ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ভূতের দেশের হাতছানিতে 

ফাতিমা জাহান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪৯, ৮ জুলাই ২০২১   আপডেট: ২০:০৩, ৮ জুলাই ২০২১
ভূতের দেশের হাতছানিতে 

কুলধারা গ্রামে লেখিকা

আমার বয়স তখন দশ বা এগারো। ভূতের গল্প পড়া শুরু করলে শেষ না হলে আর উঠি না। একদিন মাথায় খেয়াল চাপল ভূত দেখতে হবে। কিন্তু কোথায় পাবো ভূত? বইয়ের পাতায় যেমন লেখা থাকে যে, এরা নিঝুম জায়গায় ঘুরে বেড়ায়, সেরকম নিঝুম জায়গা কোথায় ঢাকা শহরে? প্রায়ই নানির কাছ থেকে জ্বীন-ভূতের গল্প শুনতাম। তারা নাকি বাতাসে ভেসে বেড়ায়, ভালো ভূত হলে কিছু করে না, বাসার বা দোকানের মিষ্টি খেয়ে চলে যায় বা আতরের খুশবু ছড়িয়ে যায়। আর দুষ্টু ভূত নাকি আচানক চড় মারে, পথে চলতে থাকা সাইকেল চালককে সাইকেল শুদ্ধ ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় বা কাউকে শূন্যে ঝুলিয়ে রাখে!

আমি ভূত দেখতে চাওয়ার জেদ করলে বলা হতো- এখন শহরে জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ভূতেরা অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে। তবে গভীর রাতে মাঝে মাঝে আসে, এখন আর আগের মতো ভূতেদের দাপট নেই৷ আমার মাথায় তখন ভূত দেখার ভূত চেপেছে। ঠিক করলাম কাউকে না জানিয়ে মাঝরাতে ছাদে যাব। আমাকে একা পেলে ভূত বাবাজিরা নিশ্চয়ই ছেড়ে দেবে না। তাই পরীক্ষামূলকভাবে এক মাঝ রাতে ছাদে গেলাম। ভূত তো দেখতেই পেলামই না, উল্টো বড় বোন জানতে পেয়ে বাবাকে নালিশ করে কানমলা খাওয়ালো এবং ছাদের দরজায় তালা দিয়ে রাখা হলো সর্বক্ষণের জন্য।

কুলধারা গ্রামে বাড়িঘরের ধ্বংসাবশেষ

ছোটবেলায় ভূত দেখার অপূর্ণ সাধ বড়বেলায় পূর্ণ করার সুযোগ পেলে কে হারাতে চায়! ভারতের রাজস্থানে গিয়েছিলাম লম্বা সফরে। জয়সালমের পৌঁছে মনে পড়ল এখানে একটি গ্রাম আছে যেখানে ভূত বাস করে। এমনিতেই রাজস্থান আমার প্রিয় জায়গা এর হস্তশিল্প আর সংস্কৃতির জন্য। এখানকার ভূত-প্রেতও নিশ্চয়ই কাব্যিক ও শিল্পী হবেন, সে বিষয়ে এক বিন্দুও সন্দেহ নেই! জয়সালমেরের অলিগলি, তস্যগলির রূপ মন ভরে দেখে তারপর এক সকালে একটা ট্যাক্সি ঠিক করলাম ভূতের আড্ডা বা গ্রাম ‘কুলধারা’ যাবার জন্য। জয়সালমের থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে এই গ্রাম। এতদিন পরিত্যক্ত ছিল। কয়েক বছর আগে সরকার ভ্রমণার্থীদের জন্য কিছু নিয়মকানুন বেঁধে দিয়েছে।

যাত্রা পথে আমাকে ছোটবেলার সেই উচ্ছ্বাস পেয়ে বসল। নানা প্রশ্ন করে ট্যাক্সিচালক অজয়ের মাথা ধরিয়ে দিলাম। পথের দু’ধারে সোনালী মরুভূমির অপার্থিব সৌন্দর্য দেখায় আমার মন নেই। পাশ দিয়ে উটের সারি চলে যাচ্ছে- এতেও আমার তেমন আগ্রহ নেই। আমি এখন ভূত দেখতে যাচ্ছি। এসব ছোটখাটো ব্যাপারে আকর্ষণ নেই। এমনিতেই মরুভূমির দেশ, তার উপর এখন গ্রীষ্মকাল শুরু হয়েছে। গরমে ভূতেদের অসুবিধা হয় কিনা তাও জিজ্ঞেস করা যেতে পারে দেখা হলে। 

গ্রামে একমাত্র অবিকৃত বাড়ির সামনে লেখিকা

কুলধারা গ্রামের প্রবেশদ্বারের প্রহরী জানিয়ে দিলেন যে সন্ধ্যে ছ'টার মধ্যে ফিরে আসতে হবে, এরকমই নাকি নিয়ম। দ্বাররক্ষীর কথা আমলে আনতে ইচ্ছে করছিল না। গ্রামের লাল মাটি আর সোনালী বালির কাঁচা সড়কের দুই পাশে অজস্র ভেঙে পড়া পলেস্তারাহীন, ছাদহীন কমলা লাল রঙের একতলা বাড়ি হাড়গোড় সমেত উঠোন সামলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাইরে থেকে দেখতে পুরো অঞ্চল সোনালী ঢেউ বলে মনে হচ্ছে। হয়তোবা এর মাঝেই কঙ্কাল বেশে ভুত হেঁটে যেতে পারে। গাড়ি থামিয়ে খসে যাওয়া ইটপাথর আর স্যান্ড স্টোনের বাড়ির অন্দরমহলে শুধু শুনশান নীরবতা আর কাঁটা ঝোপঝাড় ছাড়া কিছুই দেখতে পেলাম না।

আরও খানিকটা এগোলে গাঁয়ের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের ঘরবাড়ি। আমি এসবের কিছুই জানি না, কোনটা কার বাড়ি, ট্যাক্সিচালক অজয় চিনিয়ে দিলো আমায়। বড়লোকের দোতলা বাড়ির অবস্থা তেমন পড়ন্ত নয়। ইট, পলেস্তারা জায়গামতো আছে। তবে কোনো বাড়িতে দরজা-জানালা নেই, সে জায়গাটা ফাঁকা। সরকার আবার হলদে লাল স্যান্ড স্টোনের দেয়ালে সাদা চিত্র এঁকে দিয়েছে। দোতলার বারান্দায় বেশ সুন্দর রাজস্থানি আদলে থাম আর নকশা করা।

বাড়িটির সামনে ১৫ বছরের একটি মেয়ে রাজস্থানি ঘাঘরা চোলি পরে নাচছিল। সামনে বীণ বাদক বাজাচ্ছেন আর মেয়েটি পুরো শরীর চক্রাকারে ঘুরিয়ে নাচছিল। আশেপাশে একটা লোকও নেই, কোনো ট্যুরিস্টও নেই। আমি ক্ষীণ ভীত স্বরে অজয়কে জিজ্ঞেস করলাম- এরা কি ভূত? 
অজয় হেসে বলল, না না, এরা কাছের গ্রামে থাকে। ট্যুরিস্টদের মনোরঞ্জনের জন্য নেচে গেয়ে দু’চার পয়সা আয় করে। 
আমি রেগে গিয়ে বললাম, তাহলে ভূত কোথায়? ভূত দেখাবার নাম করে মানুষ দেখাচ্ছ কেন? এখন আমি একা একা এই গ্রাম ঘুরে বেড়াব। খবরদার পেছন পেছন আসবে না। আমি একা থাকলেই ভূতের দেখা পাব। তুমি একটা অকম্মার ধাড়ি!

অজয় গাইগুই করছিল সঙ্গে আসার জন্য, তাই আবার ধমক দিলাম। 
পালিয়াল ব্রাহ্মণের গ্রাম কুলধারা। রাজস্থানের মরুভূমির ঠিক মাঝখানে এক শূন্য গ্রাম, যেখানে ঘরবাড়ি, পথঘাট, উপাসনালয় সবই আছে শুধু নেই মানুষ। প্রায় দুইশ বছর আগে জনশূন্য হয়ে গিয়েছিল গ্রাম। আর তখন থেকে ভূতুড়ে গ্রাম বলে বেশ নাম করে নিয়েছেন ভারতবর্ষের ইতিহাসের পাতায়।

গ্রামের মাঝ দিয়ে প্রশস্ত রাস্তা

কুলধার বংশদ্ভূত বলে এই গ্রামের নামকরণ হয় কুলধারা। গ্রামে প্রায় পনেরশ লোকের বসবাস ছিল শ’চারেক বাড়িতে- সে দুইশ বছর আগের কথা। মরু অঞ্চল তাই কুলধারায় কুয়া খনন করা হয়েছিল দুটি। পুরুষদের পোশাক ছিল সাদা কুর্তা পায়জামা, মাথায় বিশাল সাদা পাগড়ি আর নারীদের পোশাকের কথা কি আর বলব, লাল, কমলা, গোলাপি রঙের ঘাঘরা চোলির সঙ্গে জমকালো গয়না, হাতভর্তি চুড়ি, গলায় সাত লহরী হার, কোমরে রুপার চওড়া বিছা, পায়ে মল। একেকজন রাজরানী যেন। অবশ্য রাজস্থানের সকল নারীর বেশভূষা আজও এমনই রাজসিক।

গ্রামের বাসিন্দারা পেশায় মূলত ছিলেন বণিক, কৃষিপণ্য বাণিজ্য করতেন তাঁরা। মরুভূমিতে অল্প কিছু কৃষিকাজও করতেন। কিন্তু ১৮২৫ সালে আচানক এই বর্ধিষ্ণু জনপদ এক রাতের মধ্যে শূন্য হয়ে যায়। প্রায় পনেরশ বাসিন্দা হঠাৎ হাওয়ায় মিলিয়ে যান। এরা কোথায় চলে গেছেন তা কেউ জানে না। জায়গাটি দুর্গম বলে এ নিয়ে কেউ তেমন উচ্চবাচ্য করেনি বা আগ্রহ দেখায়নি। প্রচলিত আছে তখন জয়সালমেরের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন সালিম সিং। অত্যাচারী, বদরাগী সালিম সিং জয়সালমেরের আশেপাশের গ্রামের খাজনার হার এত বেশি নির্ধারণ করেছিলেন যে গ্রামবাসীর পক্ষে তা পরিশোধ করা সম্ভব ছিল না। অনেকে এও বলেন যে, আসলে সালিম সিং গ্রামের মোড়লের সুন্দরী অল্পবয়সী কন্যাকে এক রাতের জন্য পেতে চেয়েছিলেন, বিষয়টি রাজস্থানের যে কোনো গ্রামের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক ছিল। চড়া খাজনা ছিল একটা বাহানা। তাই গ্রামবাসী চুপিসারে এক রাতের মধ্যে পূর্বপুরুষের ভিটা, সমস্ত আসবাবপত্র, জন্মস্থানের স্মৃতি ফেলে অনেক দূরে সরে গিয়েছিল; যেখানে সালিম সিং-এর দৌরাত্ম্য নেই।

যাবার আগে অভিশাপ দিয়ে গিয়েছিল যে এখানে কখনোই আর কোনো মানুষ বসবাস করতে পারবে না, এবং এ জনপদ হবে অশরীরীদের আবাসস্থল। হয়েছিলও তাই। গ্রামবাসীর চাপা কান্না, দীর্ঘশ্বাস, বেদনার ফলস্বরূপ এখানে পরে এসব বাড়িঘরে কেউই বসবাস করতে পারেনি। বিভিন্ন ভৌতিক কাণ্ডকারখানার শিকার হয়েছে। তবে ইতিহাসবিদরা বলেন, খরা ও জলের অভাবের কারণে এ এলাকা ধীরে ধীরে জনশূন্য হতে থাকে। আরও একটা কারণ হলো একই সময়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। যে কারণে এই প্রত্যন্ত গ্রামের বেশিরভাগ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর আশেপাশেও তখন কোনো জনবসতি ছিল না, এখনও নেই।

গ্রামের একমাত্র মন্দির

ইতিহাসবিদরা যাই বলুক না কেন আমি এখানে ভূত দেখতে এসেছি। মানুষ পশুপাখি, মাছ কতকিছু পোষে। আমার একটা ভূত পোষার খুব শখ! ছোটখাটো একটা লক্ষ্মীমতো ভূত হলেই চলবে। আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকবে। ভাষাগত তেমন কোনো সমস্যা হবে না, আমি রাজস্থানি ভাষা মোটামুটি জানি। সেই ভূত খুঁজতেই এতদূর আসা। 

গাঁয়ের মেঠোপথের মাঝখান দিয়ে যেতে যেতে ততক্ষণে সূর্য তাতিয়ে উঠেছে। সামনেই গ্রামের একমাত্র মন্দির। মন্দিরের ভেতর ভূত থাকবে কিনা জানি না, অনেক গল্পে পড়েছি মন্দিরে ভূত থাকে না, কিন্তু সে তো স্বাভাবিক জনপদে, আর এ মন্দিরে এখন পুজো দেয়া হয় না, মানুষই নেই! ভূতেরা অবশ্য নিজেদের জন্য উপাসনা করতেও পারে। গ্রামের একমাত্র পাকাপোক্ত ভবন যা দুইশ বছরে একটুও ক্ষয়ে যায়নি। আশেপাশে সবই সোনালী জাদু। ভূতেরাও বোধকরি সোনালী রঙেরই হবে।

পালিওয়ালরা ছিলেন বৈষ্ণব আর মন্দিরটি ছিল বিষ্ণু দেবতার মন্দির। উত্তর ভারতের অন্যান্য মন্দিরের মতোই বহিরাঙ্গ আয়তাকার এবং ভবনের পেছনে চূড়ায় সজ্জিত। রাজস্থানের নিয়ম অনুযায়ী মন্দিরের স্যান্ডস্টোন পাথরের গায়ে বিভিন্ন নকশা খোদাই করা। ভেতরে গা ছমছমে আবহাওয়া। একদম শূন্য মন্দিরে হাওয়া শনশন করছে, মাঝখানে ভগবানের মূর্তি। বাইরে একটাও ভূত নেই, ভেতরেও কোনো অস্বাভাবিক কিছু দেখলাম না। আশা করেছিলাম এই নির্জনে অন্ততপক্ষে কেউ কানের কাছে ফিসফিসিয়ে উঠবে বা হাত ধরে হ্যাঁচকা টান মারবে।

গ্রামজুড়ে এখন শুধু সোনালী আভা

আমাদের বাঙালির যেমন নিজস্ব গেছো ভূত, মামদো ভূত, স্কন্ধকাটা ভূত আছে এদেরও নিশ্চয়ই আলাদা জাতের ভূত আছে। ভূত পুষতে গেলে কি খাওয়াতে হবে তাও জেনে নিতে হবে। মন্দির থেকে আশাহত হয়ে বের হলাম। কারণ বাইরে তো সব খোলামেলা, একটা বাড়িও অক্ষত অবস্থায় নেই যে চুপিচুপি ভূতকে অফার দেয়া যাবে আমার সঙ্গে চলে আসার। মনে মনে ঠিকও করেছি, শুধু তাকেই আমার কাজে খাটাবো না, আমিও তার সব ধরনের টাকা-পয়সার হিসাবনিকাশ করে দেব। দরকার পড়লে সফটওয়্যারের কাজও করে দেব। কাজের মধ্যে এ দুটোই আমার করায়ত্ত। তাতেও দেখি ভূতেদের মন গলে না। বাইরে এখনো বেশ কয়েকটা পোড়োবাড়ি দেখা বাকি রয়েছে৷ সেদিকে পা চালালাম। হয়তোবা এখনই সামনে বিকট আকারের ভূত দেখব বা আমাকেই ছাদের সঙ্গে ঝুলিয়ে হাওয়া হয়ে যাবে, এমনও হতে পারে যে সামনের কাঁটাঝোপের আড়ালে একটা ভূত অপেক্ষায় আছে ভয় দেখাবার জন্য।

আমার সঙ্গে এসব কিছুই হচ্ছে না। হতাশার সুর বাজছে এখন কুলধারার সোনালী মরুধারায় আর আমার মনে। কয়েক বছর আগে ইন্ডিয়ান প্যারানরমাল সোসাইটির একটা দল এসেছিল এ গাঁয়ে রাত্রিযাপন করতে বা ভূতের কার্যকলাপ দেখতে। সারা রাত জেগে তারা মানুষের পায়ের আওয়াজ, ছায়ামূর্তির চলাফেরা, বাচ্চার পায়ের ছাপ, ফিসফাস শব্দ আর নিজেদের গাড়িতে মানুষের হাতের ছাপ দেখতে পেয়েছিল। তবে বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী মানুষ প্যারানরমাল সোসাইটির এ দাবি মেনে নেননি। 

যে যাই দাবি করুক না কেন, আমি ঠিক করেছি এই প্রত্যন্ত মরুর গায়ে ভূত না দেখে শহরে ফিরবো না। ঘুরেফিরে মূল দ্বারে দ্বাররক্ষককে বললাম, আজ রাতে কি এখানকার আতিথ্য গ্রহণ করতে পারি?
জোরে জোরে মাথা নাড়িয়ে তিনি বললেন, কাভি নেহি, বিলকুল নেহি। ছ'টার আগে বের হয়ে যেতে হবে। 
পেছনে দেখি অজয় দৌড়াতে দৌড়াতে আসছে। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, চলুন ফিরে যাই। 
আমি বললাম, আমি রাতে থাকতে চাই এখানে। তুমি একটু প্রহরীকে বলবে? মন্দিরে আমি থাকতে পারব। ভুত দেখায় সুবিধে হবে। 
অজয় প্রহরীর চেয়েও প্রবল বেগে মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, না না। এখানে থাকা যাবে না। তার উপর আপনি একা। ভয়ানক জায়গা এটা। 
আমি রেগে গিয়ে বললাম, তুমি ভূত দেখেছ? 
না। 
তাহলে ভয়ানক বলছ কেন? যেভাবেই হোক অনুমতি নিয়ে হলেও আমি থাকব। 

গ্রামে একমাত্র অবিকৃত বাড়ি

এদিকে হৈ-হট্টগোলে নাকি প্রহরীর ডাকে একজন দায়িত্বরত সরকারি অফিসার পুলিশ নিয়ে চলে এসেছেন। তারা বুঝিয়ে সুঝিয়ে আমাকে ফিরে যাবার জন্য রাজি করালেন। অজয় বোধহয় ভূতের ভয়ে মরেই যাচ্ছিল বা ভেবেই বসেছিল আমি নিজেই ভূত। আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। 

আমি সোনালী মরুভূমির ঝলমলে রূপ দেখি, দেখি পালিয়াল মেয়ে কুয়োর দিকে যাচ্ছে মাথায় মাটির কলসি নিয়ে লাল ঘাঘরা চোলি আর গা ভর্তি রুপার গয়না পরে ফুটে ওঠা ফুলের মতো দুলে দুলে। পথে দেখা হলো মেষপালকের সঙ্গে; দুজনের ভাবের শেষ নেই। যেখানে নেই কোনো সালিম সিং, নেই গ্রামবাসীর খাজনা পরিশোধের ভয় বা নিজ ভিটা ছেড়ে যাবার হাহাকার। বাচ্চারা লুটোপুটি করে খেলছে অবারিত মরুভূমির সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য হয়ে। বণিক কর্তা দাওয়ায় বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছেন রুটি আর গাট্টে কি সবজি! গিন্নি এক হাত ঘোমটা দিয়ে এগিয়ে দিচ্ছেন ছাছ-এর গ্লাস। 

এরকমই তো ছিল কুলধারা। 

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়