ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ভ্রমণ হোক শ্রীফলতলী-বলিয়াদী জমিদার বাড়িতে 

রেজাউল করিম, গাজীপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১২, ১১ জুলাই ২০২২  
ভ্রমণ হোক শ্রীফলতলী-বলিয়াদী জমিদার বাড়িতে 

ঈদের ছুটিতে ঘোরাঘুরি অপেক্ষায় থাকেন ভ্রমণপ্রিয় মানুষেরা। এবারের ঈদে ঘোরাঘুরি অংশে রাখতে পারেন প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী ও শৈল্পিক কারুকাজে ভরপুর গাজীপুর কালিয়াকৈর উপজেলার শ্রীফলতলী-বলিয়াদি জমিদার বাড়ি, যা আজও কালের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ভরপুর।

ঐতিহ্যবাহী বলিয়াদী জমিদার বাড়ি

কালিয়াকৈরের ঐতিহ্যবাহী বলিয়াদী জমিদার বাড়ি কালের নীরব সাক্ষী হয়ে স্মৃতির মিনারের মত ইতিহাস ঐতিহ্য ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে। দক্ষিণে পরগনা তালেবাবাদ কালিয়াকৈর বলিয়াদী এস্টেট অবস্থিত। জানা যায়, ১৬১২ সালে সম্রাট জাহাঙ্গীর এই এস্টেট প্রতিষ্ঠা করেন।

অপূর্ব নির্মাণশৈলীর এই জমিদার বাড়ির মূল পাঁচিলঘেরা অংশে মাঝখানে ত্রিতল মূল কাঠামো। মূল বাড়ির ছাদে রয়েছে সফেদ গুম্বজ, যার চারিদিকে প্রতিটির ভেতরে মাথায় রয়েছে ছোট ছোট মিনার আকৃতির নকশা। সামনে সবুজ ঘাসের লনে বসে আপনি অনায়াসে কাটিয়ে দিতে পারবেন একটি আনন্দঘন বিকেল। 

বলিয়াদি জমিদার বাড়ির ইতিহাস

প্রায় ১৫২টি মৌজায় ৩২৭৮ জন মানুষ নিয়ে পত্তন হয় বলিয়াদী জমিদার। এই বলিয়াদী এস্টেটের প্রশাসক ছিলেন খলিফা আবু বকর সিদ্দিকীর বংশধর। চতুর্থ পুরুষ কাশেম সিদ্দিকী থেকে পঞ্চদশ পুরুষ শাহাব উদ্দিন সিদ্দিকী পর্যন্ত এই পরিবার তুরস্কে বসবাস করতেন। ষোড়শ-সপ্তদশ পুরুষ যথাক্রমে নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকী ও জহির উদ্দিন সিদ্দিকী উত্তর ভারতে বসতি স্থাপন করেন। অষ্টাদশ পুরুষ শাহ কুতুব উদ্দিন সিদ্দিকী যিনি ইতিহাসে নবাব কুতুব উদ্দিন খান কোকালতাস বা কুকু ওরফে শেখ কোবান নামে পরিচিত। যিনি মুঘল সম্রাট মহামতি আকবরের পালিত পুত্র এবং দিল্লী রাজদরবারে উচ্চপদস্থ কর্মচারী। ইতিহাসখ্যাত সুবাদার ইসলাম খানের অব্যবহিত পূর্বে সম্রাট জাহাঙ্গীর কর্তৃক তিনি বাংলার সুবাদার নিযুক্ত হন।

১৬০৭ খৃস্টাব্দে তিনি বর্ধমানে শেখ আফগান কর্তৃক নিহত হন। তার পুত্র উনবিংশ তিন পুরুষ সাদ উদ্দিন সিদ্দিকী জাহাঙ্গীর নগর (ঢাকার) সুবাদার ইসলাম খানের নির্দেশে সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক সুজাত খানের সাথে বিদ্রোহী আফগান ওসমান খানের দমনের উদ্দেশে যান। সাদ উদ্দিন সিদ্দিকী উক্ত অভিযানে অসামান্য কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। পুরস্কারস্বরূপ সম্রাট জাহাঙ্গীর তাকে চন্দ্র প্রতাপ, আমিনাবাদ এবং তালেবাবাদ এই তিন পরগনার জায়গীর দারী প্রদান করেন (১৬১২ খৃস্টাব্দে)। 

শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ি

শতবর্ষের ঐতিহ্যে ভরা কালিয়াকৈর উপজেলায় অবস্থিত শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ি। এটি কালিয়াকৈরের ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। বেশিরভাগ জমিদার বাড়ির মতোই এখানেও বলা হয় জমিদারির দুই তরফ। ছোট আর বড় তরফ। বড় তরফের এই বাড়িতে কাঠামোগত কিছু সামান্য সংস্কার চোখে পড়ে। তবে ছোট তরফে অযত্নের প্রমাণ স্পষ্ট। এখনও সেখানে উত্তর পুরুষ আপেল সাহেব পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। পাশাপাশি নাটক ও সিনেমার শুটিংয়ের কাজের জন্য ব্যবহার করা হয় এই জমিদার বাড়িটি।
 
ইতিহাস থেকে জানা যায়, বিখ্যাত তালিবাবাদ পরগণার নয় আনা অংশের মালিকানা নিয়ে গঠিত হয় শ্রীফলতলী জমিদার এস্টেট। এই এস্টেটের প্রধান কর্ণধার খোদা নেওয়াজ খানের কনিষ্ঠ পুত্র রহিম নেওয়াজ খান চৌধুরী’র হাত ধরে এই শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন ঘটে। নান্দনিক কারুকাজ ও সবুজে ঘেরা এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে পরিবার নিয়ে চলে আসতে পারেন শ্রীফলতলী জমিদার বাড়িতে। 

যাওয়ার উপায়

ঢাকা অথবা গাবতলি থেকে উত্তরবঙ্গের যেকোনও পরিবহনে উঠে কালিয়াকৈরের চন্দ্রা মোরে নামবেন। চন্দ্রা হতে সিএনজি বা অটোতে ৫-৭ মিনিটেই চলে যাবেন শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ি। সেখানে ঘোরাঘুরি শেষে সিএনজি যোগে ঘুরে আসবেন মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বলিয়াদি জমিদার বাড়ি।

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়