়াকে খাতাকলমে ‘মুক্ত’ ঘোষণা করে। তারা লিবিয়াকে একটি বহুদলীয়, গণতান্ত্রিক দেশ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেয়। এনটিসি ২০১২ সালের জুলাইয়ে দেশে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের জন্য ভোটের আয়োজন করে। এ নির্বাচনে জেনারেল ন্যাশনাল কংগ্রেসের (জিএনসি) উদার, অসাম্প্রদায়িক এবং স্বাধীন প্রার্থীরা মুসলিম ব্রাদার হুডপন্থী জাস্টিস অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন পার্টির প্রার্থীদের পরাজিত করে।

গাদ্দাফিমুক্ত লিবিয়ায় শান্তি ফিরে এসেছে এবং সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কি না, এ প্রশ্নটি এখন ঘুরেফিরে আসছে। লিবিয়া জুড়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সরকারের অস্ত্র সমর্পণের আহ্বানের পরও অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া প্রায় ৩০০ গেরিলাবাহিনী বারবার সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। এরই মধ্যে লিবিয়ার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আঞ্চলিকতার অভিযোগ উঠেছে। বেকার সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। সরকারে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহির ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।


সিরিয়া
আরব আন্দোলনের ঢেউ কিছুটা দেরিতে এসে লাগে সিরিয়ায়। কিন্তু প্রথম দিকে এ আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ। পরে তা সহিংসতার নিপতিত হয়। ক্রমে তা জাতিগত গৃহযুদ্ধে রূপ নিয়েছে।

দুর্নীতি নির্মূল এবং বৃহত্তর স্বাধীনতার দাবিতে ২০১১ সালে মার্চ মাসে সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দিরায় আন্দোলন শুরু হয়েছে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ওপর সেনাবাহিনী গুলি চালায়। এতে আন্দোলন আরো তীব্র হয়।২০১১ সালের জুলাইয়ে দেশজুড়ে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে এসে বাসার আল আসাদের পদত্যাগ দাবি করেন।    

আন্দোলনকারীদের ‘সন্ত্রাসী’ ও ‘অপরাধী গ্রুপ’ দাবি করে তাদের ওপর দমন-পীড়ন অব্যাহত থাকার প্রেক্ষাপটে আসাদবিরোধী গ্রুপ নিজেদের রক্ষা এবং আসাদের বিশ্বস্ত বাহিনীকে হঠাতে হাতে অস্ত্র তুলে নেয়।

সেনাবাহিনীর শক্ত বিরোধিতা সত্ত্বেও বিদ্রোহীরা যুদ্ধে সিরিয়ার দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের বিরাট অংশ দখল করে নেয়। তারা রাজধানী দামেস্ক এবং আলেপ্পোর শহরে ব্যাপক অভিযান চালায়। তখন তারা সারা বিশ্বে নিজেদের সিরিয়ার জনগণের বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে।

২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট আসাদ বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়। সরকারি বাহিনী বিদ্রোহীদের অধিকৃত অঞ্চল উদ্ধারের জন্য ব্যাপক অভিযান চালায়। সিরিয়ার দক্ষিণ এবং পশ্চিমাঞ্চলে সরকারি বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণ আবার প্রতিষ্ঠা করে। বিদ্রোহীরা তথন তাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর ভারী অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ আনে। আগস্ট পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকে।

এরপর দামেস্কের উপকণ্ঠে রাসায়নিক হামলা চালানো হয়। এতে শত শত মানুষের মৃত্যু ঘটে। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়া সরকারের ওপর হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। মার্কিন হামলা থেকে বাঁচতে আসাদ তার হাতে থাকা সব রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংষের সিদ্ধান্ত নেয়। এবং ধ্বংসপ্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

এ দেশটিতে যুদ্ধ বন্ধে এখন সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে এক শান্তি আলোচনা সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় চলমান রয়েছে। এখনো পর্যন্ত এ আলোচনায় সামান্যই অগ্রগতি হয়েছে। কোনো পক্ষ তাদের অবস্থান থেকে সরে আসেনি।

আরব বসন্তের যে ঢেউ লেগেছে সিরিয়ায়, তাতে কী পেয়েছে দেশটির জনগণ। দীর্ঘ ক্ষমতায় থাকা আসাদকে হঠাতে গিয়ে গৃহযুদ্ধে নিপতিত হলো দেশটি। চারিদিকে মৃত্যু আর লাশের উৎসব। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে বেড়ে উঠছে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুটি। এখনো পর্যন্ত যুদ্ধে ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে।

এখন আরববিশ্ব জুড়ে একটি প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসছে- কী দিয়েছে আরব বসন্ত। স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন, তার ফল কি হত্যা, গণহত্যা, গৃহযুদ্ধ আর দুর্ভিক্ষ? এই নির্মমতার শেষ কোথায়, তাও জানে না তারা। হয়তো আন্দোলন নিয়্ন্ত্রণের রিমোটও হাতে নেয়। সেটি চলে নাটের গুরু পশ্চিমাদের হাতে।

আপাতদৃষ্টিতে এ গণজাগরণকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে চলা দমন-পীড়ন, স্বাধীন মতপ্রকাশের অভাব, বেকারত্ব-হতাশা, অনিয়ম-দুর্নীতি, ব্যক্তি বা পরিবারবিশেষের ক্ষমতা আঁকড়ে থাকায় ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হলেও ঘটনার গভীরে ভিন্ন বাস্তবতা রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

কেউ কেউ মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-অবস্থানগত গুরুত্ব এবং তেলের ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদেশ মধ্যপ্রাচ্যে আধা-সামরিক বা স্বৈরশাসন বা সেমি স্বৈরশাসন টিকিয়ে রাখতে দীর্ঘদিন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মদদ দিয়ে এসেছে। কিন্তু এখন অবাধ তথ্যপ্রবাহ, আধুনিক শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের জাগরণ এবং অধিকারসচেতনতার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের পলিসির পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। তার ফলে এ গণজাগরণ। তবে কারণ যা-ই হোক, মধ্যপ্রাচ্য থেকে উত্তর আফ্রিকা জুড়ে দেশগুলোতে যে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে, তাতে সন্দেহ নেই। এতে কোনো কোনো অঞ্চলে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে, মানচিত্রে আসতে পারে পরিবর্তন। ব্যক্তি বা পরিবারকেন্দ্রিক শাসন থেকে বেরিয়ে এসে আধা-গণতান্ত্রিক বা সেমি গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা টিকে থাকতে পারে।

 

 

রাইজিংবিডি / বকুল / সন্তোষ / ক.কর্মকার

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়