আফগানিস্তানকে নিয়ে ফাইনালে গেল বাংলাদেশ
ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
চট্টগ্রাম থেকে ইয়াসিন হাসান: জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাঠে নামলে শারীরিক ভাষার আমূল পরিবর্তন হয়ে যায় বাংলাদেশের। মনস্তাত্বিক লড়াইয়ে যেন আগেই জিতে যায় দল!
বিশ্বাস না হলে দলের ড্রেসিংরুমের খবরটা নিয়ে দেখুন! পুরো দলটা তখন একটা সুখী পরিবার। বুক ভরা আত্মবিশ্বাস, লড়াইয়ের মানসিকতার সঙ্গে ভিন্ন আবহ সাজঘরে। ড্রেসিংরুমের ভেতরের চিত্র বোঝা যায় মাঠের লড়াইয়ে। অধিনায়ক সাকিবকে দেখা যায় চনমনে। মাহমুদউল্লাহর আগ্রাসন ফুটে উঠে ২২ গজে। আফিফ, লিটন, মোসাদ্দেকদের দৌড়ঝাপ যেন পুরো দলের নিউক্লিয়াস। আর সুখী পরিবারের নতুন সদস্য আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে ঘিরে যেন আনন্দের বন্যা।
অবশ্য এতোটা খোশমেজাজে থাকার কারণও আছে। সীমিত পরিসরে দীর্ঘ সময় ধরেই জিম্বাবুয়ের কাছে বাংলাদেশ অপরাজিত। ২০১৬ সালের পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রঙিণ পোশাকে হারেনি বাংলাদেশ। বাংলাদেশ হারল না এবারও। ত্রিদেশীয় সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে বাংলাদেশ জিম্বাবুয়েকে হারাল হেসেখেলে, ৩৯ রানে। সাগর পাড়ের স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের আমন্ত্রণে ব্যাটিংয়ে নেমে সাত উইকেটে ১৭৫ রান তোলে বাংলাদেশ। সফকারীদের বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চ রানের পুঁজি বড় ব্যবধান গড়ে দেয়। ১৩৬ রানে শেষ তাদের লড়াই।
এ জয়ে আফগানিস্তানকে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে গেল বাংলাদেশ। টানা তিন ম্যাচ হেরে জিম্বাবুয়ে বাদ এক ম্যাচ আগেই। আফগানিস্তান দুই ম্যাচের দুটিতেই জিতেছে। বাংলাদেশের তিন ম্যাচে জয় দুটিতে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ হারের পর পাঁচ পরিবর্তন স্কোয়াডে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ একাদশ সাজাল তিন পরিবর্তন নিয়ে। সৌম্যর জায়গায় শান্ত। সাব্বিরকে বসিয়ে নেওয়া হলো বাড়তি বোলার শফিউল। আর তাইজুলের জায়গায় আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। টেস্ট ও ওয়ানডের অভিষেকের মতো শান্ত টি-টোয়েন্টি অভিষেক রাঙাতে ব্যর্থ। ১১ রানে আউট হয়ে ফেরেন সাজঘরে। তিন বছর পর টি-টোয়েন্টি দলে ফেরা শফিউল তিন উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়েকে গুড়িয়ে দিতে বড় ভূমিকা রেখেছেন। অভিষিক লেগ স্পিনার নিয়েই এখন সব আলোচনা। নিজের প্রথম ওভারেই আমিনুল নেন উইকেট। এক ওভার পর জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজার উইকেট। অভিষেকে তার বোলিং স্পেল ৪-০-১৮-২। বোলিংয়ে আহামরি টার্ণ নেই। নেই বৈচিত্র্য। তবে বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ দারুণ। কুইক আর্ম অ্যাকশনে এ লেগ স্পিনার নিজের প্রথম ম্যাচে মন জয় করেছেন সবার।
তবে ২২ গজে আজ সবথেকে আলো ছড়িয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়ারের চতুর্থ টি-টোয়েন্টি হাফ সেঞ্চুরির ওপর ভর করে বাংলাদেশ লড়াইয়ের পুঁজি পায়। মাত্র এক চার ও পাঁচ ছক্কায় ৪১ বলে করেন ৬২ রান। তার হাতেই উঠেছে ম্যাচসেরার পুরস্কার। ব্যাটিংয়ে শুরুটা এনে দিয়েছিলেন লিটন। ২২ বলে চার চার ও দুই ছক্কায় ৩৮ রান করেন। অবশ্য নিজের উইকেট উপহার দেন অতিথিদের। এমপোফুর বল চাইলেই মাঠের যে কোনো প্রান্তে পাঠাতে পারতেন। সেখানে টাইমিংয়ের গড়বড়ে বল তোলেন আকাশে। মাহমুদউল্লাহর ইনিংস বড় করতে ভূমিকা রেখেছেন মুশফিকুর রহিম। ২৬ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় তার ব্যাট থেকে আসে ৩২ রান। দুজনের ৫৫ বলে ৭৮ রানের জুটিতে বাংলাদেশ বড় সংগ্রহের ভিত পায়।
বোলিংয়ে শুরুতেই সাইফউদ্দিন-সাকিব জুটির ভালো শুরু। সাইফউদ্দিন প্রথম ওভারে ব্রেন্ডন টেলরকে, সাকিব দ্বিতীয় ওভারে চাকাবাকে সাজঘরে পাঠান। চতুর্থ ওভালে শফিউল প্রথম বলে নেন শন উইলিয়ামসের উইকেট। ছয় ওভারে ৩৪ রান তুলতেই তাদের নেই তিন উইকেট। চাপে থাকা ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে আক্রমণে আসেন আমিনুল। আপ টু মার্ক বোলিংয়ে নিজের কারিশমা দেখান। শফিউল আর মুস্তাফিজ জিম্বাবুয়ের শেষটা গুড়িয়ে দেন।
তবে সব ভালোর দিনে সাকিব, লিটনের উইকেট ছুঁড়ে আসা যেন কষ্ট বাড়িয়েছে ক্রিকেটপ্রেমিদের। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে পা রাখা বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষা কঠিন চ্যালেঞ্জের। নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব টিকিয়ে রাখতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় পেতেই হবে। ঢাকার ফাইনালের আগে চট্টগ্রামেই হবে ফাইনালের ড্রেস রির্হাসাল। সাকিবদের চোখ এখন ওদিকেই।
চট্টগ্রাম/ইয়াসিন/নাসিম
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন