ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

সুচিত্রা সেন : অধরা নারীর প্রতীক || বাবলু ভট্টাচার্য

বাবলু ভট্টাচার্য || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪১, ১০ জুলাই ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সুচিত্রা সেন : অধরা নারীর প্রতীক || বাবলু ভট্টাচার্য

সুচিত্রা সেন, ভিন্ন ক্যামেরায়, ভিন্ন বয়সে

তাকে কখনও মনে হয়নি পাশের বাড়ির সহজ সাধারণ মেয়েটি— বরং সর্বদাই তিনি ছিলেন অধরা নারীর প্রতীক। তিনি মারা গেছেন মাত্র এক বছর আগে। কিন্তু অন্তরালে তিনি ছিলেন বহুবছর। তাকে কখনও বৃদ্ধা বা প্রবীণার রূপে দেখেনি কেউ। তিনি যেন যৌবনের চিরন্তন প্রতিমা। তার নাম উচ্চারিত হলেই চোখে ভাসে মোহিনী হাসি, সজল দৃষ্টি ও রহস্যময় ভঙ্গিমা। তার চেয়েও প্রতিভাবান অভিনেত্রী বাংলা চলচ্চিত্রে ছিলেন কিন্তু পর্দায় তার চেয়ে রহস্যময়ী ও রোমান্টিক আর কেউ ছিলেন না।
 
সুচিত্রা সেন যখন পর্দায় তার ভুবনমোহিনী হাসি দিয়ে দর্শককে মোহিত করতেন তখন দর্শকের মনে হত এই নারী যেন ধুলো-মাটির জগতের নয়। এ যেন ধরাছোঁয়ার বাইরের জগৎ থেকে আসা এক অধরা স্বপ্ন। তিনি যে চরিত্রগুলোতে অভিনয়ের জন্য খ্যাতি পেয়েছেন সেগুলোও যেন গড়পরতা চরিত্র থেকে একটু আলাদা। হয়তো কিছুটা অবাস্তবও। যেমন ‘সাগরিকা’ সিনেমার তরুণী সাগরিকা। পঞ্চাশের দশকে এক ধনী নারী, তদুপরি মেডিকেল কলেজের ছাত্রী, বিশাল এক বাড়িতে একাই থাকেন। তিনি প্রখর ব্যক্তিত্বময়ী। সেইসঙ্গে আবার প্রেমের জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করতে প্রস্তুত।
 
‘হারানো সুর’ সিনেমার ড. রমা। যিনি স্মৃতি হারানো রোগী উত্তম কুমারকে কলকাতা থেকে নিয়ে যান প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকা পলাশপুরে। সেখানে চিকিৎসার জন্য তাকে বিয়ে করেন। আবার তার পূর্ব স্মৃতি ফিরিয়ে আনার জন্য কলকাতায় উত্তমের বাড়িতে সামান্য গভর্নেস সেজে থাকেন। ‘সপ্তপদী’র অ্যাংলো ইন্ডিয়ান মেয়ে রিনা ব্রাউন যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আসামে মেডিকেল কোরের নার্স। কিংবা `বিপাশা` চলচ্চিত্রের পাঞ্জাবি ও বাঙালি বাবামায়ের সন্তান বিপাশা— যে একা থাকে এবং প্রেমিককে খুঁজে বের করতে ভারতবর্ষের বিভিন্ন এলাকা একাই চষে বেড়ায়। অথবা ব্রাহ্মণকন্যা ‘ইদ্রাণী’— যে সমাজের কোনো অনুশাসনই প্রায় মানে না।
 
এই চরিত্রগুলো পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের বাঙালি সমাজের সামাজিক বাস্তবতায় যতই অবাস্তব বা অসম্ভব মনে হোক না কেন সুচিত্রা সেন যখন সেই চরিত্রে পর্দায় আবির্ভূত হয়েছেন তখন দর্শকদের তাকে মেনে নিতে কোনো দ্বিধা জাগেনি। কারণ সুচিত্রা সেন মানেই তো গতানুগতিক জীবনের বাইরে কোনো রহস্যময়ী অধরা নারী। তিনি মায়াবন বিহারিণী ও স্বপনচারিণী।
 


সাহিত্যভিত্তিক চলচ্চিত্রেও দারুণ খ্যাতি পেয়েছেন তিনি। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’, ‘চন্দ্রনাথ’, ‘কমললতা’, ‘দেবদাস’, ‘দত্তা’, ‘পথের দাবী’সহ বিভিন্ন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। রাজলক্ষ্মী চরিত্রে তাকে ছাড়া যেন কাউকে ভাবাই যায় না, তেমনি ভাবা যায় না বিজয়া চরিত্রে অন্য কাউকে।
 
১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনা জেলায় তার জন্ম। পারিবারিক নাম ‘রমা’। বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন স্থানীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক। মায়ের নাম ইন্দিরা দেবী। পাবনাতেই তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। ১৯৫২ সালে তিনি কলকাতার চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রবেশ করেন। ‘শেষ কোথায়’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে রূপালি পর্দায় তার যাত্রা শুরু হলেও ছবিটি মুক্তি পায়নি। ১৯৫৩ সালে উত্তম কুমারের বিপরীতে অভিনীত ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি। ছবিটি ব্যবসা সফল হয়। তবে সেটি ছিল কমেডিনির্ভর ছবি এবং এর মূল আকর্ষণ ছিলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৫৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘অগ্নিপরীক্ষা’ ছবি তার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট।  এ ছবিতেই উত্তম-সুচিত্রা বাংলা সিনেমার  ক্ল্যাসিক রোমান্টিক জুটিতে পরিণত হন। আশাপূর্ণা দেবীর উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি এ ছবিতেও সুচিত্রার চরিত্রটি ছিল গড়পড়তা বাঙালি নারীর চেয়ে ভিন্নতর। অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একের পর এক হিট সিনেমায় অভিনয় করে দর্শকদের মহানায়িকায় পরিণত হন সুচিত্রা সেন। হারানো সুর’, ‘শাপমোচন’, ‘বিপাশা’, ‘ইন্দ্রাণী’, ‘শিল্পী’, ‘সাগরিকা’, ‘পথে হলো দেরী’, ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’, ‘কমললতা’, ‘গৃহদাহ’, ‘প্রিয় বান্ধবী’, ‘দত্তা’, ‘পথের দাবী’, ‘সবার উপরে’, ‘সপ্তপদী’, ‘দীপ জ্বেলে যাই’, ‘উত্তর ফাল্গুনী’, ‘সাতপাকে বাঁধা’-সহ অসংখ্য ব্যবসাসফল ও শিল্পসম্মত ছবিতে অভিনয় করে বাংলা ছবির প্রধান নায়িকায় পরিণত হন তিনি।
 
সিনেমায় তার ব্যক্তিত্ব এবং সৌন্দর্য দুটিই দর্শককে মোহাবিষ্ট করে রাখে। তিনি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অশোক কুমার, বসন্ত চৌধুরী, দীলিপ কুমারসহ অনেক বিখ্যাত নায়কের বিপরীতে অভিনয় করেছেন। কিন্তু উত্তম কুমারের বিপরীতে তার জুটি সবচেয়ে বেশি দর্শকনন্দিত হয় এবং উত্তম-সুচিত্রা জুটি চিরকালের সেরা রোমান্টিক জুটিতে পরিণত হয়।
 
তবে সুচিত্রা সেন নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন উত্তম ছাড়া। তিনি দেখতে চেয়েছিলেন উত্তম কুমার ছাড়া তিনি সাফল্য পান কি না। পঞ্চাশের দশকে যে সিনেমাগুলোতে অভিনয় করেছিলেন তিনি, তার অধিকাংশেরই নায়ক উত্তম কুমার। উত্তম ছাড়া তার অভিনীত অন্য সিনেমা তখনও তেমন সাফল্য পায়নি। অবশ্য হিন্দি ভাষায় নির্মিত ‘দেবদাস’-এ তিনি দীলিপ কুমারের বিপরীতে পার্বতী চরিত্রে অভিনয় করে সাফল্য পেয়েছিলেন। হিন্দিভাষী দর্শক বাঙালি পারুকে সাদরে গ্রহণ করেছিল। কিন্তু সে সিনেমায় চন্দ্রমুখীরূপী বৈজয়ন্তী মালাও তো ছিলেন।

বাংলায় উত্তম ছাড়া কি তার সাফল্য নেই তাহলে? তিনি বিশ্বাস করতেন দর্শক তাকে উত্তম ছাড়াও গ্রহণ করবে। এ কথা প্রমাণ করতেই যেন ১৯৫৯ সালে তিনি অভিনয় করলেন ‘দীপ জ্বেলে যাই’ সিনেমায়। এখানে তিনি হাসপাতালের নার্স রাধা। মেন্টাল ওয়ার্ডের নার্স তিনি। পুরো কাহিনিই মূলত নায়িকাকেন্দ্রিক। নায়ক দেবাশীষ (বসন্ত চৌধুরী) কে সুস্থ করে তোলার জন্য রাধার অভিনয়, তার ভালোবাসা এবং শেষ পর্যায়ে নিজেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া— এসব কিছু বাস্তব করে তোলার জন্য বাংলায় তখন সুচিত্রা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো অভিনেত্রী ছিলেন না।
এরপর ১৯৬৩  সালে ‘সাত পাকে বাঁধা’। এর মধ্যে অবশ্য তিনি উত্তম কুমারের বিপরীতে অভিনয় করেছেন ‘চাওয়া পাওয়া’, ‘বিপাশা’, ‘সপ্তপদী’তে। তিনটিই হিট সিনেমা।
 


তবে ‘সাতপাকে বাঁধা’র অর্চনা চরিত্রে তিনি অনন্য সাধারণ অভিনয় করেন। অর্চনা ধনী পরিবার থেকে আসা এমন এক মেয়ে, যে দরিদ্র প্রেমিক-স্বামীকে যেমন ভালোবাসে তেমনি উপেক্ষা করতে পারে না নিজের বাবা-মাকেও। প্রেম ও পরিবারের দ্বন্দ্বে বিপর্যস্ত অর্চনাকে পর্দায় সার্থক করে তুলেছিলেন সুচিত্রা। ‘সাতপাকে বাঁধা’ চলচ্চিত্রের জন্য ১৯৬৩ সালে মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর সম্মাননা অর্জন করেন তিনি। ভারতীয় অভিনেত্রীর মধ্যে তিনিই প্রথম এ সম্মান পান। সে বছরটিই যেন ছিল তার সাফল্যের বছর। সে বছরই মুক্তি পায় তার অভিনীত ‘উত্তর ফাল্গুনী’। এ সিনেমায় যেন নিজেকেই ছাড়িয়ে যান তিনি। এখানে তিনি ছিলেন একাধিক চরিত্রে। তার অভিনয় ছিল অনন্য। দেবযানী, পান্না বাই ও সুপর্ণা। তিনটি চরিত্র, তিন নারীর জীবন। সুচিত্রা প্রমাণ করলেন তিনি শুধু সুন্দরী ও সুঅভিনেত্রীই নন, তিনি মহানায়িকা। তিনি ১৯৬৬ সালে হিন্দি চলচ্চিত্র ‘মমতা’র জন্য সেরা অভিনেত্রীর ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার পান। ‘মমতা’ গল্পটি বাংলা ‘উত্তর ফাল্গুনী’রই হিন্দি রিমেইক।
 
১৯৭২ সালে সুচিত্রা সেন ‘পদ্মশ্রী’ খেতাবে ভূষিত হন। ১৯৭৪ সালে তার অভিনীত হিন্দি ছবি ‘আঁধি’ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার আসরে সেরা অভিনেত্রীর মনোনয়ন পান। আর তার বিপরীতে অভিনয়ের জন্য সঞ্জীব কুমার সেরা অভিনেতার পুরস্কার জয় করেন। ‘আঁধি’তে তিনি ছিলেন আরতি দেবী নামে এক রাজনৈতিক নেত্রীর ভূমিকায়— যিনি একই সঙ্গে ব্যক্তিত্বময়ী, দৃঢ়, কঠোর আবার প্রেমময়ী ও কোমল। বলা হয়ে থাকে ইন্দিরা গান্ধীর ছায়া অবলম্বনে আরতি দেবীকে নির্মাণ করা হয়েছিল। সুচিত্রা ছাড়া আরতি দেবীর চরিত্রটি ভারতের অন্য কোনো অভিনেত্রী এত সফলভাবে রূপায়িত করতে পারতেন কিনা সন্দেহ।
 
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে ‘দত্তা’, অশোক কুমারের বিপরীতে ‘হসপিটাল’ তার বিখ্যাত সিনেমা। সত্যজিৎ রায় তাকে দেবী চৌধুরাণী হিসেবে কাস্ট করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সুচিত্রার সঙ্গে শিডিউল মেলেনি। দেবী চৌধুরাণী তাই নির্মাণ করেননি সত্যজিৎ রায়। পরবর্তীতে অবশ্য অন্য পরিচালক দেবী চৌধুরাণী নির্মাণ করেন এবং তাতে সুচিত্রাই প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। তিনি অনেক নায়কের বিপরীতেই অভিনয় করেছেন, খ্যাতি পেয়েছেন। কিন্তু উত্তম কুমারের বিপরীতেই তিনি ছিলেন সবচেয়ে সার্থক। আজও তাই বাংলা চলচ্চিত্রের সেরা রোমান্টিক জুটি বলতে উত্তম-সুচিত্রাকেই বোঝায়।
 
সুচিত্রা সেনের ব্যক্তি জীবন নিয়ে দর্শকের কৌতূহল ছিল অপার। কিন্তু খ্যাতির শীর্ষে অবস্থান করার সময়ও সুচিত্রা সেন ব্যক্তি জীবনকে সযত্নে লুকিয়ে রাখতেন লোকচক্ষু থেকে। মিডিয়ায় তিনি কখনও সরব ছিলেন না। তাকে ঘিরে কোনো স্ক্যান্ডাল যেন না থাকে সে বিষয়েও তিনি ছিলেন সচেষ্ট। শুটিং শেষ করেই ‘মিসেস সেন’ যেন চলে যেতেন নিজের রহস্যময় জগতে। আট ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন মেজো। ডাক নাম ছিল কৃষ্ণা। ছোটো বেলায় লেখাপড়ার হাতেখড়ি পাবনাতেই। পাটনায় মামার বাড়িতেও কিছুদিন থেকেছেন। সেখানেই এক নাগা সন্ন্যাসী তিন বছরের ছোট্ট রমাকে দেখে বলেছিল, মেয়েটি সুলক্ষ্মণা। বড় হলে ওর নামডাক হবে। কথাটা শেষ পর্যন্ত সত্যি হয়েছিল।

বাবা ছিলেন স্থানীয় একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক, নাম করণাময় দাশগুপ্ত। বাবার বড় আদরের ছিলেন তিনি। দেশভাগের সময় তারা চলে গিয়েছিলেন ওপারে। তবে বাবা করুণাময় অবসরের পরই পাবনা ছেড়ে উঠেছিলেন শান্তিনিকেতনের পাশে ভুবনডাঙ্গায়। অসামান্য সুন্দরী হওয়ায় মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১৯৪৭ সালে কলকাতার বিশিষ্ট শিল্পপতি প্রিয়নাথ সেনের ছেলে দিবানাথ সেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। দিবানাথের পিতামহ দীননাথ সেন ঢাকার বাসিন্দা ছিলেন। তার নামে পুরনো ঢাকায় এখনও একটি সড়ক রয়েছে। কিন্তু সেই বিয়ে বেশিদিন টেকেনি। নিত্য নতুন অশান্তির কালো মেঘ সরাতে অবশ্য সময় নিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ১৯৬৩ সালে ‘সাত পাকে বাধা’ ছবি যখন করছেন তখনই ডিভোর্স হয়ে যায়। এই ছবিটি ছিল তার জীবনের সেই সময়েরই প্রতিচ্ছবি। ছবিতে একটি দৃশ্যে সুচিত্রা রাগে সৌমিত্রের জামা ছিঁড়ে দিয়েছিলেন। এই ঘটনাটি শুটিং-এর দিনে তার বাড়িতেই হয়েছিল। কথা কাটাকাটির জেরে স্বামীর জামা ছিঁড়ে চলে এসেছিলেন সোজা শুটিংয়ে।
 
সুচিত্রা সেনের সিনেমায় নামা কিন্তু তার নিজের ইচ্ছায় নয়। স্বামী দিবানাথই জোর করেছিলেন সুচিত্রা যাতে অভিনয় করে। সিনেমার জন্য প্রথম টেস্ট দিতে গিয়ে ডাহা ফেল করেছিলেন সকলের মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। অবশ্য তখনও তিনি রমা সেন। ততদিনে জেদ চেপে বসেছে। অভিনেত্রী হবেনই। পরে অবশ্য স্ক্রিনটেস্টে উতরে গিয়েছিলেন। শুরু হয় তার চলচ্চিত্র জীবন।
১৯৭৮ সাল থেকে সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্রজগতকে বিদায় জানিয়ে নির্জনে বসবাস শুরু করেন এবং রামকৃষ্ণ মিশনের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা বজায় রাখেন। সুচিত্রা সেনকে শেষ জনসম্মুখে দেখা গিয়েছিল উত্তম কুমারের মৃত্যুর পর তার শবযাত্রায়। এর পর আর কখনও তাকে দেখা যায়নি। তিনি কখনও কোনো জনসমাগমে অংশ নেননি। জনসম্মুখে আসতে হবে বলে ২০০৫ সালে ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘দাদা সাহেব ফালকে’ পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। ২০১২ সালে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ সরকার, রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মাননা বঙ্গ বিভূষণে ভূষিত করে সুচিত্রা সেনকে।
 
তিনি নায়িকা ছিলেন এবং নায়িকা চরিত্রেই অভিনয় করেছেন। পার্শ্ব-চরিত্রে তাকে কখনও দেখা যায়নি। তার তরুণীমূর্তিই দর্শকস্মৃতিতে অম্লান। গত বছর ১৭ জানুয়ারি মৃত্যুর অন্ধকার জগতে চিরতরে প্রস্থান করলেও মহানায়িকা সুচিত্রা সেন দর্শকদের মনে চিরসবুজ, চিরতরুণ, রোমান্টিক নায়িকারূপে বেঁচে থাকবেন চিরকাল।


লেখক : নিবন্ধকার


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ জুলাই ২০১৫/তাপস রায়

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়