ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কায়াকিং: আপনিও ভেসে বেড়াতে পারেন পানির বুকে 

খায়রুল বাশার আশিক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৩, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৩:৫২, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
কায়াকিং: আপনিও ভেসে বেড়াতে পারেন পানির বুকে 

এ দেশ নদীমাতৃক হলেও আমাদের অনেকেরই নদীর কাছাকাছি থাকার সুযোগ হয় না। বছরান্তে শহর ছেড়ে দাদা-নানার বাড়ি গিয়ে নদীর দেখা পেলেও নৌকায় ওঠা বা নৌকা চালানো হয় না। দেখে নৌকা চালানো যত সহজ মনে হয় আসলে কাজটি সহজ নয়। দক্ষ মাঝি হতে হলে শুরুতে অনুশীলনের প্রয়োজন রয়েছে। আপনি চাইলে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ পরিবেশে আনন্দের সঙ্গেই কাজটি শিখতে পারেন।

একটু ভাবুন তো, আপনি মাঝি হয়ে নৌকা বাইছেন প্রিয়জনদের নিয়ে- ব্যাপারটা গ্রামের মানুষের জন্য ডালভাত হলেও শহরের মানুষের জন্য যথেষ্ট বিস্ময়ের। কায়াকিং আপনার এমন স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। বিদেশে জন্ম নেওয়া এই নৌকা ভ্রমণের সংস্কৃতি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে আমাদের দেশেও।

‘কায়াক’ শব্দটি এ দেশে এখনও ততটা প্রচলিত নয়। তবে ‘কায়াক’ দেখতে ছোট্ট ডিঙি নৌকার মতো। ফাইবার, কাঠ ও পাটের তন্তু দিয়ে তৈরি লম্বা সরু এই নৌকাকে কায়াক বলা হয়। সাধারণত ১০ থেকে ১৮ ফুট লম্বা হয় প্রতিটি নৌকা। চওড়ায় সাধারণত ২১ ইঞ্চি (৫৩ সে.মি.) থেকে ৩৬ ইঞ্চি (৯১ সে.মি.)। তবে এ ধরনের সরু নৌকার নির্মাণ কৌশল একটু ভিন্ন। বিদেশে কায়াক বানাতে মোল্ডেড পলিথিন, থারমোফরম প্লাস্টিক, ফাইবার গ্লাস কম্পোজিট ইত্যাদি উপাদান ব্যবহার করা হয়। এ দেশের কায়াকে মূলত ব্যবহার হয় ফাইবার, পাট ও কাঠ। কায়াক চালাতে হয় বৈঠা দিয়ে। আর কায়াক নামক নৌকায় মনের আনন্দে ভেসে বেড়ানোর রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার নাম কায়াকিং। বিদেশে সমুদ্র, নদীতে কায়াকিং প্রতিযোগিতাও হয়। এগুলো আমাদের নৌকা বাইচের মতোই। 

কায়াক তৈরি ও ব্যবহারের প্রথম প্রচলন শুরু হয় কানাডার আলাস্কাতে। সেখানকার জেলেরা মাছ ধরতে এই নৌকা ব্যবহার করত। তখন ওই নৌকাগুলোকে বলা হতো আইকায়াক। এগুলো তৈরিতে হালকা কাঠের তক্তা এবং সীল মাছের চামড়া ব্যবহার হতো।

প্রত্নতত্ত্ববিদরা চার হাজার বছর আগে সী-কায়াক ব্যবহারের প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন। কাঠের তক্তার সঙ্গে চামড়া দ্বারা তৈরি ছিল সেসব কায়াক। ১৯৫০ সাল পর্যন্ত এ ধরনের কায়াক পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যেত। তবে ফাইবারগ্লাস বোট আবিষ্কৃত হওয়ার পর কায়াক নির্মাণে শুরু হয় আধুনিকতা। কায়াক তৈরিতে রোটোমোল্ডেট প্লাস্টিকের ব্যবহার প্রথম শুরু হয় ১৯৮৪ সালে। এরপর তা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।  

বাংলাদেশে কায়াকিং-এ খরচ

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কায়াকিং পয়েন্ট। এর মধ্যে ঢাকার ‘ইয়াস কায়াকিং পয়েন্ট, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মেঘনার বুকে কায়াকিং, কাপ্তাই হ্রদে কায়াকিং, মহামায়া লেকে কায়াকিং, কর্ণফুলীতে কায়াকিং, ভোলা কায়াকিং পয়েন্টে কায়াকিং করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের সব কায়াকিং বেসরকারি ব্যক্তি উদ্যোগে বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত। সাধারণত ঘণ্টা হিসেবে বা দিনব্যাপী ভাড়া নিয়ে কায়াক চালানো যায়। একেকটি কায়াক পয়েন্টের খরচ একেক রকম। তবে স্থান ভেদে প্রতি ঘণ্টায় গুণতে হতে পারে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা। আর সকাল থেকে সন্ধ্যা (৮-১০ ঘণ্টা) অবধি ভাড়া নিলে লাগবে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা।  

যেভাবে কায়াকিং করবেন

কায়াক চালানোর কৌশল একবার রপ্ত করতে পারলে আর বেগ পেতে হয় না। কেবল নৌকা ডানে ও বামে ঘোরানোর কৌশল রপ্ত করলেই আনন্দে ঘুরতে পারবেন পানির বুকে। এ দেশে ব্যবহৃত কায়াকে সাধারণত দুই থেকে তিনজনের আসন থাকে। যে কজন চালকই থাকুন না কেন, একই দিকে মুখ করে বসুন। একই তালে বৈঠা চালানোর চেষ্টা করুন। কায়াকের দুই পাশের পানিতে সমান তালে বৈঠা চালান। পানির অনেক গভীরে বৈঠা ডোবাতে হবে না। বরং পানির উপরিভাগে বৈঠা চালালেই কায়াক এগিয়ে যাবে। এতে চালানো সহজ ও আনন্দদায়ক হবে। 

সতর্কতা

১. কায়াকিং করতে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে রাখতে হবে  
২. নদী বা সমুদ্রে কায়াকিং-এর সময় বাতাসের গতি, জোয়ার-ভাটা, ঢেউ, আশপাশের জলযান নজরে রাখুন 
৩. বৈরী আবহাওয়ায় কায়াকিং থেকে বিরত থাকুন
৪. কায়াকিং-এ যতটা সম্ভব সতকর্তার সঙ্গে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহার বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই এ সময় সেলফি তোলা, লাইভ করা, কিংবা ফোনে কথা বলা থেকে নিজেকে সংযত রাখুন। 
৫. কায়াক বোটে বসে খেয়ে প্যাকেট, ময়লা, প্লাস্টিক, কাগজ, পানির বোতল ইত্যাদি পানিতে ফেলে পরিবেশ ও পানি দূষণ করবেন না।

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়